somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে---ড. আবুল হাসনাত

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবদেহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ দ্বারা তৈরি যা নিয়মিত এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনের মাধ্যমে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আকার এবং কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কোন একটি কোষ অনিয়মিতভাবে বিভাজন শুরু করলে শরীরে সৃষ্টি হয় টিউমারের যাকে আমরা ক্যান্সার বলে থাকি। ক্ষতিকর টিউমার বা ক্যান্সার শুধু স্থানীয়ভাবেই বিস্তার লাভ করে না উপরন্তু রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে যাকে বলা হয় 'মেটাস্টেসিস'। কারো মেটাস্টেসিস হলে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা কঠিন। তবে কিছু টিউমার নির্দোষ এবং বিস্তার লাভ করে না, ফলে এদেরকে প্রতিরোধ করা সহজ।

উন্নতদেশে এবং বাংলাদেশে ক্যান্সার হলো দ্বিতীয় প্রধান রোগ; হূদরোগের পরই এর স্থান। সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার হয় স্তন, ফুসফুস, জরায়ু, ত্বক, মলান্ত্র ও মলাশয়ে। এছাড়া লিউকেমিয়া ও যকৃতের ক্যান্সারও কম নয়। কিভাবে ক্যান্সার হয় তা এখনও সঠিকভাবে উন্মোচিত হয়নি। তবে কোষের জিনে কোন প্রকার ত্রুটি বা মিউটেশন হলেই কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজন শুরু করে। জিনের এ মিউটেশনের জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান দায়ী। কয়লা ও কয়লাজাত দ্রব্য, আর্সেনিক, কীটনাশক দ্রব্য, ক্রোমিয়াম, নিকেল, হরমোন, তেজস্ক্রিয়তা, ধূমপান, তামাক সেবন, মদ্যপান, বিকৃত যৌন আচরণ, বায়ু ও পানিদূষণ, অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার, ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব, ভাইরাস ইত্যাদি ক্যান্সারের জন্য দায়ী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলোকে এড়িয়ে চলা সম্ভব। ক্যান্সারের নিম্নলিখিত সতর্ক সংকেত বা বিপদ সংকেত দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। যেমন- ফুসফুসে কাশি বা ভাঙ্গা কণ্ঠস্বর, এমন কোন ক্ষত যা সহজে শুকাচ্ছে না, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, স্তনে বা অন্য কোথাও পিণ্ডাকার স্ফীতি, গিলতে অসুবিধা বা হজমের গন্ডগোল, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন ইত্যাদি।

খাদ্যাভ্যাস বা জীবন-যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে/প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আঁঁশ জাতীয় খাবার অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ভিটামিন এ, সি, ই, বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খাদ্য পাকস্থলি, মলান্ত্র, জরায়ু, পিত্তথলি, যকৃত, স্তন এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যেসব সবজির আহার্য অংশটি বীজ বা মূল -যেমন শুকনো মটর, মটরশুটি, শস্যজাত খাদ্য, আলু— এ সমস্ত খাবারে এমন উপাদান থাকে যা টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায় হলুদ ফল ও শাকসবজিতে এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজিতে। ভিটামিন 'এ' ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। বাঁধাকপি, ফুলকপি মলান্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। ভিটামিন সি ও ই এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি আছে আমলকি, পেয়ারা, জাম্বুরা, কমলা, লেবু ও কাঁচামরিচে। ভিটামিন 'ই' আছে সব্জির তেল, শস্যজাত খাদ্য এবং ডিমে।

অতিরিক্ত চর্বি খেলে হতে পারে স্তন ও মলান্ত্রের ক্যান্সার। লাল গোস্ত, ঘি, মাখন, দুধ, আইসক্রিম পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। যারা তামাক ও পান-সুপারি চিবান এবং জর্দা ও খৈনী খাওয়া যাদের অভ্যাস, তাদের মুখগহ্বরের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতএব খাবার সম্পর্কে একটু সচেতনতাই আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসী এন্ড ফার্মাকোলজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেওয়া]
Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×