দেশে সম-সাময়িক বিশ্লেষকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই বেড়ে যাওয়াটা আগাছা উৎপাদনের মত। দেশে কোন ঘটনা ঘটলে (সেটা হউক গৌরব করার মত অথবা নিন্দিত) নানা জনে বিভিন্ন এঙ্গেলে মতামত দেন। এই মতামত কিন্তু কেউ চিল্লাপাল্লা করে দিচ্ছেনা। মতামতগুলো সোশাল মিডিয়ায় দেয়া হচ্ছে এবং যার যার স্ব-ইচ্ছায় দিচ্ছেন। এই মতামতের গুরুত্ব আছে। এটা কেউ প্রকাশ্যে স্বীকার করতে না চাইলেও ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারছেন না।
এমন এক সময় ছিল যখন বড় মতামত বলতে বিটিভিতে প্রচারিত মতামত কে বুঝতাম। বিটিভিতে গিয়ে যারা মতামত ব্যক্ত করতেন তাদের কে আলাদা এবং অভিজাত শ্রেণি মনে করা হত। কেননা সেখানে কথা বলতে সবাই চান্স পেতেন না। যারা পেতেন তারা হয় দল কানা ছিলো অথবা তাদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয়া হত যাতে প্রেসক্রিপশন ফলো করে প্রতিটি ঢোক গিলেন। আর খবরের কথা নাই...ই বললাম। একদিন বিটিভির অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও পরিচালকের মধ্যে কথা হচ্ছে:
-সঞ্চালক: স্যার এখানে দশজন মন্ত্রীর খবর আছে!
-পরিচালক: কাট, কাট....., বলিস কি! তাদের দুর্ণীতির খবর বাহির হয়ে গেছি নাকি?
-সঞ্চালক: না স্যার, বলছিলাম কি রাতের সংবাদে উন্নয়নের ফিরিস্তি প্রকাশ করার মত মাত্র দশ জন মন্ত্রীর রিপোর্ট হাতে এসে পৌছেছে।।
-পরিচালক: আগে বলবি তো। আমার তো আবার পেরেশানি উঠে গেছিলো।
বর্তমানে বিটিভি কারা দেখে আর কে চালায় সেটি একটি বড় প্রশ্ন। দেশের হাতেগোনা দু'একজন ছাড়া বিটিভির মহা-পরিচালকের নাম বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে, উপস্হাপকের কথা না তোলাই ভালো। এখন কাউকে রিমান্ডে নিলেও স্বীকার করবেনা সে বিটিভি দেখে। অথচ বিশ বছর আগে তা ছিলো অকল্পণীয়। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ সুযোগ সুবিধা পেলে মিডিয়াতে যারা এখন গলাবাজি করেন, যারা ঢাক-ঢোল পিটান, তাদের কে ছুঁড়ে ফেলে দিতে এক মহুর্ত সময় নিবেনা।।
একমুখী কোন কার্যই সুবিধার হয়না। এর প্রতিক্রিয়া মারাত্মক। এতে মহা বিস্ফারণ ঘটে। এবং যে কোন সময় সাজানো ডিফেন্স ভেঙ্গে তচনচ হয়ে যেতে পারে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে মারাত্মক ভোগায়। মনে রাখা উচিৎ, আমি যদি জোর করে মাঠ দখল নিয়ে গোল পোষ্টে বল শর্ট করি এবং উৎযাপন শুরু করে দেই, তাহলে সেই গোল উৎযাপনের দু'আনা দাম নেই। কারণ এখানে না আছে রেফারী, না আছে দর্শক, না আছে প্রতিপক্ষ দল।
যুগ পাল্টিয়েছে। এখন মামুষদের বোকা ভাবলে ভুল হবে। কারণ আগেরকার দিনে ক্ষমতার দাপট, অন্যায়, মিথ্যাচার, ভাঁওতাবাজি, ভেল্কি আউটপুট দেয়া যেত এবং প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফিরে আসতো না। কিন্তু বর্তমানে ফিরে আসছে। এখন যে কেউ চাইলে ট্রাম্প বা পুতিন, হাসিনা, খালেদার বক্তব্যের পর সাথে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে।
ধরুণ:
কোন এক ব্যক্তি গরমের ভিতর দীর্ঘ তিন ঘন্টা লোডশেডিংয়ের নাকাল হয়ে তারপর টিভিতে খবর দেখতে বসছেন। সেখানে কোন এক মন্ত্রীর খবর দেখানো হচ্ছে। মন্ত্রী সাহেব উঁচু গলায় বলছেন, "দেশে বিদ্যুৎের ঘাতটি নেই, এবং দেশের কোথাও লোডশেডিং নেই"! এই খবর শুনার পর যিনি তিন ঘন্টা লোডশেডিংয়ের শিকার হয়েছেন
>তার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে?
> আর তিনি প্রতিক্রিয়া কোথায় দেখাবেন?
>ঘরের বউর লগে?
প্রশ্ন ই আসেনা, কারণ বউর সাথে উল্টাপাল্টা বকতে গেলে চুলায় আগুন জ্বলবেনা। তাহলে এখন উপায়? উপায় একটা আছে, তা হলো সোশ্যাল মিডিয়া। অবশেষে সে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করলো, "কারেন্ট আর সরকারের সোদনে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে" এভরি ওয়ান খিল(কিল) মি।
এই পোষ্ট দেয়ার পরে সরকার সমর্থকরা তাকে রাজাকারের বাচ্ছা' বলে ট্যাগ দিবে। বর্তমানে ট্যাগ দেয়া খুব সহজ। আর বিরোধীরা বলবে সাবাস! অথচ পোষ্ট দাতার কষ্টটা কেউ বুঝলোনা।
রাজনীতি হলো ব্রেন ওয়াসের নাম। যারা রাজনীতি করে তারা দলের, দলের কর্তা ব্যক্তিদের অন্যায়, অবিচার, ভুল কখনো দেখতে পায়না, আর পেলেও তাদের মস্তিষ্ক তা ভুল হিসেবে বিচার বিশ্লেষণ করতে পারেনা। আর যদি পারেও তাহলে বিভিন্ন এঙ্গেলে জায়েজ করে নেয়। এটা অনেকটা ধর্ম ব্যবসায়ীদের মত। আর কারো যদি মস্তিষ্ক একেবারে বিদ্রোহী হয়ে উঠে তাহলে তার কপালে লাঞ্চনার শেষ নেই। তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়। বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমায় ফাঁসানো হয়। এমতাবস্থায় সে না পারে জনণের সাথে মিশতে না পারে নিজে সোজা হয়ে দাড়াতে। কারণ তার অতীত ততো একটা সু-খবর ও কর্মময়ী ছিলোনা। তাই কে যাবে দু'কূল হারাতে, তার চেয়ে নেতা/নেত্রীর চামচামি/ গলাবাজি করে দু'চার পয়সা কামিয়ে নিবো, ক্ষমতার দাপট দেখাবো এটাই ভালো। এর জন্য একটা কাজ অতিরিক্ত জোড় দিয়ে করতে হয়, তাহলো নেতা নেত্রীর উচ্চস্বরে গুনগান গাওয়া।
দোহাই আল্লার, তুই গুন গান গাবি গা, কেউ মানা করছেনা, তুই বিটিভিতে গিয়ে গা। সবখানে এভাবে ঢাক- ঢোল পিটাইতে থাকলে এদেশের মানুষ দেশীয় চ্যানেল দেখা ছেড়ে দিবে। তারা গড়ে বিদেশি চ্যানেল দেখা শুরু করবে। তাহলে যে এদেশের চ্যানেলর অবস্হা বিটিভির মতো হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১