somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এসএফকে৫০৫
প্রাক্তন মেট্রোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট শফিকুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উপসচিব। । বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার। 'বাংলাদেশ পরিষদ সাহিত্য পুরষ্কার' ও 'নজরুল স্বর্ণ পদক' প্রাপ্ত হন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:- 'তবু ও বৃষ্টি আসুক', শ্রাবণ দিনের কাব্য',

"একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি"/শফিকুল ইসলাম

০১ লা জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি"
পর্যালোচনায়--অধ্যাপক মান বর্ধন পাল


ভাষিক শিল্পী হিসাবে কবিতা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম শিল্প মাধ্যম । হাজার বছরের ও বেশী সময় ধরে বাংলা ভাষার কাব্য মালঞ্চ বহু বর্ণিলতায় বিকশিত হয়ে চলেছে । এর রূপের রঞ্জন-রশ্মি একালে বিশ্ব সভ্যতার দিগন্তস্পর্শী । জানা অজানা অগনন কবির সাধনায় যুগ যুগ ধরে বাংলা কবিতার কানন ভরে উঠেছে অসংখ্য রঙিনাযুত ফুলে ও কুসুমে। কবি শফিকুল ইসলাম পেশায় বিসিএস ক্যাডারের একজন বড় মাপের কর্মকর্তা হলেও অন্তর্গত চরিত্রে তিনি কবি । তাঁর নিওরনে শিল্পের ,লোহিত কনিকায় কবিতার ঘ্রাণ এবং হৃদয়ে ছন্দের কল্লোলিত ঝংকার। তার শিল্পিত মানসে শৈশব থেকে কাব্য বোধের অঙ্কুরোদগমনের যে জাগরণ তিনি অনুভব করেছেন ,উপলব্দি করেছেন হৃদয়াবেগের তাড়নাকে শৈল্পিক শব্দে আত্মপ্রকাশের তা-ই তাকে ধাবিত করেছে কবিতার কুসুমিত ও কষ্টকাকীর্ণ পথে ।
কবিতা অধরা ,কবিতা ছলনাময়ী,কবিতা মরীচিকা,মায়ামৃগ-প্রতারক বললেও বড় বেশী ভূল হবে বলে মনে হয়না। কারণ কবিতা অনেকেই লিখতে চেষ্টা করেন এমনকি লেখেনও কিন্তু কাব্য লক্ষী স্বপ্নলোকের সম্রাজ্ঞীর মত অস্পর্শিতই থেকে যান । তাইতো জীবনানন্দ বলেছেন ,সকলেই কবি নন ,কেউ কেউ কবি। তবে স্পর্শের অযোগ্য এবং অনাঘ্রাত সেই কাব্যলক্ষ্মী যার মনে দোলা দিয়ে যায় , রবীন্দ্রনাথের ভাষায় 'তার বক্ষে বেদনা অপার'।
হৃদয়-সঞ্জাত এই বেদনাবোধই কবি শফিকুল ইসলামের কবিতার নির্যাস । বেদনার বহুধা অনুভূতি,বহুমাত্রিক বিস্তার ,এর প্রতি শব্দ ও অনেক।দুঃখের অনেক রূপ ,কষ্টের অনেক শেকড় ,বেদনার অনেক বিমূর্ত ও ভাষাহীন আকুতি । কিন্তু দুঃখ কষ্ট ,বেদনা যাই বলিনা কেন সব কিছুর রঙই বোধকরি কালো আর এ সবের পরিনতি বিরহবোধে নিমজ্জন । পৃথিবীর সব কবিরাই মনে হয় "হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসেন" । তাই পূর্বাপর আদিগন্ত বাংলা কাব্যে উৎস থেকে অদ্যাবধি বিরহেরই জয়জয়কার । বিরহবোধ নামক এই শব্দটি প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের ও প্রাণধার । মহাকবি কালিদাস থেকে কবীন্দ্র পরমেশ্বর ,চন্ডিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ,যতীন্দ্রনাথ থেকে সুধীন্দ্রনাথ বেদনা ও বিরহবোধেই আক্রান্ত । কালিদাসের মেঘদূত আছে যক্ষপ্রিয়ার জন্যে বিরহের উত্তুঙ্গ অনুভব । "আমার বধূয়া আন-বাড়ি যায় আমার আঙিনা দিয়া"চন্ডীদাস এভাবেই দুঃখের কাব্যসৌধ বিনির্মাণ করেছেন । অন্তিমে রাবিন্দ্রীক অনুভূতি হলো " আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন" । আর সুধীন্দ্রনাদত্ত তো আরো স্পষ্ট করে বলেছেনঃ "মৃত্যু শুধূ মৃত্যুই ধ্রুব সখা/যাতনা শুধুই যাতনা সূচির সাথী"।
পূর্বজ কবিদের দ্বারা বাহিত মানব জীবনের এসব চিরকালীন ট্র্যাজিক অনুভবের সীমিত অর্থে হলেও উত্তরসাধক কবি শফিকুল ইসলাম । তাঁর কাব্যগ্রন্থ "একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি" (২০০৪) বিবেচনায় এনে কবি চরিত্রের বিষয় আশয় অনুধাবন করার চেষ্টা করবো । মানব জীবনের মহৎ সত্য এবং শিল্প সৌন্দর্যের প্রতি আস্থাবান কবি শফিকুল ইসলাম । মানুষই শিল্পের স্রষ্টা এবং সাধক । তাই জীবন ও জগত ছাড়া শিল্পের আর কোন দ্বিতীয় অবলম্বন নেই। জীবনের সদর্থকতার প্রতি আস্থাশীল বলেই কবি শফিকুল ইসলাম তার আলোচ্য কাব্যরে উৎসর্গ পত্রে লিখেছেনঃ--
"যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি ,কিংবা শিল্প অথবা সাধনা"।
কবি শফিকুল ইসলাম ষাটটি কবিতা দুই মলাটে বন্দি করেছেন ,"একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি" কাব্যগ্রন্থে । সবগুলো কবিতারই মৌলচেতনা প্রেমের বিচিত্রবিধ রূপের প্রকাশ । বাংলা কবিতায় প্রাচীন লীলাভূমি বলে প্রেম চেতনা রূপায়নের প্রধান অনুষঙ্গ নিসর্গ । প্রেম এবং প্রকৃতির মূলাধার সুন্দরের প্রতি মানব মনের চিরকালীন আকর্ষন। কবির ভাষায়ঃ--
"যখন একটি গোলাপ দেখি বাগানে
আপন সৌন্দর্যের মহিমায় ফুটে আছে,
তখন আমি আসলেই তোমাকে দেখি
তুমিই তো রক্তগোলাপ এই হৃদয়ের উদ্যানে"
(কবিতাঃ যখন একটি গোলাপ দেখি)
"যেমন করে বিশাল আকাশ সারাক্ষণ
ঢেকে রাখে এ পৃথিবীকে তার পক্ষপুটে
যেমন করে একটি নদীর দুতীর
স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে বুকের মধ্যে
আগলে রাখে তরঙ্গমালাকে
প্রিয়তমা তেমনি করে
তুমি আমাকে আগলে রাখো
তোমার ভালবাসার ছায়াঅঞ্চলে"
(কবিতাঃ- যেমন করে বিশাল আকাশ)
"তুমি সন্ধ্যাতারা
যখন সমূদ্র অন্ধকারে ডুবে যায় পৃথিবী
তুমি দূর উর্ধ্ব গগনে
অকলংক নিষ্পলক জ্বল জ্বল করে
জ্বলো অনির্বাণ দীপশিখা হয়ে
জেগে থাকো আমার মনের আকাশে"--
(কবিতাঃ তুমি সন্ধ্যাতারা)
এভাবেই মানবীয় প্রেম ও প্রকৃতি শফিকুল ইসলামের "একটি আকাশ ও অনেক বৃষ্টি"কাব্যগ্রন্থ একাকার এবং একাত্ম -অম্বিষ্ট হয়ে আছে । কখনো কখনো প্রকৃতিতে নরত্বারোপ করেছেন তিনি । আকাশ,সমূদ্র,ফুল, মেঘ,বৃষ্টি-এসবের মধ্যে মানবী রূপের চিত্রকল্প বিনির্মান করেছেন । তাঁর প্রেম জীবন্ত থাকলে প্রকৃতি সুষমামন্ডিত হয় আর অনুরাগ আহত হলে প্রকৃতিতে ও পড়ে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া-হারিয়ে যায় রূপের জৌলূস,কলঙ্কিত হয় সুনির্মল সৌন্দর্য,অমানিশায় আক্রান্ত হয় প্রেমের শিল্পিত ভূবন । কবির ভাষায়ঃ--
"তুমি চলে গেলে
আমার ভূবনে নেমে আসে
প্রাগৈতিহাসিক অন্ধকার
নিজেকে আমি আবিষ্কার করি
এক জনশূন্য প্রান্তরে।
তোমার কথা থেমে গেলে
প্রস্তুরীভূত প্রাচীন সভ্যতার
ধ্বংসাবশেষের মত এক অনন্ত নীরবতা
আমার চারিপার্শ্ব গ্রাস করে"
(কবিতাঃ-তুমি চলে গেলে)
সন্দেহ নেই কবি শফিকুলের প্রেম চেতনা একান্ত মানবীয় এবং নিতান্তই জীবন ঘনিষ্ঠ । বাংলা গীতি কবিতা সম্পর্কে একদা আপ্তবাক্য ছিল যে,কানু বিনা গীত নেই,ঠিক তেমনি বাংলা কবিতা সম্পর্কে আরো পরম সত্য হলো. প্রেমের নিটোল প্রকাশ ছাড়া কবিতা নেই । তবে প্রেম সর্বদা সুখের আধার নয় ; প্রেম বেদনাবিধুরতার গভীর মহাসমূদ্র ও বটে। ব্যর্থতায় নিমজ্জনে বিরহের সাত আসমান শূন্যতা ।
শফিকুল ইসলামের "একটি আকাশ অনেক বৃষ্টি" কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাই বিরহ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ।একে আবার সুখের অসুখ বলেও আখ্যায়িত করা যেতে পারে । “তুমি-আমি”এবং "আমি-তুমি" এর অনুভূতি বাংলা কবিতায় চিরন্তন । সেই বৈঞ্চবীয় যুগের রাধাকৃঞ্চ থেকে রোমান্টিক প্রনয়োপাখ্যানের লায়লা-মজনু,শিরি-ফরহাদ, এবং জনপ্রিয় লোকগাথা রহিম-রূপবান থেকে আধুনিককালের জসীমউদ্দিনের সাজু-রূপাই পর্যন্ত এই তুমি-আমি এর মিলনাকাঙ্খার ইতিহাস বিস্তৃত । শফিকুল ইসলামের কবিতা এই ধারাই উত্তরসাধক এবং একুশ শতকী আধূনিক সংষ্করণ । তার কবিতা প্রেমাসম্পদের প্রতি এতখানি নিবেদিত যে আমিত্ব বিলোপে তিনি নিঃশর্ত দ্বিধাহীন । তাই তিনি লেখেনঃ-
"তুমি আমার সমৃদ্ধ অতীত
চলমান বর্তমান
সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ
তোমাকে বাদ দিলে আমার থাকে কি ?
তোমার চোখে চোখ রেখে
আমি আমার বিশ্ব পৃথিবী দেখি
তোমার ভালবাসা আমার প্রেরণা
তুমিই আমার স্মৃতি
রাতের স্বপন,দিবসের কল্পনা
তোমাকে বাদ দিলে আমার থাকে কি ?
স্মৃতি বলে আর কিছু থাকে কি?
তোমাকে বাদ দিলে
আমি স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষ হয়ে যাই"
(কবিতাঃ- তুমি আমার সমৃদ্ধ অতীত)
আমিত্ব বিলোপের মাধ্যমে প্রেমাস্পদের কাছে "মন-প্রাণ-দেহ" আপাদশির নিবেদন করেও শেষ পর্যন্ত শফিকুল ইসলামের কবি-স্বভাব বিরহ চেতনার মহাসাগরেই সমর্পিত ।

কাব্যগ্রন্থটি পড়তে ভিজিট করুনঃ--
http://www.bbaria.com
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×