somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিবিও মানুষক্রিপ্ট। মধ্য যুগের রকেট বিজ্ঞান।।

১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সিবিও পান্ডুলিপিতে রকেট ও আর্টিলারি সম্পর্কিত ড্রয়িং ও ডিজাইন

আপনাদের কাছে এই শব্দ যুগল (সিবিও মানুষক্রিপ্ট) নতুন হতে পারে কিন্তু এই শব্দটি প্রায় 500 শত বছরের পুরানো যা আমাদের কে অতীত কালীন মানুষের রকেট সম্পর্কিত জ্ঞানের চিন্তার খোরাক জোগাবে। সিবিও পান্ডুলিপিটি 1961 সালে আবিস্কৃত হয় যা 450 পাতার একটি বৃহৎ সংগ্রহ, যাতে অনেকগুলো বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত বিষয় হলো তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের ডিজাইন এবং রকেটের মাধ্যমে মানুষের ফ্লাইট বৃত্তান্ত।

আমাদের অধিকাংশ মানুষের প্রাচীণগ্রন্থ গুলো সম্পর্কে বেশি একটা জানা শোনা নেই। কিন্তু এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থে বা পান্ডুলিপিতে অতীত কালীন মানুষের অসম্ভব চিন্তা-চেতনা এবং কৃতিত্বের কথা উল্লেখ আছে।

এখন আমি যদি আপনাকে বলি, প্রায় 500 বছরের আগেরকার একটি প্রাচীন পান্ডুলিপি আছে, যাতে তরল জ্বালানী, মাল্টি স্টেজ রকেট এবং মানুষ কর্তৃক নানাবিধ রকেট ব্যবহার সম্পর্কিত কার্য প্রণালী বর্ণিত হয়েছে! তাহলে নিশ্চয় আপনি আপমাকে পাগল অথবা খবরটি পুরোপুরি জাল বলে উড়িয়ে দিবেন। হয়ত আপনি ভাববেন, লোকেরা কিভাবে জালিয়াতি খবর ছড়ায় এবং তারা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে কি করে খেলা করে?


সিবিও পান্ডুলিপিতে তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের ডিজাইন ড্রয়িং ও স্পিপিশিফিকেশন বর্ণনা করা হয়েছে।

আমি বলতে চাই সিবিও পাণ্ডুলিপিটি বাস্তব, এটি জাল খবর নয় এবং সিবিও পান্ডুলিপিতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে-তরল জ্বালানী এবং বহু-স্তরের রকেটের বর্ণনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থটি ১৯ তম শতাব্দীতে আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়।

1961 সালে সিবিও পাণ্ডুলিপিটি বুখারেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ডুরু টডেরসিউইয়ের (Doru Todericiu মাধ্যমে পাওয়া যায়। পাণ্ডুলিপিতে প্রায় 450 টি পৃষ্ঠা রয়েছে যা রোমানিয়াতে সিবিও শহরের আর্কাইভ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। অধ্যাপক টডেরিকু যখন বইয়ের মলাট খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন তখন তাকে অবাক করে যে, প্রাচীন গ্রন্থটিতে আর্টিলারি, ব্যালাস্টিক ক্ষেপানাস্ত্র এবং মাল্টিস্টেজ রকেটের বিস্তারিত বিবরণ সম্মিলিত অঙ্কন ও প্রযুক্তিগত তথ্যের বিশাল সমাবেশ রয়েছে।


অনেকে মনে করেন, Sibiu পাণ্ডুলিপিটি 1550 এবং 1570 এর মধ্যে কনরাড হস (Conrad_Haas)নামক একজন ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞান পাগল মানুষ দ্বারা লেখা হয়েছে।  প্রকৃত পক্ষে কনরাড হাস একজন সামরিক প্রকৌশলী ছিলেন, যিনি হাঙ্গেরি কিংডম এবং ট্রান্স্সিলনিয়ার শাসনতন্ত্রের অধীনে কাজ করেছিলেন।


সিবিএ মানুষক্রিপ্টে  দ্বি-স্তর এবং তৃতীয় স্তর বিশিষ্ট রকেট

এই প্রাচীন পাণ্ডুলিপিটির উৎসি খুব স্পষ্ট নয়, এমনকি তার লেখক (কনরাড হাস) সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়না, ঐতিহাসিকদের মতে, কনরাড হাস অস্ট্রীয় বা ট্রান্স লিএনএর জন্ম গ্রহণ করেন এবং তিনি রাজা ফার্দিনান্দ আইয়ের অধীনে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের অস্ত্রাগারের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন। আর সেখানে তিনি আধুনিক আর্টিলারি, রকেট ও জ্বালানী সম্পর্কিত অস্ত্রের ডিজাইন, ড্রয়িং এবং স্পেশিফিকেনশন সম্পর্কিত এই বইটি লিখেন।

সম্প্রতি জার্মানিতে এই পান্ডুলিপিটির সম্পূর্ণরূপ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নির্মাণের জন্য একটি তাত্ত্বিক তৎপরতা (বিশ্লেষণ) আছে, যার মধ্যে রয়েছে ইতিহাসে প্রথম বারের  মত-মাল্টিস্টেজ রকেট প্রযুক্তিগত ধারণা ও ব্যবহার। এতে নানা ধরণের অস্ত্রশস্ত্রসহ আতশবাজি, হ্যান্ড গ্লাইডারের আকৃতির (পাখির পাখার উপর স্থাপিত বিমানের) নকশা এবং তরল জ্বালানী ব্যবহারের সঙ্গে আনুষঙ্গিক জ্বালানি মিশ্রণ তৈরির বিবরণও রয়েছে। যা আজকাল মানুষ কে সত্যিই অবাক করে।


পাখির পাখার উপর স্থাপিত গ্লাইডারের আকৃতি যা এখন ফাইটার বিমানে দেখা যায়।

হ্যাস তার ডিজাইনগুলি ব্যবহার করে বাস্তব ভিত্তিক পরীক্ষা করেছেন কিনা তা একটি অতি রহস্য। কিন্তু অনেকে দাবি করেন, 1550 সালে একটি রকেট লাঞ্চারের পরীক্ষা মূলক উড্ডয়ন করা হয়েছে বা পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যেটি 1555 সালে সিবিও শহরের ঘটছিলো এবং তা  হাজার হাজার মানুষ  প্রত্যেক্ষ করেছে। কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোন শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়না।

এবার প্রাচীন কালে রকেটের গবেষণা সম্পর্কে কিছু জেনে নিই:
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, 16 তম শতাব্দীতে Johann Schmidlap (জোহান শিমিডল্যাপ) নামক একজন বৈজ্ঞানিক ফায়ার ওয়ার্ক (Bavarian fireworks) নির্মাতা এবং রকেট অগ্রগতিতে কাজ করেন। তিনি 1590-এর দশকে প্রথম অবস্থায় দু, স্তর বিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেন।

তারপর তিন স্তরের রকেটের প্রথম বিবরণটি (Johann Schmidlap-জোহান শিমিডল্যাপ কর্তৃক প্রবর্তিত)  পোলিশ আর্টিলারির বিশেষজ্ঞ কাজিমিরিজ সিমেনিওউইচজকে (Kazimierz Siemienowicz) দেওয়া হয়, যিনি 1650 সালের আর্টিস ম্যাগনাই আর্টিলেরিয়া পারস প্রাইমিয়াতে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেন। এভাবে আধুনিক রকেটের ক্রম (যৌথ বা একক ভাবে) বিকাশ চলছে।

সবশেষে: সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কনরাড হাস প্রথম ব্যক্তি যিনি আর্টিলারি এবং রকেটের ড্রয়িং, ডিজাইন এবং স্পেশিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে তার রকেট সম্মলিত ফিজিবিলিটি এবং মাস্টার প্লান (সিবিও মানুষক্রফট) পান্ডুলিপিটি এক সময় মানুষের অন্তরালে চলে যায়। তাছাড়া কনরাড হাস তাঁর পাণ্ডুলিপিতে কয়েকটি আকর্ষণীয় বাক্য লিখেছিলেন যাতে তিনি রকেটের সামরিক ব্যবহারের বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন।


সিবিও তে সচিত্র বর্ণনা সহ রকেটের specification

এছাড়াও তিনি এককভাবে রকেটের আধুনিক যে ধারণা দেন তা বর্তমান কালের রকেটের ডিজাইনের সাথে হুবাহু মিল  আছে, যা একটি বিস্ময়কর। এ থেকে বুঝা যায় তিনি চিন্তা চেতনায় বর্তমানের কালের মানুষদের প্রায় কাছাকাছি ছিলেন। তার সিবিও আবিস্কৃত না হলে আমরা হয়ত তার কথা কখনো জানতাম না। sibiu manuscript ই পৃথিবীর মাঝে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তার প্রতি রইল অশেষ শ্রদ্ধা।


তথ্য সূত্রঃ ইউকি সহ বিভিন্ন সাইট থেকে ভাষান্তর করা হয়েছে।
সূত্র:১

সূত্র:২


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:১৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×