মানুষ আলোচনায় আসতে চায়। কেউ কর্ম করে আবার কেউ কু-কর্ম করে। আবার কেউ কেউ প্রথম অবস্থায় কর্ম করে আলোচনায় আসলে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিতর্কিতমূলক কর্মকান্ড করে আলোচনায় থাকতে চান। এক্ষেত্রে তার প্রধান টার্গেট পূর্বেকার ব্রান্ড ভ্যালু ও বিভিন্নভাবে অনুসারিত সাধারণ মানুষ। আর মিডিয়া তো আছেই। যিনি এই কাজটি করেন তার কাছে ইহা খারাপের একটি ভালো দিক মনে হয়! বলতে ছিলাম বর্তমানে ইজতেমার কারণে আলোচনায় থাকা মাওলানা সাদ কান্ধলভীর কথা।
এই লোকের প্রতি হয়ত তার বাপ দাদার কারণে তাব্লিগ জামায়াতের লোকজনের আলাদা শ্রদ্ধা ভক্তি আছে, আর থাকাটা স্বাভাবিক। আমাদের উপ মহাদেশের কিছু রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সাধক পরিবারের প্রতি মানুষের আলাদা শ্রদ্ধা ভক্তি নতুন কিছু নয়। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু বিতর্কিতমূলক কর্মকান্ড করে পার পেলেও ধর্মীয় ক্ষেত্রে মানুষ ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ। কেননা ধর্ম স্বয়ং ঈশ্বর ও বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।
আমি কখনো তাবলিগ জামায়াত ও ইজতেমায় সাংগঠনিকভাবে যায়নি। তবে মধ্যখানে কয়েক বছর উত্তরাতে জব করার কারণে আখেরী মোনাজাতের দিন আব্দুল্লাহপুর বাসস্টান্ডের কাছে গিয়ে অংশ নিতাম । সেখানকার লাখো মানুষের এক্ই সাথে খোদার কাছে পাপ মোচনের আর্জি জানিয়ে কান্নাকাটি করার দৃশ্যটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগত। ইজতেমার কারণে অত্যন্ত কিছু সৃষ্টিকর্তা ভুলেমনা মানুষ একদিন হলেও তার কাছে স্যারেন্ডার করছে, এটাইবা কম কিসের।
ইজতেমার সাংগঠনিক কর্মপন্থা সম্পর্কে আমি বেশি কিছু জানিনা। তবে আমাদের বাড়ি বাজারের খুব কাছে হওয়ার কারণে দেখতাম, জামে মসজিদে কিছু দিন পর পর তাব্লিগ জামায়াতের লোকজন আসত। এদের মধ্যে বেশিরভাগ থাকতেন মুরুব্বি গোছের লোকজন এবং কিছু তরুণ বয়সের পোলাপান। বিশেষ করে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা দেয়া ছেলেরা। আমরা যখন বিকাল বেলা মাঠে খেলা করতাম তখন তাব্লিগ জামায়াতের লোকজন মাঠে প্রবেশ করে আমাদের কে ডেকে একত্র করতেন। তারপর আল্লাহ্ আমাদের কেন পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন- এই সম্পর্কে বয়ান করতেন, এবং সর্বশেষ করতেন কবরের আযাব সম্পর্কে। বয়ান করা শেষ হলে আমাদের কে মাগরিবের নামাজের দাওয়াত দিতেন। আমরা মাগরিবের নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজের মধ্যে ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানো শেষ হলে একজন মুরুব্বি সাথে সাথে উঠে দাড়িয়ে যেতেন এবং বলতেন;
একটি জরুরী এলার্ম, বাকী নামাজ বাদ, দ্বীন ও দুনিয়া সম্পর্কে বয়ান হবে। আমরা সব ভাই বসি, বসলে বহুত ফয়দা হবে”।
নামাজ শেষ হলে একজন শুভ্র ও সাদা দাড়িওয়ালা হুজুর কিতাব নিয়ে বসতেন। আমরা সবাই সিরিয়াল ধরে খুব মনোযোগ সহকারে হুজুরের বয়ান শুনতাম। বয়ান শেষ হলে হুজুর ইশার নামাজের জন্য সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বয়ান শেষ করতেন। এই অবস্হায়ও বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ ফাঁকি মারতেন, তাদের কে জিঙ্গেস করলে বলত; লুঙ্গি বা প্যান্ট ভালো না তাই যায়নি। আবার কখনো বলত, মুতিয়া পানি লইনি তাই যাইনি। চিল্লার শেষের দিন ইজতেমায় আগত আমীর সাহেব স্থানীয় মুসুল্লিদের নিয়ে কয়েকটি সংগঠন করতেন, যাতে তাদের ন্যায় তারা তাব্লিগ জামায়াতে বের হন।
একবার মালোশিয়া থেকে একটি তাব্লিগ জামায়াতের দল আসল আমাদের মসজিদে। সকালবেলা তাদের একজন গেল চাউল কিনতে। কিন্তু বেচারা তাদের ভাষায় চাউল চাইতে ছিল কিন্তু দোকারদার কিছুই বুঝতে পারছিলনা। হাত ও মুখ দিয়ে ইশারা করে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তৎক্ষণে কিছু মানুষের জটলা লেগে গেল। আমি মুখ দিয়ে রাইস বলার পর আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। আমি তাকে বললাম রাইসের বাংলা শব্দ চাউল। তিনি বার বার চাউল শব্দটি উচ্চরণ করে আত্মস্থ করতে লাগলেন। অত:পর সেই দোকান থেকে মুদি দোকান গিয়ে তাকে চাউল কিনে দিয়ে ছিলাম।
ইজতেমা নিয়ে অনেকে অনেকভাবে সমালোচনা করে থাকেন, এটা ভালো দিক। অত বড় একটি সংগঠন স্বাভাবিক ভাবেই তাদের দোষত্রুটি থাকবে। যারা ইজতেমায় যান বা তাব্লিগ করেন তারা ইসলামের কোন ফরয অস্বীকার করে না, কোন সুন্নত অস্বীকার করে না, ওয়াজিব ও নফল কে অস্বীকার করেন না। কিন্তু মানুষ যা করে তাহলো তাদের পঠিত কিতাব ও সাংগঠনিক কাঠামোর কিছু ভুলত্রুটির সমালোচনা। এই কাঠামোর দোষ ত্রুটি সংশোধনে মানুষের গঠনমূলক সমালোচনা কাম্য। তবে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, কিছু মানুষ তাব্লিগ জামায়াত ও ইজতেমা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন যা একেবারেই গ্রহনযোগ্য নয়।
তাই আসুন, গঠনমূলক সমালোচনা করি এবং অপপ্রচার কে না বলি।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:১৪