শায়লা। ভালবাসার শায়লা।দারুন মায়াবতী গুণবতী মিষ্টি একটা মেয়ে।বলতে গেলে এরকম মেয়ে পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।সব কথার পিছনে যুক্তি থাকা চাই। এরকম একটি কম্প্লিমেন্টের পিছনে শক্তিশালী যুক্তি হলো অর্ক নিজে।অর্কের মত গাধা্ টাইপ একটা ছেলেকে প্রতিদিনের হাজারটা গাধামো সহ্য করে ভালবেসে যাওয়া আর কোন মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু শায়লা অবলীলায় তা করে যাচ্ছে।অর্কের গাধামো সীমা ছাড়িয়ে গেলেও শায়লা ঠিকই তাকে প্রশ্রয় দেয়।অর্কের দোষের কথা বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে অনেক অপদার্থ মানুষ আছে যাদের চেহারা সুন্দর। অর্কের সেটিও নেই। কুৎসিৎ চেহারা নিয়ে অনেক অনেক গাধামো নিয়েও শায়লার মত অসম্ভব রূপবতী একটা মেয়ের আনুকূল্য পাওয়া কোন যুক্তিতেই খাটেনা।মানুষের রুচীবোধ থাকা উচিৎ।অর্কের সেদিকটায়ও ঘাটতি। একদিন সে শায়লাকে নিয়ে গেল একটা ফুসকাস্টলে খোলা আকাশের নীচে ।এত বাজে ফুসকা শায়লা জীবনেও খায়নি।ফুসকাগুলো কেমন মেদা।সেগুলোর কয়েকটিতে আবার বালুর সুস্পষ্ট উপস্থিতি।দাতের নিচে পরে সেগুলো থেকে কিচকিচ শব্দ হচ্ছে।সেগুলো খেয়ে পেট খারাপ হওয়ার একটা সমূহ সম্ভাবনা হিসেবে পেটে বুদবুদের উপস্থিতি দেখা দিলো। খাওয়া শেষ করার পর অর্ক গাধাটা শায়লাকে জিজ্ঞাসা করে ফুসকা কেমন লাগলো। অন্য কোন মেয়ে হলে নির্ঘাত গালে কষে একট চড় বসিয়ে ওখান থেকে বিদায় নিতো । অর্কের ছায়াও সে মারাতো না কোনদিন। খাওয়া শেষে যথারীতি ফুসকার টাকাটাও শায়লার কাছ থেকে গেল। শায়লাকে যেখানে সবাই ভালবাসে সেখানে অর্ককে করে অবহেলা।বিশাল একটা ভূড়ি দিয়ে আর যাই হোক সুখ্যাতি মিলার কথা নয়। তারপরও শায়লার সহানুভূতি গাধাটাকে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র শায়লার বদান্যতায়। শায়লার প্রচন্ড ব্যস্ত জীবনে অর্ক একটা বিরক্তি ছাড়া কিছুই নয়। যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করা তার অভ্যাস। শায়লা সব কিছু সহ্য করে। আর একটা ব্যাপার না বললেই নয়। আর সেটি হলো লিখতে গেলে বানান ভুল করা।এমন কী শায়লার নামের বানানেও ভুল করে বসে থাকে অর্ক। এই ভ্যালেন্টাইনস দিবসেও শায়লার নাম লিখতে ভুল করে ভালবাসার পত্র দিয়েছে। ল বর্ণের পরিবর্তে অন্য বর্ণ ব্যবহার করেছে। তারপরও শায়লা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। ভালবাসা দিবসে ভালবাসা না জুটলেও অন্তত ক্ষমাতো জুটেছে সেই বা কম কিসের ।এরকম ভূড়ি ভূড়ি অভিযোগ শায়লা দাড় করাতে পারে। কিন্তু করে না।
অবস্থার পরিবর্তন হয় ।শায়লার কাছের মানুষরা অবশ্য অর্কের ব্যাপারে কানভারী করতে ছাড়ে না।তারা নিয়মিত অর্কের ব্যাপারে শায়লাকে নিরুৎসাহিত করতে থাকে।তার নামে নানা অভিযোগ জানাতে থাকে। এত অভিযোগের ব্যাপারগুলো সে শুধু অর্ককে বলে। অর্ক অবশ্য সাধ্যমত শায়লার মনের মত হবার চেষ্টা করে।সেটি আর হয়ে ওঠে না। দুজনের নাকি সব বিষয়ে বিস্তর ব্যবধান। শায়লার পছন্দ ওয়েষ্টার্ন হিরো আর অর্ক হলো পুরোপুরি গ্রাম্য জিরো।শায়লা আধুনিক অর্ক খেত্তি ।এসব অভিযোগের পাশাপাশি যোগ হয় নিত্য নতুন অভিযোগ। সেগুলো অবশ্য শায়লার বাবা মার থেকে শায়লার মস্তিষ্কে ঢুকেছে। সেটি হলো অর্ক কথায় কথায় আল্লাহ খোদার নাম নেয়।সুযোগমত হাদীস ছাড়ে।সেগুলো শায়লাকে আরো বিরক্ত করে তুলে। বিশেষ করে শায়লার মায়ের কথানুযায়ী হুজুররা মিথ্যে বলে আর হাদীস নাকী সব জাল বানোয়াট। এ কথার প্রতিউত্তর জানা নেই অর্কের।অর্ক অবাক হয়ে ভাবে ।
একদিন কথা বলার সময় শায়লা অর্ককে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ভাল ছেলেমেয়েরা বাবা মার পছন্দে বিয়ে করে।তাদের কথা শুণে।এটি শুনে অবশ্য অর্কের মাথা ঘুরতে থাকে।সে তার বাবা-মার কথার বিপরীতে তো আর শায়লার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করেনি।এমনকি শায়লা সরাসরি অর্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সে নাকি কঞ্জুস।নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করেনা। আর অপদার্থও বটে। মোদ্দা কথা অর্ক অকর্মন্য।এসব কথা সে কার থেকে পায় সেই ভাল জানে। আর অর্ক অবাক হয়। অর্কের পিছনে শত্রু লেগেছে। একদিন শায়লা অর্ককে জিজ্ঞাসা করে অর্ক দুপুর বেলা কি খাচ্ছে।অর্ক তখন দুপুরে অফিসে বসে বাসা থেকে আনা রুটি খায়।এটি অবশ্য শায়লার কথা ভেবেই ।কারণ শায়লার অভিযোগ অর্কের বিশাল সাইজের ভূড়ি নিয়ে। সেটা কমাতে হবে।তাই ভোজন রসিক অর্ক তার রসনার লাগাম খানি টেনে ধরেছে।সেটা বলা যায় শায়লার প্রতি তার প্রেম। অথচ সেটিকে শায়লা কিপ্টেমী হিসেবে ধরে নিয়েছে। এ দুঃখ কোথায় রাখবে? অর্কের দুঃখের সীমা নেই এটা ভেবে যে সে যত ভালবাসা সুলভ কর্মসূচি নিচ্ছে শায়লা ততই বিরক্ত হচ্ছে । অর্কের আফসোস বাড়ে। শায়লা তার কাছ থেকে ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে । তার প্রতি শায়লার সামান্য অনুভতি করুনা মনে হতে থাকে অর্কের কাছে ।সে মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিতে থাকে । শায়লা তার জন্য নয়। প্রকৃতি নিশ্বয়ই অসুন্দর কিছু হতে দেবে না ।অসুন্দর কিছু না হওয়াটাই ভাল । অর্ক নিজের মনকে অন্য কারো দিকে সরানোর প্রচেষ্টা নিয়েছে। বেশ কয়েকবার ।লাভ হয়নি । এমন অপদার্থকে কে ভাল বাসবে । অর্কের সম্পর্ক ভাঙার একটা বিশেষ যোগ্যতা আছে । চমৎকার একটা সূচনার পর ঠিক সাত দিনের মাথায় যে কোন মেয়ে অর্কের কাছ থেকে সরে যায়। তবে এর পিছনে অর্কের প্রধান যুক্তি হলো শায়লার প্রতি তার প্রেম অত্যন্ত সুকৌশলে তাকে অন্য রমনীর কাছ থেকে সরিয়ে দেয়। যখন হৃদয় সম্প্রদানের চূড়ান্ত ব্যাপারটি ঘটতে যাবে ঠিক সেই সময় অর্ক সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগে। ফলাফল মেয়েটি অন্য কোন ছেলের গলায় ঝুলে পরবে ।অর্ক অবশ্য একটি বিশেষ কারণে কিঞ্চিত খুশি হয় । এই ভেবে যে তার কল্যাণে অনেক ছেলে বিয়ের পাত্রী পেয়ে যাচ্ছে । তবে দুঃখটা বেশি হয় এই ভেবে যে সে শায়লাকে মুক্তি দিতে পারছে না ।পারছে না আপন করে পেতে। নিজেকে মাঝে মাঝে নিচু শ্রেনীর পাপী ভেবে বসে থাকে। শায়লা সব কিছু জানে ।ওসব নিয়ে অর্কর সঙ্গে ঠাট্টা সুলভ আলাপ করতে ছাড়েনি ।তবে গতদিনের ফোনে শায়লার কন্ঠ ছিল কঠিন রকম গম্ভীর ।
তারপরও অর্ক শুনতে থাকে । শায়লা তাকে আজ গুরুত্বপূর্ন কিছু কথা বলবে। আকাশটাতে মেঘ জমেছে। শীতের দিনে বৃষ্টি উপভোগ্য কোন বিষয় নয় অর্কের কাছে । ভোর বেলার শিশির তার পছন্দ । কেমন সবুজ ঘাসের ডগায় বসে থেকে ঝলমল করতে থাকে ।নিরব কোন বার্তা নিয়ে সবুজ ঘাসে তার সহবাস। বৃষ্টি আসবে বোধ হয় । শায়লা আজকে আসবে তো ? অর্ক শুধু ভাবে আজ কিছু একটা হবে ।কিছু একটা হতে চলছে ।অজানা কিছুর আগমনি ধ্বনি তার হৃদয়ে বাজতে থাকে ।