somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউএফও এবং কিছু রহস্য (সম্পূর্ণ)

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ইউএফও


ইউএফও বা “আন-আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অব্জেক্ট” শব্দ দুটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। ইউএফও হচ্ছে এমন একটি আকাশ যান যেটা মানুষের তৈরি নয়, সচরাচর দেখা যায় না এবং সনাক্ত করা যায় নি। ধরা হয়ে থাকে ভিন গ্রহের প্রাণীরা প্রায়ই আমাদের পৃথিবীতে এইসব ইউএফও –তে চেপে আসে।
আমরা ছোট বেলা থেকেই এই সকল ইউএফও-র গল্প শুনে আসছি, ইউএফও দেখতে অনেকটা চাকতির মত। পৃথিবীর অনেক জায়গায়, বিশেষ করে আমেরিকাতে এই ইউএফও-র বেশি করে দেখতে পাওয়ার কথা শোনা যায়। একটু ইন্টারনেট ঘাটলেই হাজার হাজার ইউএফও –র ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায়। বেশির ভাগ ছবিই সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে তোলা বা ভিডিও করা। এবং এই সকল ছবি এবং ভিডিও গুলোতে সাধারণত যেটা দেখা যায়, সেটা হচ্ছে পিরিচ এর গোলাকার একটা চাকতি আকাশে উড়ছে, পৃথিবীর অনেক গণ মাধ্যমেও এই ইউএফও দেখার খবর পাওয়া যায়। সুতুরাং যে সিদ্ধান্তে আসা যায় সেটা হচ্ছে, চাকতি আকৃতির কোন কিছু অবশ্যই প্রায়ই আকাশে উড়ে বেরায় এবং অসংখ্য মানুষ ইতিমোধ্যে তা দেখেছে এবং প্রমাণ স্বরূপ তার ছবি এবং ভিডিও রয়েছে।

ইউএফও দেখা নিয়ে একটি টিভি রিপোর্ট এবং ইউএফও-র ভিডিও

বেশির ভাগ ইউএফও দেখার রিপোর্ট আমেরিকাতেই পাওয়া যায়, এছারা কিছু রিপোর্ট রাশিয়াতে ও ইউরোপে এবং চায়না ও জাপান থেকে ইউএফও দেখার একটি করে অফিসিয়াল রিপোর্ট পাওয়া গেছে। যদিও এইসব ইউএফও সংক্রান্ত রিপোর্ট করার জন্য আন্তর্যাতিক কোন সংস্থা নেই, তবুও আমেরিকাতে নারকাপ (NARCAP ) নামে একটি জাতীয় সংস্থা আছে যারা এইসকল বিষয়ে তদন্ত করে থাকে। এছাড়া আমরা ইন্টারনেট এ অসংখ্য ওয়েবসাইট দেখতে পাই যেখানে সারা পৃথিবী থেকেই ইউএফও দেখার খবর পাওয়া যায়, এমনকি সেখানেও আমেরিকা থেকে পাওয়া রিপোর্ট এর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
এখন একটা প্রশ্ন হতে পারে এই ইউএফও শুধু মাত্র আমেরিকাতেই বেশি দেখা যায় কেন?

এরিয়া ৫১ (Area 51)


এরিয়া ৫১ পশ্চিম আমেরিকাত নাভাডাতে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাটি। এই এরিয়া ৫১ এর আসেপাশে প্রচুর ইউএফও দেখার খবর পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়ে থাকে এটি পৃথিবীর অন্যতম একটি সুরক্ষিত এলাকা। এর ভেতরে কি হয়ে থাকে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষ নিশ্চিত ভাবে তেমন কিছুই জানে না, এমনকি আমেরিকাও এরিয়া ৫১ এর উপস্থিতি বরাবর অস্বীকার করে আসছে। এরিয়া ৫১ এর ভেতর ঢোকার চেষ্টা সম্পূর্ণ বৃথা, এর গেটের সীমানা অতিক্রম করার সাথে সাথেই গুলি চালানো হয়। এমনকি এরিয়া ৫১ এর উপর দিয়ে কোন প্রকার আকাশ যান চলাচলও সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। গুগল আরথ এর স্যাটালাইট ইমেজ এ এরিয়া ৫১ এর বিভিন্ন স্থান ঘোলা করে দেওয়া আছে। শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক সামরিক লোকই এরিয়া ৫১ এ প্রবেশ করতে পারে। এটা পুরোপরি পরিস্কার যে মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই চায়না ভেতরে কি হচ্ছে তা সাধারণ মানুষ জানতে পারুক। এরিয়া ৫১ এর স্যাটালাইট ইমেজ থেকে যতটুকু দেখতে পারা যায় তা হচ্ছে বড় বড় হ্যাঙ্গার, মিলিটারি ফ্যাসিলিটি, বিশাল রানওয়ে। এরিয়া ৫১ এ পৃথিবীর সর্বোচ্চ ও সর্বাধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৮০ সালে বব লাযার (Bob Lazar) নামক একজন বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম এরিয়া ৫১ সম্পর্কে গণ মাধ্যমে মুখ খুলেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি এরিয়া ৫১ এর ভেতর ইউএফও তৈরির বিষয়ে কাজ করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মার্কিন সরকার একটি ভিন গ্রহের ইউএফও’র উপর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করছে। বব লাযার এর গণ মাধ্যমে এসকল তথ্য প্রকাশ করার পর মার্কিন সরকার এরিয়া ৫১ এ তার কাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করে, কিন্তু এরিয়া ৫১ এর ফোন বুক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের নামের তালিকায় তার নাম পাওয়া যায় এবং তার আইডি কার্ড ও সেই প্রমাণ দেয়।
এরিয়া ৫১ এর আকাশে প্রায়ই ইউএফও দেখা যায়, এবং এর আশেপাশের লোজ জনও এর সত্যতা স্বীকার করেন এবং ইউএফও দেখতে পাওয়ার ঘটনা বলতে পারেন। যদি এরিয়া ৫১ একটি সাধারণ সামরিক ঘাটিই হত তবে সেখানে এত নিরাপত্তা কেন? এরিয়া ৫১ এর সাথে বাইরের বিশ্বের কোন যোগাযোগ নেই কেন এবং এর অস্তিত্ব কেন সবসমত অস্বীকার করা হয়ে থাকে, যেখানে এর প্রমাণ সবসময় পাওয়া যায়, আর কেনই বা এরিয়া ৫১ এর আকাশে এত পরিমাণে প্রায় প্রতিনিয়ত ইউএফও দেখা যায়?

ম্যান ইন ব্ল্যাক (Men in Black)

আমরা অনেকেই ম্যান ইন ব্ল্যাক মুভি গুলো দেখেছি, হয়তো ম্যান ইন ব্ল্যাক সবার কাছে কোন সায়েন্স ফিকশান মুভির কাল্পনিক চরিত্র ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। কিন্তু আসলে কি তাই? ধরা হয়ে থাকে ম্যান ইন ব্ল্যাক আমেরিকার একটি গোপন সংস্থ্যা, যা সরাসরি ইউএফও সংক্রান্ত এবং বহির্জাগতিক বিষয় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সাধারণত যারা ইউএফও নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশি মাতামাত করছে বা লেখা লেখি করেছে তাদেরই ম্যান ইন ব্ল্যাক দেখা দিয়েছেবিল মোর , একজন ইউএফওলোজিস্ট, তিনি ম্যান ইন ব্ল্যাক দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হওয়ার দাবি করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি যখন রস ওয়েল এর ইউএফও ঘটনা নিয়ে একটি গুরুতবপূর্ণ তথ্য তার ওয়েবসাইট এ আপলোড করেন, ঠিক তার ২ ঘন্টা পরে সম্পূর্ণ কালো স্যুট পরিহিত ২ জন লোক তার বাসায় আসে এবং তাকে সেই তথ্য গুলো মুছে ফেলার জন্য হুমকি দেয়। এবং যতক্ষন না বিল মোর সেই তথ্যগুলো মুছে ফেলেন ততক্ষণ তারা সেইখানে অবস্থান করে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে তারা বিল মোর এর সোসাল সিক্যুরিটি নাম্বার থেকে শুরু করে তার ডেবিট কার্ড এর সর্বশেষ খরচ পর্যন্ত বলে দেয়। এ থেকে অন্তত এইটা স্পষ্ট যে তারা সরকারি কোন সংস্থার লোক। কিন্তু সরকার যদি চাইত যে কোন যায়গা থেকেই এইসব তথ্য মুছে দিতে পারত। বিল মোর বলেন যে, “তারা চাইলে যে কোন জায়গা থেকেই আমার তথ্য গুলো মুছে দিতে পারত, কিন্তু তারা আমাকে বুঝাতে চেয়েছে যে, এই সকল বিষয় নিয়ে আমার ঘাটাঘাটি তাদের পছন্দ হচ্ছে না”। শুধু বিল মোর নয়, এরকম অসংখ্য ইউএফওলোজিস্ট যারা সত্যের খুব কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল তারা ম্যান ইন ব্ল্যাক এর হুমকির স্বীকার হয়েছে।
ধারণা করা হয়ে থাকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমতার বাইরে আরো ২৩ টার মত সংস্থা আছে যার ব্যপারে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এর ও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই এবং এই সকল সংস্থার অর্থায়ন হয় মিলিটারির ব্ল্যাক বাজেট থেকে। এ সকল সংস্থা অন্তরালে কাজ করে যায় এবং ম্যান ইন ব্ল্যাক সে রকম সংস্থারই একটি।

রসওয়েলের ঘটনা (The Roswell Incident)

ইউএফওর ইতিহাসে সবচেয়ে সারা জাগানো যে ঘটনাটি আছে সেটি হচ্ছে, রসওয়েলের ঘটনা । রসওয়েল নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত। ১৯৪৭ সালের জুন অথবা জুলাই মাসে রসওয়েলের আকাশ থেকে ইউএফওর মত একটি বস্তু মাটিতে বিদ্ধস্ত হয়। সেইদিন রসওয়েল আর্মি এয়ার ফিল্ড সেই ধ্বংসাবশেষ অদ্ধার করে এবং পরের দিন একটি প্রেস রিলিস এ বলে যে তারা মাটি থেকে চাকতি আকারের একটি বস্তুর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে। এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সরকার থেকে এই খবর নাকোচ করে দেয়া হয় এবং বলা হয় সেটা শুধুমাত্র একটা আবহাওয়া পূর্ভাবাস দানকারী একটা বেলুন এর ধ্বংসাবশেষ ছিল। কিন্তু সেইদিন এর ছবি, খবর এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা সেটাকে ইউএফও বলে আখ্যায়িত করে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, সেই ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করতে যাওয়া সৈন্যদের এবং তারে পরিবারের কাওকে রসওয়েলে আর দেখা যায়নি। এ থেকে এইটুকু সম্পূর্ণ স্পষ্ট যে, সরকার কোন ভাবেই মানুষকে সেইদিনের প্রকৃত সত্যটা জানতে দিতে চায় না।
ইউএফও বা ইউএফওর মত বস্তু আকাশে যে প্রায়ই দেখা যায় এর অসংক্য প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন সরকার কেন সবসময় এই সব বিষয় নিয়ে চেপে যায়? এরিয়া ৫১ এর ভেতর কি হয়? ম্যান ইন ব্ল্যাক আসলে কারা? সব প্রশ্নের সোজা উত্তর, রহস্য। এই সকল রহস্য হয়তো কোনদিন সাধারণ মানুষের সামনে উন্মোচিত হবে। বহির্জাগতিক প্রানী বা ইউএফও যাই আসুক না কেন, আশা করি তা যেন মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনুক।

http://www.shadmansakib.net
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:০৪
২৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×