somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এসএফকে৫০৫
প্রাক্তন মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট শফিকুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব। । বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার। 'বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরষ্কার' ও 'নজরুল স্বর্ণ পদক' প্রাপ্ত হন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:- 'তবু ও বৃষ্টি আসুক', শ্রাবণ দিনের কাব্য',

"তবুও বৃষ্টি আসুক" প্রসঙ্গে

২১ শে জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"তবুও বৃষ্টি আসুক" প্রসঙ্গে
--মহিবুর রহিম।


কবিতা কবির অর্ন্ততাগিদের ফসল। কবি তার জীবনাভিজ্ঞতায় যে বাস্তবতার মুখোমুখী হন কবিতা এক অর্থে তারই শিল্প সম্মত প্রকাশ। জীবনের কত আকাঙ্খা,অনুভূতি, ব্যর্থতা, হতাশা কবিতায় স্থান করে নেয়। কবি তাঁর মুহুর্তের আবেগ থেকে শিল্পের রঙ ছড়িয়ে কবিতার বিষয়কে মুক্তি দিতে সচেষ্ট হন। একজন সাধারণ মানুষ জীবনের যে সব অনুভূতিকে অনায়াসে ছড়িয়ে দেন কালের গহ্বরে, কবি তাকেই বেঁধে নেন বিশেষ ভাষায়, অক্ষরের ফ্রেমে। এই ভাষা অক্ষরের গভীরেও কবি বুনে দেন শিল্প ও নান্দকিতার আকর্ষণ। তাই কবির বিশেষ মুহুর্তটি হয়ে ওঠে চিরন্তন মানুষের চিরকালের অনুভূতি। শফিকুল ইসলামের "তবুও বৃষ্টি আসুক" কবিতা গ্রন্থটি পড়তে পড়তে কবিতা সম্পর্কে এমনই ধারনা হওয়া স্বাভাবিক।
"তবুও বৃষ্টি আসুক" শফিকুল ইসলামের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ। পূর্বেকার গ্রন্থগুলো হচ্ছে "এই ঘর, এই লোকালয়"; "একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি" এবং "শ্রাবন দিনের কাব্য"। "তবুও বৃষ্টি আসুক" গ্রন্থের কবিতাগুলোই প্রমাণ করে নিজের হৃদয়ে এক আলাদা কবিস্বত্ত্বাকে লালন করেন তিনি। কবির প্রাত্যহিক ব্যক্তিস্বত্ত্বা থেকে পৃথক এই কবিসত্ত্বা চিরন্তন মানবিক মূল্যবোধকে ধারন করে আছে। মোট ৪১ টি কবিতা নিয়ে "তবুও বৃষ্টি আসুক" কাব্য গ্রন্থটি প্রণীত।

এ গ্রন্থের প্রথম কবিতা "বহু দিন পর আজ"। এই কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের মতোই বৃষ্টির আকাঙ্খা করেছেন। দীর্ঘ নিদাঘের পর মানুষের মনে যে বৃষ্টির আকাঙ্খা জমে থাকে তেমনি। কিন্তু কবির আকাঙ্খা এই সাধারণ স্বাভাবিক আকাঙার মধ্যে নিবৃত্ত হয় না। এক তৃষিত অন্তরের মতোই তিনি আকাঙা করেন বিশ্ব জুড়ে নামুক বৃষ্টি, ক্ষুধা দারিদ্র পীড়িত ইথিওপিয়ায়, সুদানে, দুর্ভাগ্য জর্জরিত আফ্রিকায়। এই আকাঙা আরও দীর্ঘ পরিসরে আমাদের বিবেকের মরুভূমিতে বৃষ্টির শুশ্রুষা কামনা করে। এভাবে নিসর্গ থেকে কবির ব্যক্তিসত্ত্বা হয়ে চিরন্তন মূল্যবোধে উত্তীর্ণ হয়েছে এই কবিতা। এখানেই একজন কবির সার্থকতা।
"মানুষের জন্য মানুষের মমতা
ঝর্ণাধারা হয়ে যাক
বৃষ্টির সাথে মিলেমিশে।
সব পিপাসার্ত প্রাণ ছুঁয়ে ছুঁয়ে
বয়ে যাক অনন্ত ধারা জল"।
(বহুদিন পর আজ)
"তবু ও বৃষ্টি আসুক"গ্রন্থের শেষ কবিতা "এই গান এই সুর"। ছোট্ট এই কবিতায় কবি হৃদয়ের নান্দনিকতায় অধিষ্ঠিত যে প্রেম কিংবা যে সত্য কবিকে প্রতি
মুহুর্তে কবি করে তোলে তারই নান্দী রচনা করেছেন। যেমনঃ-
"এই গান এই সুর
এই ফুল এই পাখি
নদী আর নিসর্গ
সবই সুন্দর শুধু তুমি আছো বলে।
এই দুঃখ এই হতাশা
এই বঞ্চনা এই মৃত্যু
আজও সুমধুর শুধু তুমি ভালবাস বলে"।
(এই গান এই সুর)
মানুষের জীবনে যে অনুভূতিতে মহত্তম মানবিক শিল্প বলে বিবেচিত হয়, প্রেম সেই অনুভূতিরই জারক। সেই সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ এক কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও পৃথিবীকে সার্থক করতে সদা সচেষ্ট থেকেছে তার অন্তর্গত ভালবাসার তাগিদে। সৃষ্টির মূলে যেমন এই ভালবাসা, তেমনি শিল্পের প্রেরণাতেও তারই সুর। শফিকুল ইসলাম চমৎকার ভাবেই অন্তর্গূঢ় সত্যকে তার কবিতায় উপজীব্য করেছেন।

প্রথম ও শেষ কবিতার মধ্যে রয়েছে আরও ৩৯ টি কবিতার অনবদ্য এক ভূবন। কখনো প্রেমের বাসনায় রঞ্জিত হয়ে, ব্যর্থতার ধূসরিমায় দ্বিধান্বিত হয়ে কিংবা সর্ব সহিষ্ণু হৃদয়ের আর্তি নিয়ে প্রতীমান এই কবি। তিনি দ্রোহ আর বিপ্লবেরও নান্দী রচনা করেছেন। সব মিলিয়ে সপ্রাণ কবি চেতনায় উদ্বুদ্ধ শফিকুল ইসলাম। "হে জীবন,একদিন তুমি ছিলে" কবিতায় তিনি লিখেছেন -

"হে জীবন, একদিন তুমি ছিলে
স্বপ্ন আর দুরুহ কল্পনার
অভাবনীয় আর অসম্ভবের -
আর আজ
জীবন প্রণোদিত সংগ্রামে
আমরা প্রতি মুহুর্তে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত
ক্লান্ত -
হায় জীবন
তুমি কেন হলে না
ছোট্ট একটি মিষ্টি সঙ্গীতের মতো
ছন্দোবদ্ধ একটি কবিতার মতো"।
(হে জীবন, একদিন তুমি ছিলে)
"একজন বীরযোদ্ধা" কবিতায় শফিকুল ইসলাম একজন সার্থক রণজয়ী যোদ্ধার জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন। যে যোদ্ধা স্বদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন শত্রু সৈন্যদের হাত থেকে। স্বদেশের মাটিতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বিশ্বাসঘাতকদের হাতে। আমাদের অনুভূতিকে উষ্ণ করে তোলে শফিকুল ইসলামের এই কবিতা।

"তবুও বৃষ্টি আসুক" কবিতা গ্রন্থের হৃদয় অধিকার করে আছে আরও বিশেষ একজন। যার আবির্ভাব কবির জীবনে সূর্যোদয়ের মতো আরি তিরোভাব সূর্যাস্তের মতো। যাকে উপল করে কবি হৃদয়ে ফুটে আছে সহস্র ফুল। যার কথা মালায় ছড়িয়ে পড়ে অনেক অনেক পাখি। যার অনুপস্থিতিতে কবি জীবনে নেমে আসে মৃতুহীন মৃত্যু।

শফিকুল ইসলামের "তবুও বৃষ্টি আসুক" কবিতা গ্রন্থে আপাত সরল কাব্য ভাষায় অনেক ঋদ্ধ কবিতার সন্নিবেশ ঘটেছে। বিশেষ করে তার দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাঠককে নিসর্গ শোভিত এক সবুজ অনুভূতির কাছে নিয়ে যায়। বৃষ্টির আকাঙা, প্রকৃতির সান্নিধ্য, ভালবাসার সংরক্তি শফিকুল ইসলামের কবিতাকে দিয়েছে জগৎ ও জীবনের মায়ায় প্রবেশের ছাড়পত্র।

ভালবাসা চিরদিনই অপরাজেয়/ এই ধ্রুব সত্যের সত্যতা রক্ষার জন্য এবং ভালবাসাকে ভালবেসে ফিরে আসুক জগতের সকল সুলতা। এই কামনার ভিতরে সমস্ত হতাশা, দুঃখবোধ, বিষন্নতা কবিকে প্রতি মুহুর্তে তাড়িত করছে। আজীবন নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে তিনি গড়ে তোলেছেন স্বপ্নের এক হিরন্ময় সৌধ। সমস্ত ব্যর্থতাকে প্রাণ দিয়েছেন চিরন্তন ভালবাসার মোড়কে। এই ভালবাসারই অনবদ্য আর্তি "তবুও বৃষ্টি আসুক"।

৫৬ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। চমৎকার প্রচ্ছদ করেছে ধ্রুব এষ। গ্রন্থটির মূল্য ৮০ টাকা। আমরা গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।


কবির কাব্যগ্রন্থ পড়তে ভিজিট করুনঃ--
http://www.bbaria.com



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ১২:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×