somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ঝরে পরা দুই ফুলের প্রতি শ্রদ্ধা" - উৎসর্গঃ তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর

১৩ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল ধীমান চলচিত্রকার। ২০১১ সালের ঠিক এই দিনে কোন এক সময় শুনেছিলাম তাঁর সড়ক দুর্ঘটনার খবর। সাথে ছিলেন আরেক বিরল প্রতিভা শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর বড় ছেলে মিশুক মুনীর।



খবরটা শোনার পরে ঐ মুহুর্তের ভাবনাটা ছিল অনেকটা এরকম –
এটা কিভাবে সম্ভব হল? এপার বাংলার সত্যজিৎ এত অল্পকিছু চমক দেখিয়ে চলে যেতে পারলো কেমনে? নাহ, এরকম তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি যে এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আশায়, নতুন কিছু দেখার আশায় বসে ছিলাম। তারেক মাসুদ তাঁর স্বপ্নের চলচিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ৪৭’র দেশভাগ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি করছিলেন “কাগজের ফুল”। ভেবেছিলাম আবার বন্ধুরা মিলে সেদিনের মত হুমড়ি খেয়ে ছুটবো সিনেমা হলে। কিন্তু নাহ, সে ফুল আর সৌরভ বিলোতে পারলো কই। মনটা ভারি হয়ে গিয়েছিল সেদিন। চোখটাও মনে হয় একটু ঝাপসা হয়ে উঠেছিল কিছুক্ষণের জন্য। আমি সত্যিই অনেক দুর্বল মনের মানুষ।

তবে আজ এক বছর পরে ঐ অনুভূতি কিছুটা ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এখনকার ভাবনাটা এরকম –
এক বছর আগে এক বাস ড্রাইভার এক তারেক মাসুদ, এক মিশুক মুনীর’কে চাপা দিয়ে গেল। নিভিয়ে দিল বাংলাদেশ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির শেষ সোনালী আভাটুকু। আর আমরা বাঙালী গালে হাত দিয়ে স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি ডিজিটাল বাংলাদেশের!! সাবাশ বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়!

তারেক মাসুদ আরো কিছুদিন আমাদের সাথে থাকলে বাংলাদেশ হয়তো অস্কারে দেশ ভরিয়ে ফেলতো না, হয়তো পেতনা বিরল সম্মাননা আর কাড়ি কাড়ি টাকা। তবে এই দেশ নিশ্চয় কিছু উদ্যমী তরুণ যুবক পেত, কিছু ভালো দর্শক পেত, আর পেত অনেক ভালো লাগার কিছু ছবি।



কিছু মানুষ থাকেন যাদের মুক্ত চিন্তা, নিঁখুত রাজনীতি সচেতনতা এবং নির্মল টলটলে দৃষ্টিভঙ্গী ও জীবনবোধ আমার বা আমাদের মতো ছাপোষা মানুষদের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে এবং মননকে বিশেষভাবে আলোড়িত করে। আমার কাছে তারেক মাসুদ তেমন একজন ব্যক্তিত্ব। মানুষটিকে চিনেছি ‘মাটির ময়না’ দিয়ে এবং এরপর ‘মুক্তির গান’ দেখার মাধ্যমে। আর কিছু টেলিভিশন ইন্টারভিউ, পত্রিকার প্রবন্ধ এবং সাক্ষাৎকার ধরণের লেখার মাধ্যমে। কি নম্র ভব্য তাঁর বাচন এবং প্রকাশভঙ্গী। বাংলাদেশে এমন মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা বর্তমান সময়ে হাতে গোনা এবং খুবই বিরল।

আজকের এই দিনে আকুন্ঠ শ্রদ্ধা রইলো সেই গুণী মানুষ দুইটির প্রতি। আজ হয়তো তাঁরা আর সশরীরে বেঁচে নেই। তবে তাঁরা অন্যভাবে বেঁচে আছেন, তাঁরা বেঁচে থাকবেন তাঁদের সৃষ্টির মাঝে, চলচ্চিত্রের মাঝে আর দেশের কোটি মানুষের ভালো লাগায়।



নিম্নে তারেক মাসুদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কর্মজীবন অবলম্বনে কিছু স্মৃতিচারণা ও তাঁর সৃষ্ট কিছু চলচিত্রের কাহিনী বিশ্লেষণ দেওয়া হল -

একনজরে তারেক মাসুদঃ

পুরো নামঃ আবু তারেক মাসুদ
জন্মঃ ১৯৫৭ সালের ৬ ডিসেম্বর
জন্মস্থানঃ ফরিদপুরের ভাঙ্গায় নূরপুর গ্রাম
মায়ের নামঃ নুরুন নাহার মাসুদ
বাবার নামঃ মশিউর রহমান মাসুদ
বাবার পেশাঃ শিক্ষকতা
ভাইবোনঃ ৫ ভাই ২ বোন
শিক্ষাজীবনঃ ভাঙ্গা ঈদগাঁ মাদ্রাসায় প্রথম পড়াশোনা। এরপর ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে প্রাইভেট পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ছয় মাস পড়াশোনার পর বদলি হয়ে নটরডেম কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন
পেশাঃ চলচ্চিত্র নির্মাণ
উপাধিঃ বিকল্পধারার চলচ্চিত্রনির্মাতা
তারেক মাসুদের বিয়েঃ ১৯৮৯ সালে
স্ত্রীর নামঃ ক্যাথেরিন মাসুদ
সন্তানঃ বিংহাম পুটার মাসুদ নিষাদ
মৃত্যুঃ ১৩ আগস্ট ২০১১

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ
আদম সুরত (১৯৮৫), সোনার বেড়ি (১৯৮৯), মুক্তির গান (১৯৯৫), মুক্তির কথা (১৯৯৬), মাটির ময়না (২০০২), অন্তর্যাত্রা (২০০৬), নরসুন্দর (২০০৯) ও রানওয়ে (২০১০)।

এছাড়াও আছে –
আ কাইন্ড অফ চাইল্ডহুড (২০০২) - ঢাকার কর্মজীবী শিশুদের জীবন সংগ্রামের উপর ডকুমেন্টারি।
নারীর কথা (২০০০) - যুদ্ধে বেঁচে থাকা নারীদের অভিজ্ঞতার উপর ডকুমেন্টারি।
ইন দ্য নেইম অফ সেফ্‌টি (১৯৯৮) - বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের উপর ডকুমেন্টারি।
ভয়েসেস অফ চিলড্রেন (১৯৯৭) - বাংলাদেশের কর্মজীবী শিশুদের উপর প্রামাণ্যচিত্র।
ইউনিসন (১৯৯৪) - মানবজাতির ঐক্যের উপর এনিমেশন চলচ্চিত্র।
সে (১৯৯৩) - একটি নারী ও পুরুষের বেদনাদায়ক পুণর্মিলন।

উল্লেখযোগ্য অর্জনঃ
‘মুক্তির গান’ নির্মাণের জন্য ফিল্ম সাউথ এশিয়ার বিশেষ সম্মাননা (১৯৯৭), ‘মাটির ময়না’ নির্মাণের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব আন্তর্জাতিক সমালোচক পুরস্কার (২০০২), কান চলচ্চিত্র উৎসব ডিরেক্টর ফর ফোর্টনাইট পুরস্কার (২০০২), এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০০২), মন্ট্রিয়েল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০০২), আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব অব মারাকেশ, বেস্ট স্ক্রিনপ্লে (২০০২), কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০০৩), পাম স্প্রিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (২০০৩), নিউ ডিরেক্টর/নিউ চলচ্চিত্র উৎসব (২০০৩), কারা চলচ্চিত্র উৎসব বেস্ট ফিল্ম (২০০৩)।

মরণোত্তর সম্মাননাঃ একুশে পদক - ২০১২।

তারেক মাসুদ নির্মিত কিছু চলচিত্রের কাহিনী সংক্ষেপ -

রানওয়েঃ



গ্রামে নায়ক রুহুল মাদ্রাসায় পড়ত। রুহুলের বাপ এখন আরব দেশে। রুহুলের বাবা নিজের আশা নিয়ে অসহায় দিন যাপন করতে থাকে। পরিবার ঢাকায়। বোন ফাতেমা গার্মেন্টসে চাকুরি করে। পোশাক কারখানায় বোন শোষণের শিকার। গন্ডগোলের কারণে দুই মাস বেতন পায় না। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সংলগ্ন একচালা ঘরে রুহুল ও তার পরিবার বসবাস করে। তার মা রহিমা ক্ষুদ্র ঋণ সমিতির মাধ্যমে একটি গাভী কিনে দুধ বিক্রি করে সংসার চালায়। রুহুলের বোন ফাতেমা পোশাক রপ্তানি কারখানায় কাজ করে। এক মাস হলো তার বাবা মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির সন্ধানে গিয়ে নিরুদ্দেশ। বেকার, কিছুটা হতাশ অথচ আদর্শবাদী রুহুল চাকরি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং উড়োজাহাজের ছায়ায় দিন কাটায়। মাঝেমধ্যে সে মামাকে সাইবার ক্যাফের ব্যবসায় সাহায্য করে এবং ইন্টারনেট শেখার চেষ্টা করে। সেখানে দৃঢ় অথচ শান্ত মেজাজের কম্পিউটার দক্ষ আরিফের সঙ্গে তার ক্রমশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আরিফ উগ্র ধর্মীয় রাজনীতির মধ্যে জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে রুহুলকে উদ্বুদ্ধ করে। আফগানিস্তান-ফেরত মুজাহিদ দলনেতার জঙ্গি শিবিরে শরিক হয় সে। নতুন আদর্শে উজ্জীবিত রুহুল বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অবশেষে জীবনের গভীরতর অভিজ্ঞতা উপলব্ধির দিকে এগিয়ে যায়।
ডাউনলোড লিংকঃ রানওয়ে - টরেন্ট লিংক

মুক্তির গানঃ



মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা লিয়ার লেভিন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধের উপর একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের অভিপ্রায়ে এদেশের একদল সাংস্কৃতিক কর্মীর সঙ্গ নেন। 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা' নামের দলের এই সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা ও শরনার্থীদের দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী গান শুনিয়ে উজ্জীবিত করতেন। এই শিল্পীদের সাথে থেকে লেভিন প্রায় ২০ ঘণ্টার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। যুদ্ধের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরি করতে পারেননি। দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে লেভিনের কাছ থেকে এই ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তারা আরো বিভিন্ন উৎস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নানা সংরক্ষিত উপাদান সংগ্রহ করেন, বিশ বছর আগের সেই শিল্পীদের সাথে যোগাযোগ করেন। লেভিনের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফুটেজের সাথে সংগৃহীত অন্যান্য উপাদান যোগ করে ছবিটি নির্মিত হয়।
ডাউনলোড লিংকঃ মুক্তির গান

মাটির ময়নাঃ



অনেক অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যখন দেখেছিলাম দেশের জন্য এত সুনাম এবং সম্মান বয়ে আনা এই ছবিটা স্বদেশেই নিষিদ্ধ হয়ে আছে, এর গল্পে তথাকথিত স্পর্শকাতর বিষয়বস্তু থাকার অপরাধে!! যা হোক ফিরে আসি ছবিটির মূল কাহিনীতে -
ষাটের দশকের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপট হতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের সময়ের একটি পরিবার কিভাবে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গল্প নিয়ে তৈরি এ চলচ্চিত্র। পরিচালকের নিজের ছোটবেলার কাহিনীর জীবনের উপর ভিত্তি করে এ ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে। অত্যন্ত ধার্মিক বাবা কাজী সাহেব তাঁর ছোট্ট ছেলে আনুকে পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আনুর মাদ্রাসাতেও চরম ও মধ্যপন্থী মতবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে। বিভক্তির এই একই চিত্র দেখা যায় গোঁড়া ধার্মিক কাজী ও তাঁর স্বাধীনচেতা স্ত্রী আয়েশার মধ্যে । ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ইসলামের দুর্বোধ্যতা এ সব কিছু মিলিয়ে মাটির ময়না জাগতিক দ্বন্দ্বের একটি দৃশ্যমান প্রতিকৃতি।
ডাউনলোড লিংকঃ মাটির ময়না

অন্তর্যাত্রাঃ



তারেক মাসুদ ও ক্যাথেরিন মাসুদের অন্তর্যাত্রা আত্মিক সংকটের ভেতর দিয়ে আত্মআবিস্কার ও নিজের কাছে ফেরার ছবি। ছবিটি শুরু হয় লন্ডন প্রবাসী শিরিন ও তার ছেলে সোহেলের আকস্মিকভাবে দেশে ফেরার ঘটনা দিয়ে। প্রাক্তন স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শিরিন ও তার পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনে। পনের বছর পর দেশে ফিরে শিরিন তার স্মৃতির শহরকে খোঁজে। পুরানো বান্ধবী ও অন্যান্য মানুষজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, সম্পর্কের জটিল ও খানিকটা বিব্রতকর পরিবেশে স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, সন্তানের সঙ্গে গভীর বোঝাপড়া এসবের মধ্য দিয়ে শিরিনের ভেতরের সঙ্কটগুলো স্পষ্ট হয়। অন্যদিকে, সোহেল-- লন্ডনের মিশ্র সংস্কৃতিতে যার বেড়ে ওঠা, মাতৃভূমির কোনো স্মৃতিই যার নেই, দেশে ফিরলে কল্পনার মাতৃভূমিটি জীবন্ত হয়ে ওঠে তার ভেতর। মৃত বাবাকে মনে হয় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটার চেয়ে বেশি কিছু। স্মৃতিহীন মাতৃভূমি, পিতামহ, মৃত বাবা, নিজের মানুষজন ও তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের ভেতর সে নিজেকে খোঁজে। সে বুঝতে পারে, এখানে এমন কিছু রয়ে গেছে যার জন্য বার বার ফিরে আসতে হবে তাকে। দেশত্যাগ, উদ্বাস্তু দশা আর ঘরে ফেরা’র অনুভূতিকেই সূচারুভাবে এ ছবিতে তুলে এনেছেন তারেক মাসুদ।
ডাউনলোড লিংকঃ অন্তর্যাত্রা - টরেন্ট লিংক

আদম সুরতঃ



তারেক মাসুদ তার পরিচালনা জীবনে প্রথম নির্মাণ করেন ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র আদম সুরত। এই ডকুমেন্টারিটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর। এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয় দীর্ঘ সাত বছর ধরে। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায় প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণে। ‘আদম সুরত’ আলোর মুখ দেখে ১৯৮৯ সালে। অবশ্য এরই মাঝখানে ১৯৮৫ সালে তিনি ‘সোনার বেড়ি’ নামে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। আদম সুরত সম্পর্কে তারেক মাসুদ নিজেই বলেছেন, ‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আদম সুরত নির্মাণে যতটা সময় সুলতানকে কেন্দ্র করে শুটিং করেছিলাম, এর চেয়ে ঢের বেশি শুটিং করেছিলাম বিচিত্র মেলা পার্বণ। শুটিং করেছিলাম চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা, রথযাত্রা, বিশ্বকর্মার নৌকাবাইচসহ বহু বাউল মেলা। মনে মনে স্বপ্ন ছিল, লোকজ উৎসব নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করব। কিন্তু আদম সুরত নির্মাণে প্রাণান্ত অবস্থা হয়ে যাওয়ায় ‘লোকজ উৎসব’ লোকচক্ষুর অন্তরালেই রয়ে গেল। আমার মনে পড়ে, ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি পড়ে আছে...দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে... সুলতানের ভাঙা-পোড়ো বাড়িতে আমরা দলবল নিয়ে পড়ে আছি। সুলতান ভাই একদিন নিয়ে যাচ্ছেন সাঁওতাল পাড়ায় তাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখাতে, আরেক দিন নিয়ে যাচ্ছেন জেলে পাড়ায় সারা রাত কীর্তন শোনাতে।’

নরসুন্দরঃ



পুরোনো ঢাকার গলিপথ এবং একটি সেলুনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য থ্রিলার চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খ্যাতনামা নির্মাতা তারেক মাসুদ বলেন – “এতোদিন ধরে রূপালী পর্দায় যে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আমরা দেখে এসেছি এখানে তার চাইতে খানিকটা ভিন্ন আঙ্গিকে মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের যে অনালোকিত বা ধূসর অংশ সেখানেই আমরা খানিকটা আলো ফেলার চেষ্টা করেছি। খানিকটা থ্রিলার আঙ্গিকে এবং মানবিকতাবোধের জায়গা থেকে এখানে এমন একটি বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে যা যুদ্ধাপরাধের মতো একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়কেও স্পর্শ করে গেছে।”
‘নরসুন্দর’ এর গল্পটি ৭১ এর পটভূমিতে পাক বাহিনীর একটি তল্লাশীর ঘটনা দিয়ে। একজন রাজাকারের সহায়তায় এই তল্লাশী চলার সময় পালিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এক তরুণ। দৌড়ে গিয়ে সে আশ্রয় নেয় এক নরসুন্দরের কাছে। সিদ্ধান্ত নেয় দাড়ি-গোফ কামিয়ে নিজেকে পাক বাহিনীর কাছ থেকে আড়াল করবে সে। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই যখন সে বুঝতে পারে নরসুন্দর নিজেই একজন বিহারী যারা ৭১ এ পাকবাহিনীর দোসর হিসেবেই কাজ করেছিল। এভাবেই ঘটনার গতিময়তা আর অনিশ্চয়তা নিয়ে এগিয়ে যায় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নরসুন্দর’।


উৎসঃ ১) উইকিপিডিয়া - তারেক মাসুদ
২) বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৪৫
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×