ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো মৌসুম এলেই ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। কিন্তু, সেই দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব হয় সূর্যের আলো নির্ভর সেচ প্রযুক্তি ব্যবহারে। ডিজেল কিংবা বিদ্যুৎ নয়, সূর্যের আলোর ব্যবহারে ভূগর্ভের পানি উঠিয়ে সেচকাজ চালানো হয়। কিন্তু এই প্রযুক্তি বেশ ব্যয়সাধ্য। কৃষকের একার পক্ষে এই প্রযুক্তি নেয়া জটিল। ২০১৬ সালে জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত হন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের কৃষক সলেমান আলী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কৃষকদের জন্য কাজ কর, তাহলে আবারো পুরস্কৃত হবা।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাটি কাজে লাগানোর জন্য সৌরবিদ্যুৎ-নির্ভর সেচযন্ত্রকে কৃষকবান্ধব করতে কাজ করছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষক সলেমান আলী। ২০১৫ সালে শুরু করা প্রচেষ্টা অবশেষে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। তৈরি করেছেন সৌরবিদ্যুৎ-নির্ভর ভ্রাম্যমাণ সেচযন্ত্র। তার এই যন্ত্রের নির্মাণ ব্যয় কম হওয়ায় দাম কৃষকের সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে। বহনযোগ্য বলে বিভিন্ন স্থানে, খেতে নিয়ে সেচ দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন উদ্ভাবক কৃষক সলেমান। স্বল্প খরচে কৃষকদের জন্য কিছু করা যায় কিনা সেই চিন্তা থেকেই তিনি ভ্রাম্যমাণ সৌর সেচযন্ত্র তৈরি করছেন। প্রথমদিকে ইনস্ট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই বা আইপিএস তৈরি করে বিক্রি করতেন সলেমান। দেশে সৌর সেচযন্ত্র চালু হওয়ার পর এই প্রযুক্তি আরও সহজলভ্য করতে কাজ শুরু করেন তিনি। আগের অভিজ্ঞতা বেশ কাজে লাগে তার। বাজারে থাকা সৌর সেচযন্ত্রে একের পর এক সৌর প্যানেল, কন্ট্রোলারসহ নানা যন্ত্রপাতি লাগিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে লাগলেন সলেমান। দ্রুতগতিতে পানি তুলতে পাম্পে যোগ করলেন গিয়ার বক্স। সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৌর প্যানেলটি সহজে নড়াচড়ার ব্যবস্থাও করলেন। পরে সৌর প্যানেলের অবকাঠামোতে চাকা লাগিয়ে তা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহনের উপযোগী করে তুললেন এই ভ্রাম্যমাণ বা মুভিং সৌর সেচযন্ত্রের মাধ্যমে। একটা সময়ে তার খুব অভাব ছিল। এক বেলা খেলে আরেক বেলার খাবার নিয়ে চিন্তায় থাকতে হতো। তাই সংসারের তাগিদে সাইকেল মেকানিকের কাজ শুরু করেন তিনি। তবুও সংসার চালাতে পারছিলেন না। জমি জায়গা না থাকায় সব সময় বিকল্প পেশা খুঁজতেন। দেশ স্বাধীনের পর কৃষক যখন জমিতে ফসল উৎপাদনের জন্য জাপানি শ্যালোমেশিন ব্যবহার করা শুরু করলো। তখন মনে হলো একটা শ্যালোমেশিন যদি ক্রয় করা যায় তাহলে ওই মেশিনের পানি বিক্রি করে সংসার ভালই চলবে। অর্থের অভাবে সেই শ্যালো মেশিনও কেনা হয়নি। তারপরও তিনি দমে পড়েননি। চালিয়ে গেছেন তার চেষ্টা। অবশেষে এই প্রচেষ্টায় তিনি দেখেছেন সফলতার মুখ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:০১