কৃষকঃ এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে কৃষকরা। ফলন ফলিয়েও উৎপাদন খরচ তুলতে না পাড়ার কারণে কপালে হাত এবং মাথায় দু:শ্চিতা ভর করেছে। তারা ফসল ফলালেও তাদের ঘরে ভাত নেই। ৫০ টাকা কেজি চাউল কিনতে হচ্ছে। অপর দিকে কিস্তির টাকার জন্য এনজিও এর লোকেরা সকাল সন্ধ্যা বাড়ির উপর এসে টহল দেয়। তাই সময়ে সময়ে লুকিয়ে থাকতে হয়। ঈদের পরিবারের জন্য তেমন কেনাকাটা হবে না। পুরান লুঙ্গি, পুরাতন জামা গায়ে ঈদের নামাজ পড়ে বাড়িতে শুয়ে বসে কটিয়ে দিবে। ঘরের মহিলা সামান্য সুজি- সেমাই রান্না করে সার্মথ্যবানদের দেয়া কুরবানির গোস্তের জন্য অপেক্ষা করবে। কর্তা ছোট ছেলেকে সার্ট কিনে দিতে পারলেও প্যান্ট কিনে দিতে পারবেনা। বড় ছেলে পুরাতন জামা লন্ডি করে পড়বে। এবং কর্তা একমাত্র মেয়েকে বলবেন, রোজার ঈদেরটা দিয়ে চালিয়ে দাও। অনেক পরিবারের সন্তানেরা বাবার আর্থিক দুর্গতি দেখে চুপসে যাবে, কিন্তু দু’একটি পরিবারের সন্তানেরা বুঝতে চাইবে না। তারা মনঃক্ষু্ন্ন হয়ে বিদেশী ড্রেসের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে।
উত্তর বঙ্গের কৃষকের কথা না বলাই ভালো; কারণ সেখানে বন্যা চলছে। দয়া করে তাদের বাস্তব অবস্থা বুঝে নিবেন।
জেলেঃ জেলেদের আর্থিক অবস্থা করুণ। তারা দারিদ্রপীড়িত। জেলেরা সাধারণত নদীর পাড়ে বসবাস করে। এখন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বুঝতেই পারছেন তাদের অবস্থা কি হতে পারে! নদীতে আগের মত মাছ পাওয়া যায়না। অপর দিকে মহাজনের দেনা কাঁধে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার মত স্বার্থপর তারা নয়। সরকার মাঝে মধ্যে জেলেদের জন্য কার্ড বরাদ্ধ দিলেও সেগুলো জেলেরা পায়না! সরকার দলীয় বড় লাটের তোলে সেগুলো খায়। জেলেদের ঘরে ঈদ আনন্দ বলতে; পরিবারের লোকদের সাথে দু’চারদিন অবসর সময় কাঠানো।
মুচিঃ এই পেশার লোকজন সমাজের খুবই নিচু শ্রেণির। ঈদ আসলে তাদের মুখে হাসি হাসি ভাব লেগে থাকে। দু’চার পঁয়সা বাড়তি ইনকাম হয়। তখন তাদের দেখলে ভালো লাগে। সামান্য কয়টা টাকার বিণিময়ে ছেড়া ফাঁটা জোতা/সু- সেলাই বা পালিশ করে দেন। এতে যাদের নতুন জোতা কেনার সামর্থ থাকেনা তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। অন্যের মুখে হাসি ফোটানো এক ধরণের ঈদ।
লন্ডি বা ধোপাঃ এই পেশার লোকজন সমাজে খুবই অবহেলিত এবং তাদের উপর সারা বছর চাপ থাকে। ঈদ আসলে চাপের পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু তাদের ভাগ্য পরিবর্তন কোন দিন হয়না। ঈদের আগে তাদের কর্ম ব্যস্ততা দেখলে ভালো লাগে। বাড়তি কিছু ইনকাম হয়। তারা গরীব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির আনন্দের ভাগিদার। কারণ; তাদের হাতেই গরীব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির পুরাতন কাপড় নতুন জীবন পায়।বর্তমানে গ্লোবালইজেন এবং ধণতান্ত্রিক অর্থ ব্যবস্থা কায়েম হওয়ার কারণে অনেক স্বাবলম্ভী মানুষ এ পেশায়/ব্যবসায় নাম লিখাচ্ছেন। তারা সুপারসপ বা বড় বড় মার্কেটে কর্মাশিয়াল লন্ড্রি বা ধোপাখানা গড়ে তুলেছেন।
ড্রাইভার/হেল্পারঃ নিম্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সারা বছর মালিকের তেল, গ্যাস এবং রিপেয়ারিং খরচের দু’চার টাকা মারতে চেষ্টা করেন। অনেক সময় ধরা পড়লে চাকুরি চলে যায়। ফাঁক পাইলে মালিক পক্ষকে না জানিয়ে খেপ মারে। ঈদ আসলে তাদের শ্রেণি ভিত্তিক ইনকাম হয়। সবচেয়ে ভালো ইনকাম করে বাস ড্রাইভার। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি চালকরা বেশি সুবিধা করতে পারেন না। তারা মালিকের বোনাসের দিকে চেয়ে থাকেন। প্রাইভেট ড্রাইভারদের ঈদ তেমন সুখের হয়না, কারণ; মালিকপক্ষ ছুটি না দিলে পরিবার পরিজন রেখে ঈদ করতে হয়। এখানে পাব্লিক পরিবহন সেক্টরের ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকল, তারা যেন মানুষকে ঠেকিয়ে বা জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করেন।
কামাড়ঃ ঈদ আসলে কামাড় সম্প্রাদায়ে পেশি অতিরিক্ত আফ এন্ড ডাইন করার ফলে ফুলে উঠে। তারা সারা বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। ঈদে পশু জবাইয়ে বা কুরবানিতে তাদের অবদান আছে। তারা প্রতিটি ছুড়ি -চাকু, চাপাতিতে চক চকে ধাড় দেন।
আয়া,মালি,পিয়ন,ক্লিনারঃ এই শ্রেণির লোকরা সারা বছর বসের ঝাড়ির উপরে থাকেন। বসদের ঝাড়ি শুনলে মনে হবে, দেশে নব্য দাস প্রথা চালু হইছে। তারা হলো দাস আর বসরা প্রভু। কিন্তু ঈদ আসলে বসদের হাত থেকে দু’চারশো টাকা খসতে চায়না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কে দু’চারশ টাকা বখশিস দিতে এই সমস্ত লাটদের দেহ থেকে জান ছুটে যায়, কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয় যায়। তবে অনেকে শাড়ি অথবা লুঙ্গি দেন। আমার মতে শাড়ি অথবা লুঙ্গি না দিয়ে নগদ টাকা দিলে তারা বেশি উপকৃত হবেন। কেননা, সেই টাকা দিয়ে পরিবারের অন্য লোকদের জন্য কিছু কিনে দিয়ে খুঁশি করতে পারবেন।
বেসরকারী চাকুরিজীবীঃ যে সামান্য কয়টা টাকা বেতন পান তা দিয়ে বাকি মাসগুলো কোন রকম পার করলেও ঈদ আসলে তাদের নানা রকম হিসাব কষতে কষতে ঘাম ছুঁটে যায় । বেতন ও বোনাসের টাকা হিসাব করে প্রতিটি ক্ষেত্রে পাই টু পাই খরচ করেন। কিন্তু শেষমেষ নিজের জন্য কিছু কিনতে পারেন না, পকেট খালি হয়ে যায়। এজন্য তাদের আফসোস নেই বরং পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মুখে হাসি দেখলে নিজের ঈদ ষোলআনা পূরণ হয়ে যায়।
সরকারী চাকরঃ এই শ্রেণির লোকদের ঈদ উপরে বর্ণিত লোকদের চাইতে ভালো কাটে। তারা মোটামুটি ভাগ্যবান। স্বাধীনতার সু-ফল তারা বারো আনা ভোগ করছে।
নার্স বা সেবিকাঃ এরা ঈদ কাটায় কোন রকমে। ঈদ আসলে ছুটির জন্য বসদের পাছে পাছে ঘুরেন। কিন্তু বস অটল; কিছুতেই ছুটি দিবেন না। বসদের এক কথা ‘মানব সেবাই ধর্ম’- এ সেবা পালন করতে পারলে বড় রকমের ঈদ উদযাপন হয। কিন্ত এই নীতির বাক্য ডাক্তারদের থেকে তাদের জন্য বেশি প্রযোজ্য হয়। অধিকাংশ ডাক্তারা ছুরি চাকু চালিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে পরিবার পরিজনদের সাথে মোচে ঈদ করতে চলে যান।
বাবুর্চীঃ ঈদ আসলে তাদের হোম ওয়ার্ক এবং ফিল্ড প্রাকটিসের পরিমান বেড়ে যায়। ঈদ কেন্দ্রিক এবং ঈদ পরবর্তী বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের চাহিদা বাড়ে। সারা দিন খেটে খুঁটে সামান্য কিছু টাকা আয় করতে পারেন। পেশাদার বাবুর্চিরা এই সময় ব্যস্তত সময় পার করবে।
সাংবাদিকঃ সাংবাদিক ভাইদের ঈদের আগে এবং পরবর্তীতে কাটবে গাবতলী, বাবু বাজার, সদরঘাট, মহাখালী, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, দেশের বিভিন্ন পশুর হাট, ঈদগাহ ময়দান, বিরোধী দলীয় নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির ঈদ সৌজন্য মূলক সাক্ষাৎকার প্রচার করে।
মেসের খালাঃ এই শ্রেণির খালারা ঢাকা শহরের অভাগা পোলাপাইনের সুখ দুঃখের সঙ্গী। তারা সারা বছর কথায় কথায় চোখ রাঙ্গানি দিলেও ঈদ আসলে ব্যাচেলরদের সাথে ভালো ব্যবহার শুরু করে দেন। রান্না বান্নায় অমৃত স্বাদ আনতে চেষ্টা করে। তখন তাদের রান্না করা খাবার খেয়ে মনে হতে পারে রেডিসন কিংবা সেরাটনের কাছাকাছি মানের কিছু খাচ্ছি। হঠাৎ এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো, সামান্য কিছু বোনাস এবং একটি শাড়ি কাপড় পাওয়া। মেসের খালাদের ঈদ পরিবার নিয়ে তত একটা ভালো কাটেনা, কারণ; তাদের শরীলেও নিন্মবৃত্তের একটি ট্যাগ লেগে আছে।
গৃহকর্মী: বা কাজের লোকঃ এই সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। শুধু একটাই চাওয়া- আর কোন আদম সন্তান কে যেন গৃহকর্মী বা বাসার কাজের লোক না হতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৪