2017 সালে আম্রেরিকা সহ পশ্চিমা বিশ্ব নতুন করে ফ্রন্ট লাইনে আসতে চাইবে। সেক্ষেত্রে তাদের পুরাতন গেম নতুন করে ডেভেলপড করবে । তার জন্য সবচেয়ে ভালো ভার্সন হলো ফিলিস্তিন-ইসরাইল ইস্যু। মার্কিন সিনেট ও এম্রেরিকান গেম মেকারেরা সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে আম্রেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব মধ্যপ্রাচ্যে তাদের শক্তি কিছুটা খর্ব করেছে। তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি ইয়ামেনের হুতিদের উপর আকাশ থেকে বোমা ফেলতে ফেলতে ক্লান্ত। তুরস্ক লেজের উল্টোপিঠ দেখিয়েছে। ইসরাইলের দীর্ঘ দিনের শত্রু রাষ্ট্র ইরান এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। সিরিয়াতে বাশার একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ নিয়ে রাশিয়ার কেজিবীর প্রতি তাকিয়ে আছে। লেবানবি হিজবুল্লাহ তার রকেটের উন্নত ভার্সণ আনার চেষ্টা করছে। লিবিয়ায় নিজে ক্ষত বিক্ষত সেখানে আমেরিকান অনুগত সরকার নিজেকে স্টান্ডবাজি হিসেবে দাড় করাতে পারবে না। সেক্ষত্রে আমেরিকার একমাত্র ভরসা মিশর। কিন্তু মিশরের কি সেই ক্ষমতা আছে! তার অবস্থা বাংলাদেশের জামায়াতের মত। না পারে ছাড়তে না পারে ধরতে। কারণ মিশরের প্রসিডেন্ট নিজেই সৌদি ও আম্রেরিকান গুটির চালে জনগণের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গদি দখল করে বসে আছে। সে যদি আমেরিকা বা ইসরাইলের হয়ে কিছু করতে যায় তাহলে নিজ দেশের জনগণের বাধার সম্মুখীন হবে। আর জানেন তো, জনগণের মাইর বড় মাইর। এবার আসি মূল আলোচনায়-
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে কড়া প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিভিন্ন দিক থেকে তীব্র চাপ সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো ভেটো দিতে সম্মত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকায় ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি ১৪-০ ভোটে পাস হয়।
এ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতি এখন সরাগরম। ইসরাইলের মাথা গরম। কারণ প্রস্তাবে বলা আছে, “এই বসতি স্থাপনের ‘কোনো আইনি বৈধতা নেই। এটি আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের শামিল।”
এই চুক্তি উপর ভিত্তি করে ইসরাইল কতটা ক্ষেপেছে তা খেপেছে, তা প্রমাণ যোগ্য, এই জন্য জাতিসংঘের চারটি অঙ্গ সংস্থা, যারা ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করে থাকে, তাদের কাছে দেয় চাঁদা বন্ধের কথা ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক আদ্যোপান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে, সে কথাও তিনি জানিয়েছে। এদিকে যে ১৪টি দেশ প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়, তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হয় বাতিল বা তা পুনর্বিবেচনার কথা তিনি ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এদিকে অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে নতুন করে প্রায় ৫০০ বসতি স্থাপনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য অনুষ্ঠেয় ভোট স্থগিত করে দিয়েছে ইসরায়েলের এই সংক্রান্ত কমিটি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভেটো না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ওবামা প্রসাশন বলেছে, অধিকৃত এলাকায় অব্যাহত ইসরায়েলি বসতির ফলে এই সীমানার ভেতর দুই রাষ্ট্রবিষয়ক জাতিসংঘ প্রস্তাব অকেজো হয়ে পড়ছে। সে কারণে ওবামা প্রশাসন অবৈধ বসতি স্থাপনা বন্ধের দাবি বারবার জানিয়ে এসেছে, কিন্তু ইসরায়েলি সরকার সে কথায় গুরুত্ব দেয়নি।
কিন্তু এ প্রস্তাব পাস হওয়ায় ভবিষ্যত মার্কিন মুল্লুকের প্রসিডেন্ট ট্রাম্প সেটিকে ভালোভাবে নেয়নি। তাই সেই, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত ইসরায়েলকে ‘শক্ত থাকতে’ বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান’ করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রতিক্রিয়া ছিল, এ প্রস্তাবনা ‘ইসরাইলিনীতির প্রতি বিশাল আঘাত। এটি বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরঙ্কুশ অবস্থান এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সবার সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ।’ ফিলিস্তিনের প্রধান আলোচক সায়েব এরেকাত বলেছেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়ের দিন। সভ্য ভাষা ও কূটনীতির জয়। ইসরাইলের চরমপন্থি গোষ্ঠীর পূর্ণ প্রত্যাখ্যান।’
তবে, আপাতত দৃষ্টিতে এটি ফিলিস্তিনের জন্য সু-খবর হলেও জাতিসংঙ্ঘের এই ফতোয়ায় কোন কার্যকারিতা নেই। কারণ জাতি সংঘ হলো আমাদের দেশে মুফতি-মাওলানার মত, তারা ফতোয়া দিতে পারে কিন্তু কার্যকর করার কোন এডমিনিষ্ট্রি পাওয়ার তাদের নেই, আর ইসরাইল হলে ত’ কথাই নেই।
সর্বশেষ, ১৯৭৯ সালে সর্বশেষ এ ধরনের একটি প্রস্তাব পাস করে নিরাপত্তা পরিষদ। সেটিই কার্যকারিতাও ছিল না। আর, নতুন এই প্রস্তাবনায় বাস্তবে পরিবর্তনের আসার সম্ভাবনা কম। কারণ, এটির কোনো ধারাই বাধ্যতামূলক নয়। সামনের ট্রাম্প প্রশাসনও এটি অগ্রাহ্য করে যাবে।
আবার একে ঠিক প্রতীকিও বলা যায় না। কারণ, এ প্রস্তাবনায় ফুটে উঠে ইসরাইলের বসতি স্থাপন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একযোগে নিজেদের অমত প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিরা যে কাজ করে যাচ্ছে, তা-ও এ প্রস্তাবনার দরুন শক্তিশালী হবে।
আর, রাশিয়ার পুতিনও এটিকে কেন্দ্র করে কি চাল দেন সেটিই এখন দেখবে পুরো বিশ্ব।
যেখান থেকে উপকৃত হয়েছি:
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=46092
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৩