somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সেলিম আনোয়ার
পেশায় ভূতত্ত্ববিদ ।ভালো লাগে কবিতা পড়তে। একসময় ক্রিকেট খেলতে খুব ভালবাসতাম। এখন সময় পেলে কবিতা লিখি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ভালো লাগে খুব। ভালোলাগে রবীন্দ্র সংগীত আর কবিতা । সবচেয়ে ভালো লাগে স্বদেশ আর স্বাধীন ভাবে ভাবতে। মাছ ধরতে

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি , বেঙ্গল বদ্বীপের ভবিষ্যৎ এবং আমাদের করণীয়

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পলিতল এবং নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় প্রক্রিয়ার মিথোস্ক্রিয়ায় বদ্বীপ এবং অন্যান্য ভূমিরূপের সৃষ্টি কিংবা বিনাশ হয় যা ভূমির স্থলভূমি মূখী ক্ষয় অথবা সমুদ্রমুখী বৃদ্ধি নির্ধারণ করে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উঠানামা, জোয়ার ভাটা, নদী প্রবাহ এবং পলি তল, স্রোত, ভূমির অবনমন, উত্থান, নিবিড়তা, টেকটনিক্স এবং জলবায়ু পরিবর্তন হলো সমুদ্র উপকূলীয় প্রক্রিয়া যা সরাসরি উপকূলীয় ভূমি বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। লেট প্লাইস্টোসিন এবং হলোসিন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা রাখে। লেট প্লাইস্টোসিন এবং হলোসিন সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি কার্ভ ডায়াগ্রামের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। ৫০০০ থেকে ৭০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বেড়েছে। এই ৭০০০ বছরে প্রায় ৩৭মিটার পুরু পলি মজুদ জমা হয়েছে। ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ বর্তমান সময়ের তুলনায় ৬মিটার বেশি উঁচুতে ছিল। আর ১৬,০০০ বছর আগে সমুদ্র পৃষ্ঠ ছিল বর্তমানের তুলনায় ১০০ মিটার নিঁচুতে একেবারে সোয়াচ অব নোগ্রাউন্ড এর মুখে। বিগত কয়েকদশক ধরে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার ৪.৮ মিমি/বছর। গত শতকের অধিকাংশ সময়ে সমুদ্রতট রেখা সুষ্থির থাকলেও গত কয়েক দশকে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার দ্রুত বৃদ্ধি এবং পলি তলের অবনমন লক্ষ্য করার মত।




ফারাক্কা বাঁধের পেছনে প্রতিবছর প্রায় ৩২৮ মিলিয়ন টন পলি আটকা পড়ে যায়। ফলে পলি তলে জমা হওয়া পলির পরিমান শতকরা ৩২ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল সময়ে বাংলাদেশ বাধ পূর্ববর্তী পানি প্রবাহের হিসেবে মোট প্রবাহিত পানির শতকরা মাত্র ১২.৫ ভাগ পানি পেয়েছে। এমনকি সেই হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ মোট পানিপ্রবাহের কোন অংশই পায়নি। একই সময়ে পানি চুক্তির হিসেব অনুযায়ী শতকরা ৭৫ ভাগ পানি পায় বাংলাদেশ। তিস্তাবাঁধ, ফারাক্কাবাঁধ এবং টিপাইমুখী বাঁধের কারণে মোট পলির প্রায় ৫০ শতাংশ পলি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে না। ১৭৮০ থেকে ১৯৮০ সাল সময়ে বঙ্গেপসাগরের পূর্বউপকূলে তটরেখা প্রায় ৫০ মাইল এগিয়ে যায়। পোল্ডারগুলো প্রাকৃতিক পলি সঞ্চয় প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং ভূমির উচ্চতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে পরিবাহ জট, জলাবদ্ধতা এবং নদীপ্রবাহ সম্পর্কে ভুল সংকেত সৃষ্টি করে; যশোরের ভবদাহ জলবদ্ধতা এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহারণ। অপরপক্ষে হিরণ পয়েন্ট, চর ছাঙ্গা এবং কক্সবাজার Tidal স্টেশনে প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪.০, ৬.০ এবং ৭.৮মিমি। আর বৈশ্বিক গড় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রতিবছর ১.২±০.৩ মিমি। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ভূমিবৃদ্ধি হয়েছে ১,৩৭,১৬৮ হেক্টর, সর্বমোট ভূমি ক্ষয় ৮৬,৩৬৬ হেক্টর এবং নেট ভূমিবৃদ্ধি ৫০,৮০২ হেক্টর এবং নেট ভূমিবৃদ্ধির হার প্রতিবছরে ১,৮৮২ হেক্টর। বঙ্গেপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রতি বছরে ৫ (হিরন পয়েন্ট) থেকে ২৩ ( কক্সবাজার) মিমি ।


অধিকন্তু টেক্সটাইল, ট্যানারি, পাল্প এবং পেপার শিল্পকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি BOD, COD, কঠিন অধঃক্ষেপ, নাইট্রেট, ক্লোরাইড, ক্রোমিয়াম এবং সালফাইডের পরিমান সামুদ্রিক লোনা পানির আদর্শ মানের তুলনায় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত সরকারের প্রস্তাবিত আন্তনদী সংযোগ ( ৩০ টি সংযোগ, ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল ) প্রতিবছর বাংলাদেশকে ১৭৩-২৩৫ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি বঞ্চিত করবে। অধিকন্তু ভারতের ৫,৮০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে যার মূল্যমান ৫.৬ লক্ষ কোটি রুপী। IPCC এর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক ২১০০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হবে ১৮-৫৯ সে.মি.।ফলে মোট জনসাধারণের শতকরা ১৫ ভাগ এবং মোট ভূমির শতকরা ১৬ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২মিটার বেড়ে যায় তাহলে সমুদ্রতটরেখা সিলেট এবং ময়মনসিংহ এলাকার সীমানা বরাবর উঠে যাবে। পানি অতি উত্তোলনের ফলে ভূমির অবনমন, সংকোচনের (decication) ফলে পলির নিবিড়তা (compaction) বৃদ্ধি, ভূত্বকের প্রতিক্ষিপ্ত হওয়া(Coastal rebound), টিলেজের কারণে মাটির ক্ষয় এবং পোল্ডার এলাকায় পলি সঞ্চয় প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan (BCCSAP) theme-3 তে ৭টি কর্মসূচীর প্রস্তাব করেছে; নতুন বাঁধ তৈরি ও পুরাতন বাঁধ মেরামত করা, পোল্ডার মেরামত করা (̴ ৭০০ কিলোমিটার) এবং বন্যাবাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ, জলপ্রবাহের উন্নয়ন, নদী শাসন ব্যবস্থার পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন। বাংলাদেশ তিনটি ভবিষ্যৎ প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে ১) Bangladesh Delta Plan 2100 ২) Haor Master plan এবং ৩) Ganga Barrage। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ (Bangladesh Delta Plan 2100) থেকে সর্বোচ্চ এবং টেকসই ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য এখানে অবশ্যই ভূতত্ত্ববিদদের জড়িত হওয়া উচিত। কারণ নদী আর ব-দ্বীপ ভূতত্ত্ববিদদের চেয়ে কেউ বেশি জানে না। গঙ্গা বেরেজ পরিকল্পনা ভাল পরিকল্পনা নয়। কারণ এটি লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে মেঘনা নদীর মেহনা অঞ্চলের পানির লবণাক্ততা বাড়িয়ে দিবে, বাঁধের পিছনে পলি সঞ্চয় উপকূল অঞ্চলের পলি সঞ্চয় বিঘ্নিত করবে এবং মেঘনা নদীর মোহনায় ক্ষয় প্রক্রিয়া বৃধ্ধি করবে। বাংলাদেশের উচিৎ নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভূপৃষ্ঠের পানির গুণাবলি সুনিশ্চিৎ করার ব্যবস্থা নেয়া, বাস্তুসংস্থান বিশ্লেষণ করে STD’র লক্ষ্য পূরণে সূচক পরিধারন (মনিটরিং) করা। বাংলাদেশের উচিৎ এমন অভিযোজন নকশা পরিকল্পনা প্রনয়ন যা প্রকিৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য পূর্ণ হবে , পলি সঞ্চয়ের গতি বাড়িয়ে দিবে, গণশিক্ষার উন্নয়ন সুনিশ্চিৎ করবে ,পরিবেশ ইস্যুতে গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন সহায়ক হবে ।বাংলাদেশের ভূতত্ত্ববিদগণ LiDAR ডাটা, মাটি ক্ষয়, নদীতলে পানি জমা এবং ক্ষয়ের হার সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ অধ্যায়ন করতে পারে। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তর প্রাকৃতিক পলি সঞ্চয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা ও উপকূলে পলি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালনা করতে পারে এবং উপকূল এলাকার সম্পদের অনুসন্ধান বাড়াতে এবং নিকট উপকূল এলাকায় অনুসন্ধান কর্মসূচী গ্রহণকরে নীল অর্থনীতি বাস্তবায়নের দ্বার প্রসারিত করতে পারে।
বিঃ দ্রঃ -ছবি ও উৎস লেক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরে সাবেক ভূবিজ্ঞানী ড. খালেকুজ্জামান স্যারের সেমিনার
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৬
১৫টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×