somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি ভেজা শৈশবের দিন রাত্রি।

২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঢাকা শহরে এখন ঘুরিঘুরি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির আগে প্রকৃতির অগ্মিরুপ ধারণ করে। গরমে মানুষের যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তখন বৃষ্টি আমাদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে ধরা দেয়। আমি বৃষ্টি কে উপভোগ করি। মাঝে মাঝে বিরুক্তি চলে আসে যখন প্রাত্যাহিক জীবনের কাজ কর্মে ব্যাঘাত ঘটে। ছোট বেলায় বৃষ্টি আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিত। স্কুল ছুটির পর বইগুলোকে পলিথিন ব্যাগের ভিতর ভরে একটি শুষ্ক জায়গায় রেখে মাঠে ফুটবল খেলতাম। অনেক সময় হাতের কাছে ফুটবল না পেলে জাম্বুরা দিয়ে ফুটবলের কাজ সেরে নিতাম। বৃষ্টিতে ভিজে এবং ফুটবল নিয়ে মাঠে দৌড়াদৌড়িতে শরীরে কাঁদা মেখে একাকার হয়ে যেত। বল দখল করতে গিয়ে মাঝ মাঠে আছার খেয়ে পড়ে যেতাম। আর পা পিচলে পড়ে গেলে বলের আগে শরীল চলে যেত। আবার একজনের ধাক্কা খেয়ে তিন চারজন মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতাম। গোল হত হালি হালি।

আমাদের শরীলগুলো ছিল ব্যাঙের চামড়া দিয়ে গঠিত, ফলে ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার কোন চান্স ছিল না। ফুটবল খেলা শেষ হলে দল বেঁধে চলে যেতাম নদীর পানিতে গোসল করতে। সেখানে বেল্লা বেলা, গাছা গাছা (নদীর পানিতে ডুব দিয়ে গ্রামের ছেলেরা এক ধরণের খেলা খেল যা দলবেঁধে খেলা যায়) খেলতাম। আমাদের দাপাদাপিতে নদী যেন প্রাণ ফিরে পেত। কখনো পাড়ে উঠে সবাই লাইন দিয়ে ঝপাঝপ পানিতে পড়ে আনন্দ উল্লাস মেতে উঠতাম। আষাঢ় মাসে বৃষ্টির ফোঁটা নদীতে পড়লে এক ধরণের সূরালো আওয়াজ হয়। এই আওয়াজের ছন্দ ভালোভাবে শুনতে নদীর পানির ভিতর ডুব দিতে হয়। ডুব দিলে কানে যে সূর আর ছন্দ ভেসে আসে মনে হয় মাছ হয়ে নদীতে সারা জীবন কাটিয়ে দেই। নদীতে ডুবাডুবি আর লম্ফ জম্প করতে করতে চোখ লাল হয়ে উঠত এবং শরীলের চামড়াগুলো ফ্যাকাসে হয়ে যেত। এই অবস্থায় বাড়ি গেলে মায়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত না। তাই সবাই মিলে কাগজ, খেড়কুটা জোগাড় করে আগুণ ধরিয়ে শরীলে তাপ নিতাম, যাতে শরীল স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। আগুণের তাপে ত্বক কিছুটা প্রাণ ফিরে পেলেও চোখের লাল সহজে কমত না। সেই জন্য আমরা চোখে দু’হাত দিয়ে একটি মন্ত্র পড়তাম, সেটি এখন আর ভালোভাবে মনে নেই, তবে মোটামুটি এরকম ছিল-

কাউয়ালো…কুলিলো …
তোর চোখ কালো
আমার চোখ রাঙ্গা,
আমার চোখ তুই নে
তোর চোখ আমায় দে
হুক্কালি.


মন্ত্র পড়ে চোখ থেকে হাত সরিয়ে একজন আরেকজন কে দেখাতাম চোখ স্বাভাবিক হয়েছে কিনা।
মন্ত্রের কার্যকারিতা যাই হউক না কেন বিশ্বাস ছিল প্রবল। তা সত্ত্বেও বাড়ি গেলে মায়ের হাতে ধরা পড়ে যেতাম। কতক্ষণ বকাঝকা করে পাতে খাবার বেড়ে দিত। খাবার বলতে ভাত আর বিলের মাছ। সে সময় বিলে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছে ভরপুর ছিল। মানুষ সেগুলো জাল, বড়শি দিয়ে ধরে বাজারে বিক্রি করত, দাম ছিল খুব সস্তা। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। ঠান্ডা বাতাস আর ক্লান্ত শরীল সহজে ঘুমিয়ে পড়ত। ঘুমের রাজ্যে বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখতাম।
বিকালবেলা ঘুম ভাঙ্গলে মনে হত এই মাত্র সকাল হয়েছে! ঘুম ভাঙ্গার পর মা কে দেখতাম রান্না বান্নার কাজে ব্যস্ত। বড়রা লুডু খেলার মাঝে ছক্কা-পাঞ্জা নিয়ে হহচই শুরুকরছে।বয়সে ছোট হওয়ার কারণে তাদের সাথে খেলতে চাইলেও দলে নিত না। বিকাল বেলা চলে যেতাম ডান্ডামারি(গাংগুলি) খেলতে। ডাংগুলি খেলায় অনেক মজা পেতাম।



কিন্তু সেই সময়ের বড়রা এই খেলা পছন্দ করতেন না বিধায় তারা আমাদের দৌড়ানি দিয়ে খেলার আসর ভেঙ্গে দিত। এবং মক্তবের হুজুরের কাছে নালিশ করত। পরদিন সকালবেলা মক্তবে আরবী পড়তে গেলে খুব ভয় লাগত মাইর খাওয়ার জন্য। হুজুর আমাদের জন্য শাস্তি নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন; মারবেল খেললে পাঁচ বেত (বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পাঁচ বার প্রহার), গাংগুলি খেললে সাত বেত আর নইমারি (হাড়ি পাতিলের ভাঙ্গা অংশ ‘চারা’ দিয়ে খেলা) খেললে ছয় বেত সহ অন্যান্য শাস্তির পরিমাণ নির্ধারিত ছিল। মাঝে মাঝে ছি- (কাবাডি) খেলতাম। যদিও হাত পা ভাঙ্গার ভয়ে বাড়ি থেকে এখেলা নিষিদ্ধ ছিল কিন্তু মা-বাবার নিষেধাজ্ঞা শুধু বাড়ি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। বড়রা অনেক সময় মাঠে কাবাডি খেলার প্রতিযোগিতায় আয়োজন করত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পিলিয়ার (খেলোয়ার) হায়ার চলত। আমরা ভিড়ের মাঝে ঠেলাঠেলি করে সামনে চলে যেতাম ভালোভাবে খেলা দেখার জন্য। কোর্টের দুই পাশে তান্ত্রিক শ্রেণির লোকরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে বসে থাকত মন্ত্র তন্ত্র পড়ার জন্য। এদের কাজ ছিল প্রতিপক্ষের খেলোয়ারদের মন্ত্র/বাণ মেরে শরীল কে দুর্বল করা এবং নিজ দলের কোন খেলোয়ার অপরপক্ষের তান্ত্রিক দ্বারা আক্রান্ত হলে তা ফিরানো। খেলা শেষে বিজয়ী দলকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস চলত। হারুপার্টির (পরাজিত দলের) খেলোয়ার এবং সার্পোটারদের মুখ মলিন হয়ে যেত। সন্ধ্যার পর ঘরে ফিরে পড়তে বসতাম। দশটা না বাজতেই ঘুম এসে চোখে ভর করত। এই ঘুম আসার কারণে অনেক বকাঝকা খেয়েছি তাই ঘুম কে সবচেয়ে বড় শন্ত্র মনে হত। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় শুতে পারলেই যেন বাঁচি। সারা রাত বিচিত্র স্বপ্ন দেখে পার করতাম। কিন্ত এখন ঘুমের জন্য হাসফাস করে মরতে হয়। সময়েই সব কিছু পরিবর্তন করে দেয়।

(ছবি: নেট)


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×