মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় গলায় সূর করে কাঁদি। কিন্তু পুরুষ মানুষ হওয়ার ধরুন পারিনা। এই বয়সে সূর কিংবা বিলাপ করে কান্না করা আমার পক্ষে মানায় না। অথচ ঘরের মহিলা কি সুন্দর বিলাপ করে কাঁদেন। এই কান্নার মাঝে এক ধরণের সূর লুকায়িত থাকে, যাতে আমার মন খুব সহজে গলে যায়।
আমি যখন হাউমাউ করে কাঁদব তখন নিশ্চয় চোখের পানিতে গাল-মুখ ভিঁজে একটা বিশ্রী ভাব এসে যাবে। কিন্তু ঘিন্নি কান্নার সময় মাথার চুল ছেড়ে হাটু বিছিয়ে দেন। চোখের পানি যখন পাতা স্পর্শ করে গালে বেয়ে পরে তখন তাকে দেখলে খুব মায়া হয়; করুনায় জড়িয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে হলেও পারিপাশ্বিক কারণে অনেক সময় পারিনা। সে সময়টা ছবির মতন লাগে এবং কল্পনায় দৃশ্যটার ছবি এঁকে ফেলি। আমার নিকট মেয়েদের কান্না এক ধরণের শিল্প বা আর্ট। আপনাদের নিকট ছলনা হলে দ্বিমত করব না।
ছেলেরা যখন কাঁদে তখন ভিতর থেকে দুঃখ, বেদনা, হাহাকার রাজ্যের যন্ত্রণা বের হয়ে আসে, মেয়েদের কান্নার সময় বেড়িয়ে আসে মারাণাস্ত্র। কোন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেয়েরা ছেলেদের চাইতে বেশি কাঁদেন! কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, মেয়েরা ছেলেদের চাইতে কম কাঁদেন। গবেষণায় যারা যুক্ত ছিলেন তারা বেআক্কেল! মেয়েদের কান্নার প্যাকটিস কে তারা আসল কান্নার সাথে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
যখন কোন মেয়ে খারাপ পরিস্থিতির কারণে কান্না করে তখন যদি কোন পুরুষ সেই মেয়ের প্রতি ক্রাশ খায় কিংবা সহানুভূতি দেখায় তাহলে বুঝতে হবে, সে মেয়ের কান্না শতভাগ সার্থক। অনেক মেয়ে তার অবচেতন মনে কিংবা অতিরিক্ত আবেগের কারণে বা অতি বিশ্বাসে প্রেমিক পুরুষ কে সব কিছু উজাড় করে দেন। ফলে সে মেয়েটি খুব সহজে প্রত্যারিত হয়ে নিরবে কাঁদেন; কেউ হয়ত কাঁদেন না। আমার মতে; তাদের অতিরিক্ত কান্না না করে পুরাতন ক্ষত মুছতে বর্তমান স্বামীকে অতিরিক্ত ভালোবাসতে পারেন। এতে মেয়েদের দুনিয়া এবং আখেরাত হাছিল হবে।
ন্যাকামো করে মেয়েদের কান্না করা জন্মগত অধিকার। কোন কোন মেয়ে ন্যাকামো করে কান্না করতে গিয়ে পুরুষের কাছে ধরে খেয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রতি নিয়ত কান্না করে পিএইচডি করে ফেলেছেন! এই সমস্ত মেয়েদের কাছে ন্যাকামি করে কান্না করা কোন ব্যাপারই না। সকাল বেলার ডাল ভাত।
অধিকাংশ মেয়ে বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন কারণে কান্না করলেও তাদের উদ্দেশ্য থাকে পূর্বের টার্গেটকৃত কাজ বা কথা প্যানপ্যানানি বা গুনগুনানি বা সূর করে বলে যাওয়া। এর উদ্দেশ্য হলো, যে করেই হোক কার্য হাসিল করা। হাসিল না হওয়া পর্যন্ত বলেই যাবে। এটা তাদের জন্মগত স্বভাব।
মেয়েদের পেটে কথা থাকে না বা হজম হয়না! কান্নার সময় ইচ্ছে করে হউক বা অনিচ্ছায় হউক গোপন কথাটি ওপেন করতে না পারলে মেয়েদের মনে শান্তি মিটবেনা। তাদের এহেন আচরণের ফলে পরিবর্তীতে কি ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে তা তারা সে সময় ঠাহর করতে পারে না। তাই মেয়েদের নিকট সিক্রেট কিছু বলার সময় হাজার বার ভাবতে হবে আপনাকে।
মেয়েরা খুব অল্পতেই কাঁদতে পারে। এই যেমন; জন্মদিন ভুলে গেল কেউ যদি স্মরণ না করে দেন বা কেউ দুষ্টুমি করে পড়নের ড্রেস নোংরা করলে বা বড় ভুলের জন্য সামান্য বকাঝকা দিলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠবে!
কোন মেয়েকে মেকআপ অবস্থায় কাঁদতে দেখলে আপনি ভাগ্যবান। কারণ সে সময় তাদের কে ভয়ংকর সুন্দর লাগে।
মেয়েরা যদি ন্যাকামি করে কাঁদে, সে সময় যদি শাড়ী গয়নার গল্প বলতে পারেন, তাহলে তারা দুনিয়ার সব কিছু বেমালুম ভুলে যাবে। তবে স্বর্ণের এবং শাড়ির দাম যেভাবে হু-হু করে বাড়ছে তাতে অল্পতেই এই টেকনিক এপ্লাই করতে যাবেন না; তাহলে আপনার আর্থিক সংকটের ধরুণ অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে।
তবে মেয়েদের কান্নার রকমফের আছে। মেয়েরা যখন বাস্তবে কাঁদেন তখন পরিস্থিতি আসলে ভয়ংকর হয়। যে সমস্ত অসহায় মেয়েরা নেশাখোর, মদখোর এবং যিনাখোর এবং যৌতুক লোভী স্বামীর ঘর সংসার করেন তারা প্রতিনিয়ত বুকে পাথর বেঁধে কাঁদেন। তাদের কান্নার আওয়াজ মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্রের কানে পৌঁছায় না। তারা অসহায় এবং অবলা। ঈশ্বর তাদের কান্না দেখে সিদ্বান্ত নিতে ধৈর্য ধরেন। কারণ, ইশ্বর প্রতিটি মানুষ কে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাদের যদি এ থেকে সহজে পরিত্রাণ দেন তাহলে নাম ভূমিকায় অভিনয় করবে কারা?
পুরুষের কান্না সময়ের সাথে পরিবর্তণ হয় কিন্তু মেয়েদের কান্না সে আগের মতই আছে। মেয়েদের কান্না আমাদের কাছে যা পরিবর্তিত মনে হয় তা হলো শিল্পীর বে-খেয়ালী রং নিয়ে খেলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৫