somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল বয়দের ভালোবাসা এবং একটি অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হওয়া!!

১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। কিছুটা বোকা টাইপের ছিলাম বিধায় পরিবারের সবাই একটু আদর বেশি দেখাত। যদিও এই আদর কে আমি মাঝে মাঝে করুণা ভাবতাম। কিন্তু মা-বাবা আমার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা করত। এর অবশ্য কারণ আছে। স্কুলে গিয়ে সামনের বেঞ্চে বসলে বজ্জাত খালাত ভাই জহিরুল আমাকে উঠিয়ে পিছনের বেঞ্চে বসাত। আমি কিছু বলতে পারতাম না। আমি তাকে এক প্রকার ভয় পেতাম। সে আমার বিরুদ্ধে স্কুলে বিভিন্ন কূটকৌশল চালত। খালাত ভাই হিসেবে এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।
এক দিন শিখা নামের এক মেয়ের বই-খাতা গোপনে চুরি করে আমার ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছে। যখন এনিয়ে স্যারদের কাছে বিচার গেল তখন স্যার হাতে বেত ঘুরাতে ঘুরাতে সবার ব্যাগ চেক করতে লাগলেন। আমরা সবাই ক্রাকডাউনের মধ্যে পড়ে গেলাম। এই ক্রাকডাইনের ভিতরেও জহিরুলের মুখে হাসি হাসি ভাব। একে একে সবার ব্যাগ তল্লাশি করা হল কিন্তু বই পাওয়া গেল না, সবার শেষে আমার পালা। ব্যাগের জিপার খুলতেই স্যারের চক্ষু কপালে উঠল। তিনি চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কিন্তু হাতের বেতটা আমার দিকে ঘুরে ঘুরে ফেনা তুলছে। আমার ভয়ে ধম ছাড়া হওয়ার উপক্রম। আমি শুধু একবার শিখার দিকে তাকালাম। তার মুখ কালো হয়ে গেছে। সে এমনটা আশা করেনি। কিন্তু তার ভয় আমার মাইর খাওয়ার জন্য। আমার চোখ বুঝে রইল কিছুক্ষণ বেতের প্রহার সহ্য করার জন্য। ঠাস ঠাস কয়েটি আওয়াজ হল। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে আবিস্কার করি প্রহার আমার পিঠ নয় বেঞ্চের উপর পড়েছে। শিখা হাঁফ ছেড়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। স্কুল ছুটির পর বাড়ি যাচ্ছি। শিখা আমার পাশাপাশি হাঁটছে। আমি লজ্জায় মুখ লুকালাম। কিছুক্ষণ পর শিখা মুখ খুলল;

-সত্যি তুই বই চুরি করেছিস?
- না। বিশ্বাস কর আমি চুরি করিনি।
- তাহলে তোর ব্যাগে বই খাতা গেল কেমনে?
- আমি জানি না।
- বল্লেই কি হলো। বই ত’ ব্যাগের মধ্যে পাওয়া গেছে। চোর হাতে নাতে ধরা পড়েছে।
- ব্যাগে রেখে বাহিরে যাওয়ার সময় হয়ত কেউ রেখেছে। আমি জানি না কে করেছে?
-কিন্তু আমি জানি।
-কে?
- তোর খালাত ভাই জহিরুল!

নাম শুনে আমার ক্রোধের সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে আমার খালাত ভাই না, সে আমার শত্রু! তাকে এর শাস্তি পেতে হবে। আমি রাগে গজ গজ করে পুন:রায় স্কুলের দিকে হাটা শুরু করলান জহিরুল কে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য। শিখা আমার পিছন দিয়ে হাত টেনে ধরল, তারপর বলল, সে এতক্ষণে বাড়ি চলে গেছে। আমি দ্বিতীয় বার নিজেকে বোকা হিসেবে আবিস্কার করলাম!

সে থেকে জহিরুল কে আমি এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু সে সেঁধে সেঁধে আমার সাথে কথা বলত।

জহিরুল শিখার পিছনে ঘুরঘুর করে ঘুরত কিন্তু লেখা পড়ায় তুলণামূলক একটু খারাপ এবং অতিরিক্ত দুষ্টামির কারণে শিখা তাকে পাত্তা দিত না। তারপরেও সে শিখার সাথে অনবরত ভাব জমাবার চেষ্টা করত। এ বিষয়টা শিখা ভালভাবে মেনে নিতে পারেনি তাই জহিরুল কে উচিত শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে শিখা আমার সাথে তার বই চেঞ্চ করল। আমি প্রথম অবস্হায় রাজি ছিলাম না। কিন্তু পূর্বের বই চোরের কাহিনী বাড়িতে মা-বাবাকে বলে দিবে হুমকি দেয়ার পর আমি রাজি হলাম। আমার কাছে শিখার বই দেখে জহিরুলের ভিতর দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। সে নতুন ফন্দি আটল। স্যারদের রুমের সামনে যে বড় কড়াই গাছ রয়েছে তাতে বড় করে লিখল S+S (শিখা + সাহু)
পরদিন ক্লাস টাইমের কিছুক্ষণ আগে তার সাঙ্গপাঙ্গ সহ সেটিকে ঘিরে ধরে হাসাহাসি করছে যাতে স্যারের নজর আসে। স্যার তাদের কে ক্লাসে ডাকলেন কিন্তু তারা স্যার কে ডেকে নিয়ে খোদাই করা প্লাস সহ অক্ষর দুটি দেখাল। স্যার কিছু একটা আন্তাজ করে বললেন, ক্লাসের পর বিচার হবে, এখন ক্লাসে চল। আমি সারা ক্লাসে ভয়ে ভয়ে ছিলাম। শিখা কে অতিরিক্ত চিন্তিত মনে হইছে। ক্লাস শেষে স্যার রুম থেকে বের হয়ে আনোয়ার নামের একজন কে ডেকে নিয়ে কি জানি জিঙেস করলেন। তারপর আবার ক্লাসে প্রবেশ করে বিচার কাজ আরম্ভ করলেন। আমাকে প্রশ্ন করলেন;

- তুমি কি একাজ করেছে?
- না স্যার।
- তাহলে কে করেছে?
- আমি জানি না স্যার।
- তোমরা কি জান?
জহিরুল হাত উঠিয়ে বলল,
- আমি জানি স্যার, সাহু করেছে। আমি, আনোয়ার আর মুনির দেখেছে।
- আনোয়ার, মনিরুল ঘটনা কি সত্যি?
- না স্যার, জহিরুল একাজ করেছে।
স্যার জায়গা থেকে উঠে গিয়ে জহিরুলের পিঠে টাস টাস কয়েকটা বাড়ি দিলেন। আমি মনে মনে বললাম, উচিত শিক্ষা হইছে। শিখা মুচকি হাসছে যেন এটা তার পাওনা।

এ ঘটনার পর শিখার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করলাম। তার মধ্যে চাঞ্চল্য ভাব আসলো। সে আগের থেকে বেশি করে আমার সাথে আবেগ জনিত ভাষায় কথা বলে, কথার মাঝে হাসি আর এক ধরণের টান ও চাউনি লুকিয়ে রাখে। স্কুল থেকে ফেরা এবং আসার পথে আমার জন্য অপেক্ষা করে। আমার মনও তার প্রতি এক ধরণের আকর্ষণবোধ শুরু করছে। তার হাতে মেহেদী দিয়ে লিখেছে (S+S)। সে মাঝে মাঝে তাদের গাছের পাকা বড়ুই নিয়ে আসত আমাকে খাওয়ানোর জন্য।

আরেক দিনের ঘটনা, শিখার বড় বোনের ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে, আয়োজন ছোট তাই সবাই কে দাওয়াত দেয়া সম্ভব না। শুধু মাত্র তার কাছের দুই বান্ধবীকে ও আমাকে দাওয়াত করেছে। পরে যখন বড় করে অনুষ্ঠান করবে সবাই কে দাওয়াত দিবে। যথারীতি বিয়েতে হাজির হলাম। শিখা আমাদের তিন জনের জন্য তিনটি মিষ্টি নিয়ে আসল খাওয়ার জন্য। আমার সাথে মেয়ে দুটি হাতে মিষ্টি নিয়ে মুখে দিল। আমি শিখাকে বল্লাম, তুই খাবি না। আমার কথা শেষ হতে না হতেই সে মিষ্টির অর্ধেক মুখে দিয়ে বাকী অর্ধেক হাতে ধরিয়ে দিল আমাকে খাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি খেতে পার ছিলাম না। ছোটকালে আমি কারো মুখের কোন কিছু খেতে পারতাম না, ঘিন ঘিন লাগত। মিষ্টি হাতে নিয়ে আমি দু'টানায় পড়ে গেছি। শেষ পর্যন্ত শিখার মুখের দিকে তাকিয়ে এবং সামাজিকতা রক্ষা করতে মুখে দিয়ে না চিবিয়ে অনেক কষ্টে পেটে চালান করলাম।

সেই থেকে শিখার নামের মেয়ের প্রতি আলাদা টান অনুভব করতে লাগলাম। কথা বার্তায় স্মার্ট এবং চাল চলনে পরিবর্তন হতে লাগল। সবাই আমার পরিবর্তন লক্ষ্য করল। মা কিছু একটা ধরতে পেরে ছিলেন। স্কুল গ্রীষ্মের ছুটি হলে শিখা তার মামার বাড়ি চাঁদপুর বেড়াতে যায়। আমি আমার নানু বাড়িতে চলে আসি। শিখার মামা বাড়ি বেড়াতে গেলে এক বিলেত ফেরত ছেলে শিখাকে পছন্দ করে এবং তার মামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তার মামা সানন্দে রাজি হয়ে যায়, কারণ্ এই ছেলের সাথে আত্মীয় হলে মামার লাভ, সামনে ইলেকশনে দাড়ালে ভোট ব্যাংক বাড়বে। শিখার ফ্যামিলি পর পর দুই বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু বোন ও ভগ্নিপতির পীড়াপীড়িতে রাজি হয়ে যায়।

গ্রীষ্মের ছুটি শেষ। মামা বাড়িতে হই হুল্লুর করে দিনগুলো ভালোই কাটছে। বাড়ি ফিরে আসার জন্য ট্রলারে করে এসে নদীর ঘাটে নামলাম। নেমে অনতি দূরে দেখলাম একটি ছোট লঞ্চ দ্রুত চলে যাচ্ছে। ঘাটপাড়ে অনেক মানুষের জটলা। তার মধ্যে শিখার আত্মীয় স্বজন কে দেখলাম বাড়ি দিকে হাঁটা শুরু করছে। ঘটনা কি জিঙ্গেস করার জন্য এদিক ওদিক তাকালাম। ঘাটের অল্প দূরে যেখানটায় নদী বাঁক নিয়েছে সেখানে জহিরুল দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে তার কাছে গেলাম। ঘটনা জিঙেস করার পর সে আমার দিকে কিছুক্ষণ এক নজর তাকিয়া থাকল। তার পর আমার গালে আওয়াজ করে একটি থাপ্পর বসিয়ে বলল, তোর জন্য পারিনি। আমি 'থ' হয়ে গেলাম। চোখ উঠিয়ে খালাত ভাইয়ে তাকালাম। খালাত ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পানির মত নরম হয়ে গেল। আমার ডান হাতটি কিছুটা উচিয়ে ধরে বলল, আমারে যত ইচ্ছা হয় মার, তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি হাত ছাড়িয়ে তাকে মারতে উদ্যত হলাম। তার মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া এসে গেল, বল্লাম খালাত কি হয়েছে? সে বলল, লঞ্চ করে শিখার বরযাত্রী যাচ্ছে। কথাটি শুনে আসল কষ্ট টের পেলাম। দুই ভাই দুই ভাই কে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর লঞ্চের দিকে তাকিয়ে থাকলাম যতদূর পর্যন্ত চোখ যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৫২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×