somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের সমীপে

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সব যুগের যেমন একটি একক সত্য ইতিহাস আছে তেমনি সব মানুষেরও আলাদা আলাদা সত্য ইতিহাস বিদ্যমান থাকে। জগৎের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে ঘটা যাওয়া ইতিহাসগুলো সাদা কাগজে কালো অক্ষরে বাঁধা থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী। সেগুলো পড়ে জাতির কম মগজহীনরা উচ্চাশা প্রকাশ করে, কেউ আমোদিত হয় এবং কেউ কেউ আবেগে তাড়িত হয়ে আত্মসুখ লাভ করে। অপর পক্ষে মগজহীন মাথা মোটাদের ইতিহাস সময়ের ব্যবধানে ঢাকা পড়ে যায় লোক চক্ষুর অন্তরালে, হারিয়ে যায় কম্পমান তরঙ্গের বহিরাবরণে। এই হতভাগা মানুষের ইতিহাসগুলো ঢাকা পড়ে শত সহস্য কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সেখান থেকে বাছাই করে আপাতত মাত্র একটি ইতিহাস আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপ্নারা প্রশ্ন করতে পারেন, কিভাবে আমি শত কোটি বছরে জমানো এবং কম্পমান তরঙ্গে ঢাকা পড়া ইতিহাস কে উদ্ধার করলাম? সে খবর না হয় আপনাদের সাথে আরেক দিন বলব।

মানুষ পৃথিবীতে পদ চারণারর পর কোন না কোন ধর্মের অনুসরণ করেছে; সেটা হতে পারে প্রাকৃতিক কিংবা অলৌকিক বা প্রছন্ন অথবা প্রকট। সমাজ ও সভ্যতা সম্পর্কিত মানুষগুলো ধর্মীয় ভাবাবেগে তাড়িত হয়ে নানা রকম উপসর্গ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। তারা ধর্মীয় অসীম স্বাধীনতাকে নিদিষ্ট সীমারেখায় ফেলে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। এই সব স্বার্থবাদী মানুষেরা ধর্মকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করতে না পারলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কল্যাণের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ করতে পারে মাত্র। বাহ্যিক দিক থেকে ধর্ম কতগুলো আবেগ প্রবণ উপাদান দ্বারা গঠিত হওয়ার ধরুন অনেক সময় ধর্মের অপব্যবহার দেখলে অনেকে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। কারণ ধর্মের মধ্যে মানুষের একটি নিজস্ব স্বত্বা বিদ্যমান আছে, এই স্বত্বা গঠিত হয় কতগুলো আবেগ প্রবণ উপাদান দ্বারা। আবার অনেক সময় ধর্মের ক্রিয়া ক্ষতিকর জেনেও মানুষ তার বৈধতা দান করে, কারণ এতে তাদের বাস্তুবাদী স্বার্থ নিহিত আছে। সমাজে এধরণের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে মানুষ তার জীবন কে প্রবাহ মান রাখে। জীবন কে গতিশীল রাখতে গিয়ে মানুষ নিজের সাথে নিজে যুদ্ধ করে। অনেক সময় আত্মাকে ধমন করতে গিয়ে পেশিবহুল শরীরটাকে নি:শেষ করে দেয় স্বর্গীয় সুখ লাভের আশায়। সময়ে অসময়ে সাংসারিক টানাপোড়নে নিজের পড়নের লেংটিকে মাটিতে খাওয়ানের পরেও জগৎে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়ে, কারণ বাঁচার তাগিতে নিজেকে সংসারের অনেক কিছু আঞ্জাম দিতে হয়। ধর্মের কর্ম এবং বাস্তবিক কর্ম করে পরকালীন এবং পৃথিবীতে সুখ পাওয়া দুই ধরণের পরস্পর বিপরীতমুখী মিথষ্ক্রিয়া। এই দু'টানা মিথষ্ক্রিয়া পড়ে আলীপুরের মফিজ মিয়া তার জীবনে কোন দিন স্বার্থকতা খুঁজে পায়নি। হয়ত নিরন্তর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে জীবনের খেলা মনে করে সব কিছু মেনে নিয়েছে।



জীবন সংগ্রামে যুদ্ধরত মফিজ মিয়া একটানা চারদিন ভোগে সকাল বেলা যখন বন্দরে কাজ করতে যায় তখন শুনতে পায় 'জাতীয় শ্রমিক সংঘের' ডাকে বন্দরে ধর্মঘট চলছে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘের কনভেনশন নাকি বন্দর কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে মানছেন না। মফিজ মিয়া ভেবে পাচ্ছেন না আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘের কনভেনশন কি? আমাদের বন্দর তাদের কনভেশন মানতে যাবে কেন! আর তারাই বা বন্দরের লোকদের ফুসলাচ্ছে কোন কারণে?
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘের কনভেশন কে কেউ কেউ 'আইএলও' কনভেশন বলছে। 'আইএলও' শব্দটি মফিজ মিয়ার কাছে 'ইলএলো' শুনাচ্ছে, ফলে তার কাছে এটি চাইনিজ শব্দ মনে হচ্ছে। এই আইএলও পালন কারীরা কি চাচ্ছে এটা মফিজ মিয়ার বুঝে আসছেনা। কিন্তু এর প্রভাব মফিজ মিয়া থেকে শুরু করে বন্দর সংশ্লিষ্ট ছোট ছোট কার্গো এবং জাহাজ থেকে যারা মালামাল উঠানামা করেন তাদের উপর পড়েছে এটা স্পষ্ট। মফিজ পরের কথা ভাবতে না পাড়লেও নিজের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় পেরেশান হয়ে যায়। কারণ কাজ জুটাতে না পাড়লে বউটাকে একপাল পোলাপান নিয়ে উপোষ থাকতে হবে। বেলা শেষে যদি মোটা চাউল আর মোটা ডাউল নিয়ে ঘরে ফিরতে না পারে তাহলে মেঝো ছেলেটার পাছা মরে সামনের দিকের পেটের আয়তনটা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এত কিছু ভাবার সময় নেই মফিজ মিয়ার, যে করেই হউক একটা কাজ জুটাতে হবে। কাজ অবশ্য একটা জুটে সেটা হলো এই অবরোধের বিরোধিতা করে মিছিল করতে হবে। এই অফারটি সরকার দলীয় এজেন্ট থেকে পেয়েছে। সরকারদলীয় এজেন্টের এই অফার মফিজ সানন্দে লুফে নেয়, কারণ সারা দিন খেটেখুটে যে টাকা পাওয়া যাবে মিছিল এবং প্রতিবাদ সভায় যোগ দিলে পাওয়া যাবে তারচেয়ে ডাবল। আর মিছিলে যোগ দিলে কোন প্রকার ঝুঁকি নেই। কারণ পুলিশ তাদের প্রটেকশন দিবে।

মিছিল চলছে। পুলিশর পাহারায় মফিজ নিজেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে আবিষ্কার করে। মিছিলের কভারেজ দিতে অনেকগুলো প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট এক সাথে জ্বলে উঠে। বিটিভির ক্যামরা অনেকক্ষণ নানা এঙ্গেলে ভিডিও করে নেয়। শ্রমিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মফিজ মিয়ার বক্তব্য রের্কড করে । মফিজ এই প্রথম ক্যামরার সামনে কথা বলে। কথা বলার সময় সে উত্তেজনায় কাঁপছিল। এতে তাকে হাইলাইট পেতে অতিরিক্ত সুবিধা করেছে।



মিছিল মিটিং শেষ। মফিজ ২০০ টাকা ভাংতি পায়। এই টাকা দিয়ে চাল আর ডাল কিনে গামছায় বেঁধে বাড়ি ফিরে। বাড়ির সকলে তার পথ চেয়ে বসে আছে। গামছার গিটঠু খোলে মফিজের স্ত্রী কলিমন মাটির হাড়িতে ভাত চড়ায়। মফিজ গোসল সেরে এসে দেখে ভাতের মাড় গালতে দেয়া হয়েছে। মফিজ তার স্ত্রী কে বলে, ওগো আমায় একটু ফেন দাও, সারা দিনের ঝক্কিঝামেলা এখন আর শরীল সায় দিচ্ছেনা। এখন একটু খেয়ে দম লই, পরে ভালো মত খেয়ে পেট ঠান্ডা করমু হনে। মফিজের পাতে ফেন দিতে গেলে তার তিন ও চার নম্বরের বাচ্ছা দুটি ফেন খাওয়ার বায়না ধরে। এতে মফিজ মনে রাগ হলেও পরে কি কারণে জানি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। নিজের পাশে বসিয়ে ছেলে দুটিকে ফেন সমেত ভাত খাওয়ায় এবং মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। অভুক্ত ছেলে দুটি পরম মমত্বে তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে।
(চলবে.........)
পর্ব----১
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×