অর্কের দমবন্ধ হয়ে আসছে। তেসো থাকে তফাতেই। অর্ক একা একা বসে মুভি দেখে।বহুদিন ধরে অর্ক কোন হলিউড মুভি দেখছেনা। ব্যাপারটি বিস্ময়কর।বলিউড মুভিও তিনি বছরে একটি দেখে থাকেন সেটিও আমীর খান অভিনীত। তেসোর কল্যাণে বেশ কিছু তামিল তেলেগু মুভি অর্কের দেখা হয়েছে। তার মধ্যে বাহুবলী-১,২ দুটোই দেখেছে। আনুশকা শেঠীর সঙ্গে তার বোধহয় প্রেম হয়ে গেছে। অরে ও রাজা গানে কেমন অর্কের হার্টবিট বেড়ে যায়। মনে হয় আনুশকা অর্ককেই ডাকছে অরে অরে রাজা..।
অর্ক গুণ গুণ করে বলে ও সুন্দরী আযা ।তেসো দেখে ফেলে। বলে লুল কোথাকার। তেসো চ্যানেল ঘুরিয়ে দেয় তার অর্ককে হারাতে দেবে না। অর্ক শুধু তার। আচ্ছা তেসো যদি কবিতা লিখতো কেমন হতো?
তুমি কেবল আমার আমায় ভালোবাসবে
সারাদিন সারারাত আমার কাছে থাকবে।
লক্ষী ছেলের মতো কেবল আমায় আদর করবে
আর কাহাকেও কভু ভুলেও কাছে নাহি ডাকবে।
ওগো মোর প্রিয়তম পৃথিবীতে জন্মেছিলাম
তোমার কাছে এসেছিলাম কাছে এসে তোমার তরে
পৃথিবীর সব সুখ অকাতরে বিলিয়ে দিলাম।
অর্কের আর লিখতে ইচ্ছে করছে না লিখতে ।তেসোর কবিতা অর্ক কেনো লিখবে।অর্ক চেয়ে দেখে উন্মুক্ত খোলা আকাশ। বাংলার রাজপথ। রাজপথে কত মানুষ। জীবিকার তাড়ণায় ছুটছে। কত গাড়ী। কত ধরণের! পথের দুপাশে সারি সারি বাড়ি। প্রাসাদের মত। সেখানেও মানুষ বাস করে। ফুটপাতেও করে। বুড়োমানুষ রিকশা চালায়। অল্প বয়স্ক বালক রিকশা চালায়। ফুটপাতে সবজির দোকান সাজিয়ে বসে থাকে, কয়টা মাছ নিয়ে বসে থাকে, মুরগী নিয়ে বসে থাকে কত মানুষ!রাতের তারার মতই অগণিত। শরীরের রক্ত পানি করে তারা কয়টি টাকা পায়। সে টাকায় তাদের জীবন চলে। তাদের পরিবারের শিক্ষা চিকিৎসা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান সব খরচ চলে। আহারে কত কঠিন জীবন।অথচ রাঘব বোয়ালেরা ইয়াবার ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। শরীয়ত মতে হারাম জিনিসের ব্যবসা করা হারাম। সেই হারাম টাকায় কেনা খাবার বস্ত্র সব হারাম। ব্যাপারটা খুব সহজ আল্লাহর হুকুম আর নবীর তরিকা দুটোর একটি মিস হলে সেটি হারাম। যেমন মরগী খাওয়া জায়েজ আল্লাহর হুকুম আছে। সেটি যদি জবাই না করে ভক্ষণ করা হয় তাহলে খাওয়া হারাম হবে। আবার শুকর খাওয়া আল্লাহর হুকুম নেই বিধায় খাওয়া হারাম। সেটি সুন্নত তরিকায় জবাই করে খেলেও হারাম হবে। আল্লাহর হুকুম আর নবীর তরিকার সমন্বয় হলে শুধু পরিপূর্ণ হালাল হবে । এটা খুব সহজ বিষয় যে কেউ বুঝতে পারবে। মানুষের লেন দেন কেমন হবে বা হওয়া উচিৎ? কমপক্ষে ইনসাফ বা আদলতো হওয়া চাই পারলে একরাম বা এহসান করা উচিৎ। যেমন যেখানে ১০ টাকা ভাড়া দেয়া ন্যায্য সেখানে সেটা দিলে হবে ইনসাফ। আর ২০ টাকা ভাড়া দিলে হবে এহসান। আগে ইনসাফ করা দরকার। অনেক সময় এহসান অপরের উপর বোঝা হয়ে যাবে। সেদিকও খেয়াল রাখা দরকার। কারণ আমি ২০ টাকা দিলাম কিন্তু যার সামর্থ অনেক কম তার কাছে রিকশাওয়ালা আমার উদাহারণ টেনে এনে ১০ টাকার জায়গায় ২০ টাকা দাবী করে বসতে পারে।
অর্ক কেন এসব নিয়ে ভাবছে? খামাখা। অর্ক বুঝে তেসো। অর্ক বুঝে প্রেম অন্য কিছু অর্কের কাজ নয়। তবে যে ইয়াবার ব্যবসা করে সে কোটি কোটি টাকা কামাই করলেও জাতির সমূহ ক্ষতি সাধন করছে। ইয়াবা সেবন করে অর্থ নষ্ট করছে। যৌন আকর্ষণে উন্মাতাল হয়ে ধর্ষণ করছে। ইয়াবার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ছিনতাই অপহরণ নানান অসৎ কিছুতে নিজেকে জড়িয়ে শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসছে। অর্কের আফসোর ইয়াবা বদির কিছু হলোনা। ক্রসফায়ারে কতলোক মারা গেল আর তার মাগফিরত নসীব হয়েছে!!! হজ্জ করেছে লক্ষীছেলের মতো শেখহাছিনার কোলে ওঠে বসে রয়েছে। শেখ হাছিনা বদের হাড্ডি বদিকে কোলে নিয়ে সরিষার তেল মালিশ করে দেয় আর ক্রস ফায়ারে মারে প্রতিপক্ষের লোক। আহা কত মজা। চাপায় তার কত জোর। পেশিতে জোর টাকার জোর। বদিকে কোলে নিয়ে সে ক্রসফায়ার ক্রসফায়ার খেলে। তার কাছে বাংলার মানুষ বেকুব। জোর গলায় বলে দেবে সকল অপকীর্তি বিরুধীদল করে। তার সব সাচ্চা লোক। তারা ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান কারী দল। ভাবটা এমন যে তারা এখন সবকিছুর উর্দ্ধে অনেকটা বদরী সাহাবীদের মতো।
অর্ক হাঁটে।বাস্তবের ধরণীতে তার চোখ রাখে। অপসরার মতো রূপ নিয়ে অনিন্দ রূপসী রিকশায় করে ঘুরে বেড়ায় ।ব্যাপারটি অর্কের কাছে স্বর্গীয় মনে হয়। মেয়েটি হয়তো জানে না সে পৃথিবীর রূপ কতখানি বাড়িয়েছে। সে শুধু নিজে সাজেনি পুরো পৃথীবিটা সাজিয়ে দিয়েছে। তেসো হয়তো জানে না । তেসোর সাজুগুজো মুগ্ধনয়নে চেয়ে দেখে অর্ক। কত সময় চলে যায় যাক তাতে কী? তার ছলাকলা দেখতে দেখতে ভাঙলো কাঁচের আয়না। আসলেই কাঁচের আয়নার দিলটাও বোধহয় তেসোর রূপ দেখে ফেটে যায়। জড় পদার্থ তাই বলতে পারে না। অর্ক তো আর জড় পদার্থ না। তার কলম সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে কবিতা লিখতে থাকে
অপরূপ রূপের আঁধারগো তুমি
যেমতি অপরূপ পূর্ণচন্দ্র পূর্ণিমা রাতির
হতাশার আধারে তুমি জ্বালো আশার প্রদীপ।
তুমি মোর আঁধার ঘরের বাতি। সাজোগো তুমি বধুর বেশে
দেখবো আমি মুগ্ধ চোখে করবো না আর কাজ
ইচ্ছে হলে ভালোবেসে খুলিও তোমার ভাঁজ
ভালোবাসার আরশিতে দেখিবো সখি স্রষ্টার কারুকাজ-
ভালোবাসায় উঠবো মেতে শুধু দু’জনে আজ।
এখন কবিতা লিখার মুডে নেই অর্ক। খালেদা জিয়া জেলে আছেন। তাকে অবৈধভাবে আটকে রেখেছে স্বৈরশাসক। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পায়তারা আরকি? সারা দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশের মানুষ মেরে কেটে গুম করে দুশাসনের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। অর্ক খুঁজতে থাকে কবিতা। কি কবিতা গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটাতে পারে দেশে। দেশকে বাঁচাতে হবে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে জেলের তালা ভেঙে দেশনেত্রী বাংলার মেন্দেলা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ খালেদাজিয়াকে মুক্ত করতে হবে। কোথায় তেমন কবিতা। কোথায় একাত্তরের চেতনা? কোথায় ৯০ এর গণ অভ্যুত্থান? কোথায় নূর হোসেন? কোথায় ডাঃ মিলন? কোথায় বীর মুক্তি সেনা কোথায় থাকে আলোর নাচন কোথায় গেলে প্রলয় নাচন কোথায় আছে কালবৈশাখি কোথায় আছে আলোর দিশারী? এমন সব কোথায়ের মাঝে অর্ক কবিতা ধরতে চায়। কবিতা চুল ছুঁতে চায়। কবিতা অধর স্পর্শ করতে চায়। কোথায় কবিতা ? কোথায় রক্তঝরা গান। কোথায় আজ করিছে বাস অগ্নিতুফান। কোথায় বিষের বাঁশি? বাস করিছে আজ কোথায় জাহান্নামের হাসি । অর্কের কলম ফেটে রক্ত বেড় হয়। কলম বাঙময় হয়ে ওঠে কলম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে
ঐ যে লুটেরা করিলো লুট দেশের মানুষের সকল ভোট
গণতন্ত্র খেকোরা আজ উৎসবে উঠিছে মেতে
দেশের সম্পদ করিছে হরিলুট।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে উতলা ঝড়ের বজ্রপাতে
বাঙলার মানুষ উঠো জেগে প্রবল বেগে হওরে আগুয়ান
জেলের তালা ভাঙতে হবে দেশমাতারে ছিনিয়ে আনতে হবে
গণতন্ত্রের এক বিজয়মঞ্চ গড়ে খুব করে নেচে ওঠো প্রলয়নাচন
ইতিহাস বিকৃত করে টিভি মিডিয়া কবজা করে মিথ্যার বেসাতি করে
গোটা জাতীকে বিভ্রান্ত করে করছে কেবল দেশের ক্ষতি দশের ক্ষতি
বৈষম্যের মন্ত্র জপে ওরা বিভেদ দিলো আঁকি বাংলামায়ের ললাটে
—ঘরে বসে কেমনে থাকি বাংলাদেশের বুকে ওরা করবে কায়েম
নতুন আওয়ামীস্তান। স্বৈরাচারের কালোহাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে
দাও বহিয়ে দাও অগ্নিপ্রপাত; দিয়েছিতো রক্ত এবার
—নেবো রক্ত রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়
থাকবোনা আর ঘরে বসে বেরিয়ে এসো
রাজপথে,বীরজনতা আন্দোলনে
বিপ্লবে করো হে !
স্বৈরাচারের মাথানত।
এক দফা এক দাবী স্বৈরাচার কবে যাবি
একদফা একদাবী খালেদা জিয়ার মুক্তি দিবি
খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে
স্বৈরাচারের দোসরেরা মরবি জ্বলে দাবানলে................
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭