somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরা ও আমার দু'চারটি কথা।

২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঈদ আসন্ন তাই নাড়ির টানে বাড়ি ছুটে যাচ্ছি। এই ছুটে যাওয়ার সময় পথে পথে ভোগান্তির শিকার হব এটা নিশ্চিত। সীমাহীন যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, পথে পথে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে ফিরছি ফেলে আসা শৈশব স্মৃতির রাজ্যে, গ্রামের বাড়িতে। ঈদে বাড়ি ফেরার মধ্যে এক প্রকার আনন্দ আছে। এটা উপভোগ করতে হলে আপনাকে পরিবার পরিজনের সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যেতে হবে। ঈদ আর গ্রাম যেন একই সূতায় বাঁধা, এটা বাঙ্গালীর হাজার বছরের লালিত ঐতিহ্য। ঈদ এলে মনের গহীনে উঁকিঝুকি দেয় চির সবুজের গ্রাম্য মেঠো পথ, ধানখেতের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাওয়া, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে আড্ডা, সবাই মিলে খেলাধুলা করে শৈশবের স্মৃতিতে ভাগ বসানো, পাড়া পড়শির সাথে দেখা করা এবং সাথে প্রিয় মানুষদের সাথে একান্ত সময় কাটানো ত’ আছেই । ধর্মীয় সংস্কৃতির উৎসব আজ রূপ নিয়েছে জাতীয় সংস্কৃতিতে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঈদ এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

আমি সাধারণত বাড়ি যাবার সময় মা-বাবাকে ফোন দিয়ে আগেভাগে জানিয়ে দেয়। তারপর আর কিছু করতে হয়না, কিছু ক্ষণ পরপর তারাই মোবাইলে জানতে চায় সর্বশেষ কোথায় আছি। সন্তান বাড়ি ফেরা নিয়ে অভিভাবকদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। এর কারণও আছে;

ঈদ আসলে চুরি, ছিন্তাই, চাঁদাবাজি বেড়ে যায়। যে অর্থ নিয়ে সন্তান বাবা-মা কে নিয়ে নূন্যতম আনন্দে ঈদ করবে সে অর্থ চলে যায় ছিন্তাইকারীর পকেটে। তখন পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখগুলো কালো হয়ে যায়। বিষাদ নেমে আসে আনন্দ উৎসবে।

প্রথমে ভোগান্তির শিকার হতে হয় টিকিটে। অগ্রিম টিকেট মহুর্তে হাওয়া হয়ে যায়। অদৃশ্য হাতের মাধ্যমে কালো বাজারীতে চলে যায়। যে টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা সেটি হয়ত ৬০০-৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এ যেন মগের মুল্লুক, দেখার যেন কেউ নেই।

আপনি সড়ক পথে গেলে জীবন কে হাতের মুঠোয় নিয়ে যেতে হবে। ঈদের আগে এবং পরে সড়ক পথে দুর্ঘটনায় মানুষ মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেয়। বাসগুলো অতিরিক্ত যাত্রী ধারণ করে বেপরোয়া গতিতে ছুটে চলে। ফলে মানুষ মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়। মাঝে মাঝে রাস্তায় মধ্যে গাছের গুড়ি ফেলে বাস থামিয়ে গণ ডাকাতির কথা প্রায়ই শুনা যায়। তাছাড়া রাস্তায় ভাঙ্গা চোরা এবং খানা খন্দ থাকার কারণে অনেক সময় বাস উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। এভাবে চলে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে।

যারা সড়ক এবং নৌপথে চলাচল করেন তারাও নির্বিঘ্ন নয়, মাওয়া-কাওড়াকান্দি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটে নানা রকমের সমস্যার সম্মুখীন হন। এই ঘাটগুলোর সাথে সংযোগ সড়ক গুলো বেশী একটা ভালো নয়। বিশেষ করে পাটুরিয়া।

বিড়ম্বনা সড়ক পথে সীমাবদ্ধ নয়। নৌ-পথেও রয়েছে নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলা। প্রথমে আপনাকে সদর ঘাট নৌ টার্মিনালে হেনস্তা হতে হবে তাও কুলি দ্বারা। যে মালামালা তাদের ৫০ টাকায় উঠা-নামার কথা সেটির জন্য তারা ৬০০ শত টাকা হাকিয়ে বসবে। আপনি নিজে বহন করলেও তাদের টাকা দিতে হবে। অলিখিত নিয়ম। শেষমেষ আপনাকে ৩০০ টাকায় রফাদফা করতে হবে। অমান্য করলেই হেনস্তা নিশ্চিত। লঞ্চের উঠার সময় মানুষের চাপাচাপিতে সিড়ি থেকে পড়ে অনেকে বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে জীবনটা বিসর্জন দেন। দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ এর সাথে পরিচিত। লঞ্চে উঠে দেখবেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এক ইঞ্চি জায়গাও খালি নেই। বাধ্য হয়ে আপনাকে ছাদে উঠতে হবে। তাও ভালো। অত্যান্ত কিছুটা হলেও লঞ্চ ডুবির ঘটনার সেফ থাকতে পারবেন। ভিতরে আটকে না থেকে স্রোতে ভেসে কিছুক্ষণ বাঁচতে পারবেন। ঈদে ঘর ফেরা মানুষের বাড়তি চাপ থাকার কারণে এক শ্রেণির অসাধু লঞ্চ মালিকেরা আনফিট, লক্কর-ঝক্কর মার্কা লঞ্চ রং মাখিয়ে গাজী- কালু আর গঙ্গীমার নামের উপর পানিতে ভাসান, শেষমেষ বলেন, আল্লাহ্ ভরসা। সাধারণ যাত্রীরা অসহায় এবং কিছু না বুঝেই এতে চড়ে বসেন। ফলাফল প্রতি বছর নৌ দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের সলিল সমাধি।

সারা রাত অপেক্ষা করেও অনেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পান না। ঈদ আসলে অগ্রিম টিকিট কোথায় যে হাওয়া হয়ে যায় তা প্রসাশনের কাছে বড় এক রহস্য। কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা এই রহস্য মর্হুতেই ভেদ করতে পারেন। তাদের চোখের সামনে কালো বিড়ালের সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায় টিকেট। টিকিট কাটলে যে নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই, কারণ প্রতি ঈদেই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় যেন ফরযে আইন হয়ে গেছে। সে ফরয আপনার পালন করতেই হবে।

যারা বিমানে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও যান তাদের ভাগ্য ভালো। তারা বাংলাদেশের ফাস্ট ক্লাস নাগরিক। তাদের জন্য শুভ কামনা থাকল, তাদের ভ্রমণ আনন্দ এবং নিরাপদ হউক।

বাড়ি ফিরে যখন প্রিয় মানুষদের সাথে টিভিতে ঈদ প্রোগ্রাম দেখবেন তখন মন্ত্রীদের হাসিমাখা মুখ আর কথার ফুলঝুড়ি দেখে আপনাকে অবাক হতে হবে। কেউ কেউ মনে মনে বিরুক্তি প্রকাশ করবেন। অত:পর প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গিয়ে সব কিছু ভুলে যাবেন।


এত সমস্যার মধ্য দিয়ে যখন মানুষ বাড়ি ফিরে তখন প্রিয় মানুষ মুখ এবং শৈশবের স্মৃতিতে সাঁতার কেটে সব কষ্ট, ভোগান্তি সবকিছু ভুলে যায়। আর ভুলে যাওয়াটাই কাম্য। কেননা এত দুর্ভোগ আর অশান্তি মনে রাখলে সামনের দিন চলবে কিভাবে?

সর্বশেষ, আমাদের চাওয়া এবারের ঈদ যেন কারো জীবনে বিষাদে ঢেকে না যায়। বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঈদ আসুক অনাবিল আনন্দ নিয়ে। আর ভেদাভেদ, হিংসা ভুলে সকলে উপভোগ করি আনন্দময় ঈদ উৎসব। সকল কে ঈদ মোবারক, থুক্কু ইদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৪৪
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×