মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। স্বপ্ন মানুষ কে বড় করে তোলে। আগেরকার দিনে মানুষেরা কল্পনায় আকাশের চাঁদ তারা ছুঁয়ে দেখতে। বর্তমানে চাঁদ তাঁরা কোন অলীক বিষয় নয়, চাঁদ তাঁরাকে পদনত করে মানুষ এখন গ্যালাক্সি, মিল্কওয়েতে হাত বাড়িয়েছে। সূর্যের গঠণ প্রণালি এবং এর ভিতরকার পদার্থের তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে জেনে গেছে। এখন কথা হলো, আগেরকার দিনে পৃথিবীর উল্লেখ সংখ্যক মানুষ চন্দ ও সূর্য কে অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা বা দেব দেবী হিসেবে পূজা করত। এখনো কিছু উপজাতিরা করে থাকে! তাদের এই পূজা, এই শ্রম এবং ধর্ম বিশ্বাস আধুনিক মানুষের কাছে বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়েছে অনেক আগে। প্রাচীনকালে মানুষরা চন্দ্র ও সূর্যের আরাধনা করে যে শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছে তার ষোল আনা পন্ড হয়েছে- এক কথায় বলা যায়। এখন অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন এখন যে ধর্মগুলো টিকে আছে তা কি ভবিষ্যৎে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? উত্তরে বলা যায়, ভবিষ্যৎে অনেক ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে শুধুমাত্র ঈশ্বরের কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান না করার কারণে বা না থাকার কারণে।। আর যদিওবা টিকে থাকে তাহলে সেগুলো লৌকিক আচার, কালচার বা মিথলজী হিসেবে টিকে থাকবে। যেমনটা টিকে আছে গ্রিক মিথলজি। আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রযুক্তি এই মিথলজি টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
আবার ধর্মগুরুরা বলে থাকেন, পৃথিবীতে ধর্মের আগমন একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীতে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে ধর্মের রং কোন না কোন ভাবে লেগে আছে। মানুষ কে উত্তেজিত করতে ধর্ম ভালো টনিক হিসেবে কাজ করে। সাধারণত দুই শ্রেণির মানুষ ধর্মের উত্তাপ ভোগ করে থাকে। প্রথম ক্যাটাগরিতে থাকে নির্যতিত শ্রেণি বা সংখ্যালঘু শ্রণি। বেশির ভাগ দেশে তারা নির্যাতিত শ্রেণি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। তবে দেশ বা অঞ্চলভেদে এই নির্যাতনের মাত্রার তারতম্য ঘটে। দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে থাকে সুবিধাভোগী শ্রেণী। এদের কে সংখ্যাগুরু হিসিবে চিহ্নিত করা হয়। এই শ্রেণির মানুষ অবাধে ধর্ম পালন করতে পারে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল বা রাষ্ট্রের কার্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে এবং বড় হয়ে জানতে পারে সে সংখ্যালঘু তখন তার ভিতরে একটা মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। ফলে তার ভিতর ধর্মীয় জাতি বিদ্বেষ তৈরি হয়। তবে এদের ভিতরে এই জাতি বিদ্বেষ প্রায়ই অবধমিত বা নিস্তেজ হয়ে থাকে, কারণ তাদের (সংখ্যালঘুদের) এই বিদ্বেষ সংখ্যাগুরুদের কারণে প্রকাশ করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারেনা। ফলে সংখ্যালঘুরা সংখ্যালঘুদের সহ-অবস্হান দাবি করে।
অপর দিকে, আরেকটি শিশু জন্মগ্রহণ করে বড় হয়ে যখন জানতে পারে সে সংখ্যাগুরু, তখন সে বুঝতে শিখে সংখ্যালঘুদের উপর তার শ্রেষ্ঠতা প্রকাশ করা সুযোগ আছে। তাই সে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে রাষ্ট্রীয় আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে তা পাড়েনা। আর যদি কোন কারণে রাষ্ট এই শ্রেষ্ঠতা প্রকাশের সুযোগ করে দেয় তাহলে ধর্মকামী শ্রেণিদের মধ্যে একটি উগ্রবাদী শ্রেণির উদ্ভব হয়। তারা সংখ্যালঘু নিধনে জাপিয়ে পড়ে। ফলে পৃথিবী সংখ্যালঘুদের জন্য দিনেদিনে অনিরাপদ জায়গা হয়ে উঠছে।
মানুষ না দেখে যা বিশ্বাস করে তাই ধর্ম। ধর্ম ছাড়া পৃথিবী কল্পণা করা অসম্ভব। প্রত্যেক পদার্থের নিজস্ব এবং নির্দিষ্ট ধর্ম আছে। নাস্তিকরা বিশ্বাস করে সৃষ্টি কর্তা বলে কিছু নেই। নাস্তিকদের এই অবিশ্বাসও একটি ধর্ম। যদি কোন নাস্তিক দাবি করে আমাদের অন্তরে কোন ধর্ম নেই তাহলে সে নাস্তিক হওয়ার যোগ্য নয়। কারণ ধর্ম ছাড়া কোন আত্মা/রুহ স্বাভাবিক বিচরণ করতে পারেনা। যে এরুপ দাবি করবে তার কাউন্সিলিং করা দরকার। অথবা সে অস্বাভাবিক অবস্হায় বিরাজ করছে।
পরিশেষে, পৃথিবীতে ধর্ম টিকে থাকুক। কারণ ধর্মকামীরা ধর্ম কে মাঝেমধ্যে খারাপ উদ্দেশ্যে কিংবা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করলেও ধর্ম শান্তির বার্তা বহন করে। আসুন ধর্মের শান্তির পয়গাম গ্রহণ করি, এবং উগ্রবাদীদের পরিহার করে পৃথিবীকে সকল মানুষের জন্য বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলি।
ছবি: নেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:০১