somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মম সত্য

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কিছু ভালো লাগেনা। অল্প কয়েকদিন আগে চোখের সমস্যায় ভুগেছি, কনজারভেটিভ ভাইরাসে চোখ আক্রান্ত করেছে। এখন মোটামুটি সুস্থ্য আছি। গতকাল আবার অফিসে এসে দেখি পায়ের হাঁটুতে এবং মাথায় তীব্র ব্যাথা করছে। ডাক্তার দেখালাম, টেষ্ট করে জানাল চিকুনগুনিয়া হইছে! কথা শুনে আমার বুকের ছাতি একহাত নেমে গেলে। হঠাৎ আমার উপর এত আক্রমন বেড়ে গেল কেন! এখন থেকে কয়েক দিন তীব্র ব্যাথ্যা অনুভব করে বাঁচতে হবে। ডাক্তার নাপা জাতীয় ঔষুধ লিখে দিলেন, সাথে কিছু ফুড সাপ্লিমেন্ট। কিছু উপদেশও ঝাড়লেন। যেগুলো আগে ব্লগে জেনেছি।

মাথা ব্যাথা করছে। মোবাইলটা হাতে নিলাম মা-বাবাকে ফোন দিব। নাম্বার ডায়াল করতে যাব এমন সময় ভাবলাম, রাতের বেলায় কি ফোন দেয়া ঠিক হবে। ফোন দিয়ে যদি বলি আমি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত তাহলে সারা রাত দুশ্চিন্তা করবেন। তাদের ভালো ঘুম হবেনা। ফজর নামাজ পড়ে বাবা-মা লঞ্চ ঘাটে চলে আসবেন,
উদ্দেশ্য প্রথম লঞ্চটা ধরা। সারা রাত তাদের কে দুঃশ্চিন্তায় রাখা কি আমার ঠিক হবে? শুনেছি চিকুনগুনিয়া হলে নাকি মানুষ মরে না, আমিও মরব না- আশা করা যায়। সকাল বেলা ফোন দিব, তাই ফোনটা রেখে দিলাম।

ঘুম আসছেনা। তীব্র ব্যাথায় ছটফট করেছি। মুখে কিছু অস্ফুট শব্দ হচ্ছে। আমার এ অবস্থা দেখে বাচ্ছা কান্নাকাটি শুরু করল। কিছুতেই কান্না থামানো যাচ্ছেনা। শেষমেশ ভালো থাকার অভিনয় করলাম। তার সাথে কিছুক্ষণ খেলা করলাম। এতে কাজ হয়েছে। এক সময় সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি গভীরভাবে তার দিকে পর্যাবেক্ষণ করলাম। মনে মনে প্রশ্ন করলাম, আমার কষ্টে তুই কাঁদিস কেন? মন প্রকম্পিত হয়ে প্রশ্নের উত্তর ফিরে আসল, ‘আমাকে তুমি জন্মদান করেছ, খাওয়াচ্ছ, বড় হলে লেখাপড়া করাবে, এতে তোমার কষ্টার্জিত টাকা নষ্ট হবে; এত কিছুর বিণিময়ে যদি আমি তোমার কষ্টে না কাঁদি, তাহলে তোমার প্রতি চির অকৃতজ্ঞ হয়ে যাব। তাছাড়া তোমার সাথে আমার আত্মার এবং ডিএনএর সম্পর্ক বিদ্যমান, এটা বড় ফ্যাক্টর। আমি থেমে গেলাম।


আমি অসুস্থ্য, গিন্নি একথা শুনার সাথে সাথে চিন্তিত হয়ে পড়লেন, এটাওটা নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেদিলেন। ডাক্তার কি বলেছেন, কয়দিন লাগবে সারতে, তুমি অফিস থেকে ছুটি নাও, ফল কেটে দিচ্ছি খাও ইত্যাদি ইত্যাদি বলেই চলেছে। সেবা-যন্তে যথেষ্ট আন্তরিক মনে হলো। আমি অবশ্য ভিন্ন কিছু মিন করা শুরু করলাম, মাঝে মাঝে তার সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়; এখন যদি সে কথা মনে করে সেবা যন্ত বন্ধ করে দেন! পরক্ষণে ভাবলাম দূর শালা, এরকম হলে এত দিন আমার ঘাড়ে ঝুলে থাকতনা, কবেই ফুরুত করে চলে যেত। আর তার বাবা-মা, ভাই ব্রাদার কে রেখে আমার কাছে থাকতে পারত না। কারণ পৃথিবীতে একমাত্র বাবা-মা হলেন সন্তানের আপনজন। সময়ের ব্যবধানে বাবা-মাকে রেখে অন্যের সাথে জীবন সংসার করা কম ত্যাগ নয়। সে যে আমার জন্য চিন্তা করছে তা অমূলক নয়, আমি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। আমি অসুস্থ্য মানে পরিবারের সবার ফাইন্যান্সিয়াল সমস্যা দেখা দিবে।

যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলাম না। ঘুম ভাঙ্গল রাত সাড়ে তিনটায়। পাশে গিন্নি ঘুমাচ্ছে। মনে হয় বেশিক্ষণ হয়নি ঘুমাইছে। হয়ত আমার ঘুম নিচ্ছিত হওয়ার পর চোখের দুটি পাতাকে এক করেছে। এখন ভাবছি, যতদিন বাঁচি এভাবে পরস্পর কাছাকাছি থাকতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার হাত স্পর্শ করলাম। গিন্নি ধড়ফড় করে জেগে উঠলেন, আমাকে জিঙ্গেস করলেন ব্যাথা বেড়েছে কিনা? আমি না সূচক জবাব দিয়ে বললাম, তুমি ঘুমিয়ে পড়।


আমি, সুবহে সাদিকের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখলাম। দেখি আমার চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির মশা চক্কর দিচ্ছে। সবাই রক্ত খেতে চায়! অনতি দূরে একটি মশাকে দেখলাম নিশ্চিন্তে চুপচাপ বসে আছে। তার পেট ফোলা। পেটের ভিতর গাঢ় রক্ত জমে আছে। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম;

- তোমার পেটের ভিতরে কার রক্ত?
- তোমার।
উত্তর শুনে আমার শরীলের রক্ত গরম হয়ে গেছে। ইচ্ছে হলো তাকে দুই হাতের তালু দিয়ে থাপ্পর মেরে পেট কে ছিন্ন ভিন্ন করে দেই। সামনে এগিয়ে গেলাম তাকে থাপ্পর মারব, কিন্তু সে আমার হাবভাব দেখে উড়ে আরেক জায়গায় বসে তাচ্ছিল্য করে বলল,
- আমাদের মারা এত সহজ না, যুগ যুগ ধরে আমরা মানুষের রক্ত চোষে আসছি, আজ পর্যন্ত কেউ আমাদের নির্ভুল করতে পারেনি! আর আপনি এসেছেন আমাদের মারতে।
- তা বুঝলাম, কিন্তু আমার মত সাংসারিক টানাপোড়েন মানুষের রক্ত চুষতে আসলি কেন?
প্রশ্ন শুনে সে মুচকি হাসছে, হয়ত মনুষ্য জাতি এত বোকা হয় কিভাবে তা ভাবছে। এর মাঝে উপর নিচে দুই পাক দিয়ে আবার বলা শুরু করল:
-শুনুন, গরীবের রক্ত খাওয়ার মাঝে আলাদা মাহাত্ম আছে। তাদের রক্ত খুব সহজে খাওয়া যায়। একেবারে নির্ভেজাল। কিন্তু বড়লোক, ক্ষমতাশালী, এমপি, মন্ত্রী, সচীব কিংবা শিল্পপতিদের রক্ত খাওয়ার মাঝে আলাদা বিশেষত্ত্ব নাই। দেখা গেল অনেক সিকিউরিটি ভেদ করে তাদের শরীলের কাছে পৌছে ভিতরে শূর ঢুকালাম, কিন্তু ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো দূষিত রক্ত, যা একেবারেই খাওয়ার অনুপযোগী। তখন সব পরিশ্রম মাটি হয়ে যাবে। কে যায় খালি খালি কষ্ট করতে। একটা কথা মনে রাখবেন, তাদের আর আমাদের চরিত্রের মাঝে গুনগত কোন পার্থক্য নেই। তারা সুইসে জমা করে আমরা জমা করি পেটের মধ্যে, আমরা জীবন বাঁচার তাগিদে আর তারা প্রতিপত্তি এবং বিলাশিতার জন্য। অথচ মানুষ আমাদের কে মারার জন্য কত কিছুই না করছে, কিন্ত তাদের কে সামনে দেখলে সবাই তোয়াজ করে, আপনার মত গরীবের শিড় নত হয়ে যায়!

আমি তার যুক্তি শুনে একেবারেই ‘থ’ হয়ে গেলাম। তারপ্রতি আগে যে রাগ-ক্ষোভ ছিল তা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে গেল।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×