somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প :ভূতের সাথে বসবাস

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বাস করুন আমার বাসায় একটা ভূত আছে
ভূতটা আমাকে সারাক্ষণ জ্বালাতন করে।
অবশ্য আমাকে অনেক কাজে সাহায্য ও করে।
ভূতের সাথে আমার পরিচয় হয় আজ থেকে এক বছর আগে
এই দিনে।দিনটা আমার জন্য সুখের না দুঃখের সেটা এখন ও জানি না।
আমরা তিন বন্ধু।আমি,সিন্টু ও পল্টু
একদিন আড্ডা মারছিলাম আমাদের বাসার পাসের মাঠে
বাদাম খাচ্ছিলাম,আর বেদম গুল মারছিলাম
সিন্টু দাবি করল ওর পিসেমশাই নাকি ভূত দেখছে
এমনকি প্রাণ নিতে যাচ্ছিল
কোনমতে ভূতের হাত থেকে বেঁচেছে
আমার রাগ উঠল
ও কি মনে করেছে????
ও একা গুল মারতে পারে????
ওর যদি পিসেমশাই ভূত দেখে তাহলে আমার মেসোমশাই ও ভূত দেখছে
আমি বলে বসলাম,''আমার মেসোমশাই ও ভূত দেখছে।এমন কি কুস্তি ও লড়ছে।''
ও বলে বসল ওর মামা ভূতের সাথে মারামারি করছে
আমি বললাম আমার কাকা ভূতকে চাকর বানিয়েছে
এইভাবে আমরা আমাদের চোদ্দপুরুষের প্রত্যেককে ভূত দেখিয়ে ছাড়লাম
পল্টু আমাদের কথা হা করে শুনছিল।ও ধুম করে বলে বসল চল আমরা ভূত দেখে আসি।
আমরা মনে করলাম ও মজা করছেআমরা মজা করে বললাম'' তোকে দেখলে আর ভূত দেখা লাগা নাকি??তুই ত একটা জলজ্যান্ত ভূত''
ও চোখ বড় বড় করে বলল ''আমি সিরিয়াসX(''
আমি বললাম ''ভূত কোথায় দেখবি?''
ও বলল ওদের গ্রামের বাড়ি তে এক জমিদার বাড়ি আছে
ওই জমিদার বাড়ির জমিদার নাকি হেব্বি ভাল মানুষ ছিল
ওই জমিদারের সৎ মা নাকি সম্পতির লোভে মেরে ফেলছে
ওনারই আত্মা নাকি এখন ওই বাড়ি তে দেখতে পাওয়া যাই।
এবার সিন্টু হা করে শুনছিল।
সিন্টু এবার বলল ''চল মামা ,কলেজ বন্ধে ঘুরে আসি।
ভূত ও দেখা হবে।চল মামা রুদ্র ভূত দেখে আসি।''
আমাকে উদ্দেশ্য করে শেষ কথাটা বলল।
আমি ভাই বাঙালির বাড়ির ছেলে
ডাল ভাত খাই
আর পেট খারাপ হলে পেঁপে ভর্তা খাই
আমি ভাই অন্যকেই ভূত দেখাতে পারি
নিজে পারি না
আমি বললাম'' নারে ভাই পারব না।''
পল্টু বলল''যা যা আমরা ভীতুর ডিমদের নিব না।যা মায়ের আঁচলের তলায় লুকা গে ।আর বসে বসে ফিডারে দুধ খা গে যা।''
ওর কথা শুনে মাথার চান্দি হয়ে গেল গরম।একদম আমার সাহসের উপর প্রশ্ন।
আমি সিংহনাদ দিয়ে বললাম''ফিডারে দুধ তুই খা।আমি ত যামুই ,উল্টা ভূতরে ধরে কষে থাপ্পড় মারব।''
সিন্টু বলল''তাহলে এবারের অভিযান তাহলে ভূতের বাড়ি।''
রাত ১০ টা
ঝিকঝিক করে ট্রেন যাচ্ছে ।
যাচ্ছি হারামজাদা পল্টুর গ্রামের বাড়ি
আমার ভয়ে দুইদিন টয়লেট হচ্ছে না।মাথা গরমে তখন বলে ফেললাম যামু।এখন সত্যি সত্যি যেতে হচ্ছে,আমি গায়ে মাদুল,তাবিজ ভরে ফেললাম যাতে ভূত ধারে কাছে ও না আসে।
ওইদিকে হারামজাদা পল্টু কোথা থেকে একটা বই বের করেছে,বইটার নাম হল সত্যিকারের ভূতের বাড়ির ১০০টি ঘটনা।
ও গল্প বলছে আর সিন্টু হা করে শুনছে,আর আমার হৃদকম্প হচ্ছে
ভয় হচ্ছে যদি সত্যি সত্যি ভূত আসে!!!!!!!!!!!!!
:( :(

রাতে খুলনায় গেলাম ।
ওখান থেকে গেলাম পল্টুদের গ্রামের বাড়ি।
পল্টুদের গ্রামের বাড়িতে আছে ওর এক পিসিমা,এক কাকা থাকে।
আমাদের দেখে খুব খুশি হল।
আমাদের বেশ সমারোহে খাওয়াল।
রূপসা নদীর রুই,গলদা চিংড়ি,খাসির মাংস আর খাবার শেষে পায়েস।ভূতের সাথে দেখা হলে আমার আর কোনদিন খাওয়া হবে কিনা জানি না,তাই একদম চেটেপুটে খেয়ে নিয়ে একদম একটা ফাস্ট কেলাস একটা ঘুম দিলাম।
তারপরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রামটা দেখলাম,বেশ সুন্দর গ্রাম,পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আর সবুজময়।সিন্টু একবার গোবর পড়ে গেয়েছিল।গোবর থেকে উঠার পর ওকে দেখতে বেশ সুন্দরই লাগছিল। B-)
বাসায় এসে দেখি খাওয়াদায়ার বিশাল সমরোহ।
খাচ্ছি আর মন ক্রমশ ভাল হচ্ছে।যাক মরার আগে ভাল মত খাওয়া যাচ্ছে।
সেইদিন রাত টা ঘোর অমাবস্যা ছিল।ওই রাত ইচ্ছা করে ঠিক করেছি।রাত ১০ টায় ভূতের বাড়ি টে গেলাম,
বাড়ি নয় প্রাসাদ।ওদের গ্রামের থেকে একটু দূরে।
আমরা একটা বসার জন্য মাদুর,এক প্যাকেট তাস,দুই ফ্লাস্ক চা,এক বাক্স রুটি আর খাসির মাংস নিয়ে গেলাম।
আমরা বসে প্রাসাদে বসে মাদুর পেতে জমিয়ে তাস খেলতে লাগলাম।ভূতর কোন পাত্তাই নেই।আমরা খেয়েই যাচ্ছি আর খেলেই যাচ্ছি।
হঠাৎ এক আওয়াজ শুনলাম''বাবুরা কোথাকার?????''
প্রথমে ত আমরা আঁতকে উঠলাম।
সবাই সবাই কে জড়াজড়ি করে জড়িয়ে ধরলাম।
তারপর দেখলাম ধুতি পাঞ্জাবি পরা এক সুদশন লোক।
আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
একমুখ হেসে বললাম''ঢাকা থেকে।"
লোকটা বলল'ও আচ্ছা।কি করা হচ্ছে???"'
বললাম তাস খেলছি।
উনি বলল" আমাকে নিবেন নাকি????''
আমরা সাগ্রহে নিলাম।উনি ভালই খেলতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ খেলার পর উনি বলল''দেশের খবর কি????প্রাদেশিক আইন কি পাস হইছে???""
ব্যাটায় কি কয়!!!বললাম"কোন আইন???''
লোকটা বলল"আরে বড়লাট সাহেব বলল না একটা প্রাদেশিক আইন পাস করবেন???"
এইবার আমার মনে সন্দেহ হল।খেলার উত্তেজনায় বুঝতেই পারি নি এতরাতে লোকটা এখানে কি করে?????
ওই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম"এই খানে কি ভূত আছে ????''
উনি এইবার গম্ভীর মুখে বলল"আছে।"
"দেখছেন????"
"হুম,দেকছি।কারন আমি সেই ভূত"
আমার নিশ্চিত হাট নেই।থাকলে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক হত।
আমরা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ সিন্টু বলল"লোকটার মাথা উল্টা ।"
উনি দাঁত দিয়ে জিভ কেটে বলল"ভুল হয়ে গেছে।তারপর হাত দিয়ে মাথাটা সোজা করে নিলে।"
আমরা তক্ষনাৎ দৌড়ে পালাতে গেলাম।দেখলাম দরজা পাচ্ছি না।
দেখলাম লোকটা পিছু পিছু আসছে।বলল,ভয় পাচ্ছেন কেন????
আমি অতি নিরীহ এবং অসহায়।আমার মত অসহায় লোককে দেখে ভয় পাবেন না।''
পল্টু সাহস করে বলল"আপনি অসহায় কেন???আমরা শুনেছি ভূতরা শক্তিশালী হই,ভূতরা বলে অনেক কিছু করতে পারে।
লোকটা বলল''ছাই পারে।মরার পর বুঝেছি ভূতেরা কিছুই পারে না।''
এইবার সিন্টু সাহস করে ভূত কে বলে"ভূতের সাথে সেলফি তোলার সখ আমার অনেকদিন।তুলতে পারি???
লোকটা সাগ্রহে বলল"ফটো তুলবে????"আসো,তুলি,
তারপর সিন্টু মুখ চোখ বাকিয়ে একটা সেলফি তুলল।
তারপর লোকটা বলল"এর আগে একজন এই রকম ছবি তুলে আমাকে বলছিল ফেইসবুক নামের একটা বইতে ছাপবে,
বই টা আমি খুঁজে পাই নি।''
তারপর উনি হঠাৎ কেঁদে উঠলেন।বললেন"তোমরা জান আমি গৃহহিন হয়ে পড়ব।
''কেন????''
''এইখানে একটা কলকারখানা খুলবে''
লোকটা কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগল।
বললাম আপনি কি আর থাকতে পারবেন না?????
''না,আমাকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।
আমি বললাম''কোন উপায় নেই????
''আছে,কেউ যদি আমাকে স্বেচ্ছায় নিয়ে যাই তাহলে সম্ভব।
আমি বললাম''আমাদের সাথে চলুন।"

লোকটা বলল''আমাকে নিবে???''
সিন্টু বলল''কেন নেব না?আপনাকে থাকতে জায়গা দিতে হবে না।
খেতে ও দিতে হবে না।শুধু নিতে হবে।
লোকটা খুশিতে ডগমগ।
আমরা সবাই ঠিক করতে লাগলাম কি নাম ডাকব
তারপর পল্টু বলল"ভুতো মামা।''
তাই ঠিক করলাম।
আমরা সারারাত গল্প করে সকালে ঢাকায় রওনা দিলাম
বাসায় গিয়ে ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে রাতে উঠে দেখি ভুতো মামা তলিতল্পা নিয়ে হাজির।
হেসে বলল"চলে এলাম।"

পুনশ্চঃসারা জীবন শুনে এলাম ভূত শুধু ভয়ংকর হই
ভূত খালি ভয়ংকর হই
ভূত বোকা হই,চালাক হই,মদনা হই
আবার বন্ধু ও হই







০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×