বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় গ্রহণকারী পিতা-মাতা:
বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় গ্রহনকারী প্রত্যেকটি মানুষের স্বপ্নময় শৈশব কেটেছে। কৈশোরের রঙ্গিন আলোয় আলোকিত করেছেন জীবনকে। যৌবনকালে ঈদের সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এপাড়া থেকে ওপাড়া। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে করেছেন হই-হুল্লুর। তারপর বিয়ে করেছেন, সংসার গড়েছেন। সে সংসার আলো করে যখন ফুটফুটে সন্তানের মুখ দেখেছেন তখন পিতৃত্ব-মাতৃত্বের স্বাদ ষোলআনা পূর্ণ করেছেন। সন্তানের যাতে কষ্ট না হয় তার পূর্ণ খেয়াল রেখেছেন। ঈদ উৎসবে সন্তানের প্রত্যেকটি বায়না মিটিয়েছেন। এছাড়াও সারা বছর সন্তানের মঙ্গলের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বাস্তবতার নির্মম সত্য হলো আদরের সন্তান রেখে বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ করতে হবে! এটা সম্ভব হয়েছে মানুষরুপী কিছু অমানুষের কারণে।
ঈদের দিন কর্তৃপক্ষ হয়ত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সে খাবার কি আদরের সন্তান-সন্তানাদি রেখে মুখে রোচবে? । হয়ত দু’এক লোকমা মুখে দিবেন, তারপর নিজের অজান্তেই দু’ফোট চোখের পানি ফেলে পাত ভিজিয়ে দিবেন।
এর মধ্যে যার সন্তান তুলনামূলক মানুষ থেকে কিঞ্চিত দূরে আছে তারা হয়ত পিতা-মাতাকে এসে এক নজর দেখে যাবে। কেউ কেউ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসবেন। কিন্তু সে খাবার দেখলে পিতা-মাতার কষ্ট আরো বাড়বে না?
এতিমখানার শিশুঃ
জন্ম যাদের দুঃখে ভরা তাদের আবার দুঃখ কিসের?
দুঃখ আছে; সে দুঃখ হয়ত আমরা উপলদ্ধি করতে চাই না। প্রত্যেক শিশুই তাদের পিতা-মাতাকে কাছে পেতে চায়, আদর স্নেহ ভালোবাসা পেয়ে সাদ আহ্লাদ পূরণ করতে চায়। কিছু শিশুর সামাজিক, পারিপার্শ্বিক কারণে তা সম্ভব হয়না। অন্যসব শিশুরা যখন বাবা-মায়ের হাতে ধরে হাটে তখন এই সব শিশুরা চেয়ে চেয়ে দেখে, সে সময় তাদের মনের অবস্থা কি হতে পারে একবার ভেবে দেখেছেন কি?
এই হতভাগা শিশুরা সাধারণত সরকারী শিশু পরিবার, শিশু নিবাস, শিশু সদন, এতিমখানা, লিল্লাহ বোডিং ইত্যাদিতে থাকে। অনেক স্বেচ্ছাসেবী এবং বেসরকারী সংগঠন ঈদের সময় তাদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দেন। ভালো হয় যদি ঈদ উৎসব সহ অন্যান্য দিনে দেশের নামী দামী তারকারা, বিখ্যাত ব্যক্তিরা যদি তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করেন, সামন্য উপহার সামগ্রী তুলে দেন।
এই সমস্ত শিশুদের আনন্দ অন্যের দান-অনুদানের উপর নির্ভর করে। তাই সবার উচিৎ, সাধ্য অনুযায় সাহায্য সহযোগিতা করা।
পথ শিশুঃ
পথ শিশুরা আমাদের সমাজের অংশ অথচ এই কঠিন সত্যটা আমরা অনেকেই স্বীকার করতে চাই না। পথশিশুদের বেশির ভাগ জন্ম ফুটপাথে। অনেক স্বজনহারা শিশুও এই তালিকায় নাম লেখায়। পথ শিশুদের 'টোকাই', 'পথকলি', 'ছিন্নমূল' বা 'পথশিশু' বলা হয়।
এসব সুবিধা বঞ্চিত পথ শিশুদের প্রতি সবাই সুদৃষ্টি দেয়া দরকার । একটি সুবিধা বঞ্চিত শিশুও যেন ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের সমাজে প্রচুর ধনী ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের পরিবারের ঈদ কিনা কাটায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। এসব খরচ থেকে যদি কিছু টাকা বাঁচিয়ে পথশিশুদের স্বার্থে দান করেন তাহলে তাদের ঈদ আনন্দময় হয়ে উঠবে। আশার কথা হলো; অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং কিছু কোম্পানি এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্ত ব্যক্তি হিসেবে আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে তাদের প্রতি কিছু করার। শিশুদের মুখে হাসি ফুটাতে বেশি কিছুর দরকার নেই; দরকার শুধু মানুষিক ইচ্ছা এবং সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব। অথচ সে সহযোগিতার মনোভাব আমাদের অনেকের নেই। আমরা নিজেদের জন্য অনেক খরচ করি কিন্তু একবারও ভাবিনা এসব শিশুর কথা। অথচ আমাদের একটু সাহায্য-সহযোগিত তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। আমাদের মনে রাখা উচিত, এসব পথ শিশুরা সমাজের অংশ।
ঈদের দিন তাদের সাথে প্রথানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ করা উচিৎ।
ছিন্নমূল মানুষঃ
আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঈদের আনন্দে ভাটা পড়ে ছিন্নমূল মানুষের। যেখানে দু’বেলা খাওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই সেখানে ঈদের আনন্দ তাদেন নিকট ধোঁয়াসা। ঈদের নতুন পোশাক, সেমাই সুজি, গোস্ত তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। এসব পরিবারের কোমলমতি শিশুরাও ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। নদীর অব্যাহত ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভূমিহীনতা তাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী। এই সমস্ত মানুষদের মুখে হাসি ফুটাতে হলে পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ থাকা উচিৎ। যথা সামান্য বরাদ্দ থাকলেও সেগুলো সঠিকভাবে বন্টন হয়না, ক্ষমতাসীন লোকেরা ভাগ ভাটোয়ারা করে খায়। কিন্তু আমরা যারা কুরবানি দিচ্ছি তারা যেন অবশ্যই কুরবানির মাংস তাদের নিকট পৌছে দেই এবং যথা সম্ভব সাহায্য সহযোগিতা করি। আর যাদের গরীব আত্মীয়-স্বজন আছে তাদের প্রতি যেন খেয়াল রাখি
জেল খানার কয়েদিঃ
দুনিয়াতে অপরাধীর সাজার স্থান হলো জেলখানা। কেউ স্বেচ্ছায় জেলে যেতে না চাইলেও প্রসাশন, আইন-আদালত অপরাধ প্রবণ মানুষ কে জেল খানায় পাঠায়, যাতে কৃত কর্মের সাজা ভোগ করতে পারে। কাউকে সংশোধনের জন্য নিক্ষেপ করা হয়। তাই কয়েদিদের জেলখানাতেই ঈদ কাটাতে হয়। এ জগতের বাসিন্দাদের জন্য ঈদের দিন প্রিয়জনরা নিয়ে আসেন পোলাও-মাংস, কেউ আবার সেমাই। কেউ নিয়ে আসেন নতুন কাপড়। জেল কর্তৃপক্ষ হাজতিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা করার বিশেষ সুযোগ করে দেন।ঈদের দিন কারাবন্দিদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। সাধারণত সকালে ঈদের নামাজ পড়া হয়। নাস্তা হিসেবে তাদের জন্য পায়েস ও মুড়ি পরিবেশন করে থাকেন। দুপুরে বড় রুই জাতীয় মাছ, আলুরদম ও সাদা ভাত ইত্যিাদি খেতে দেওয়া হয়। রাতে বিশেষ খাবার হিসেবে পোলাও, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সালাদ ও পান-সুপারি দেন।
আমাদের একটাই চাওয়া, বাংলাদেশের জেলখানা যেন কয়েদি সংকটে একদিন বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪০