somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসরাইল ও সৌদি সরকারের বন্ধুত্ব বনাম মুসলমান বিশ্বের সাথে কপটতা!!

২১ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, মুসলমানদের প্রতি শত্রুতার ক্ষেত্রে ইহুদিরাই সবচেয়ে কঠোর। অথচ প্রকাশ্য কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও সৌদি আরব ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে।


এ বিষয়টি এখন আর তেমন গোপন নয়। ঐতিহাসিক নানা তথ্য-সূত্র থেকে জানা যায় অবৈধ ইহুদিবাদী ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টিতে আলে সউদ রাজবংশের ব্যাপক সহযোগিতা ও সম্মতি ছিল। অনেক ঐতিহাসিক বলেন, সুদূর অতীতে আলে সউদ বংশটি ছিল জাতিতে ইহুদি। তাই ইহুদিবাদীদের প্রতি তাদের নাড়ী ও রক্তের টান এখনও রয়ে গেছে। তবে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে সউদি-ইসরাইল সহযোগিতা বহু গুণ বেড়ে গেছে। আজ আমরা এ বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরব।

ইরানের পরমাণু শক্তি অর্জনের বিরোধী সাবেক সউদি বাদশাহ আবদুল্লাহ ইসলামী ইরানে হামলা চালাতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, সাপের মাথা এখনই কেটে দেয়া উচিত। ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৩ সালের পয়লা অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, 'পরমাণু অস্ত্র-সজ্জিত ইরানের বিপদ এবং এ অঞ্চলে অন্যান্য হুমকির উদ্ভব আমাদের অনেক আরব প্রতিবেশীকে শেষ পর্যন্ত এটা বলতে বাধ্য করেছে যে, ইসরাইল তাদের শত্রু নয়। ফলে ঐতিহাসিক অনেক শত্রুতার অবসান ঘটিয়ে নতুন সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও আশা গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।'

নেতানিয়াহুসহ ইসরাইলি নেতারা প্রায়ই ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার হুমকি দিয়েছেন। আর ইরানের ওপর সম্ভাব্য বিমান হামলায় রিয়াদ সৌদি আকাশ বা ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে দিতে রাজি বলে বেশ কয়েকবার খবর প্রকাশিত হয়েছে।

'কনসোর্টিয়াম নিউজ' নামের একটি সংবাদ মাধ্যমে বিখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক রবার্ট প্যাররি মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রগুলোর তথ্যের আলোকে জানিয়েছেন, সৌদি সরকার অন্য একটি আরব দেশের মাধ্যমে ইহুদিবাদী ইসরাইলকে গত আড়াই বছরে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার দিয়েছে পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি নির্মাণের কাজে।
রিয়াদ ও তেলআবিবের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের সর্বসাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হল, ইয়েমেনে সৌদি বিমান হামলায় ইসরাইল জঙ্গি বিমানের অংশগ্রহণের খবর। ইসরাইলি সংবাদ মাধ্যমগুলোই এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছে।

এ ছাড়াও ফিলিস্তিনের আলমানার সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন শুরুর প্রথম থেকেই ইহুদিবাদী ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য নিয়ে ইয়েমেনের শহরগুলোতে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি জঙ্গি বিমান।

নানা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে আলমানার লিখেছে, ‘ইহুদিবাদী ইসরাইলের গোয়েন্দা বিমানগুলো ও দ্রুত সতর্কীকরণ সিস্টেম ইয়েমেনে সৌদি হামলা শুরুর পর থেকেই সৌদি উপকূলগুলোতে অবস্থান করছে। গোপন চুক্তির ভিত্তিতে গত কয়েক দশক ধরেই ইসরাইল ও সৌদি রাজসরকারের মধ্যে গোপন সহযোগিতা রয়েছে এবং ওই চুক্তির ভিত্তিতে সৌদি আরবের উপকূলগুলো ইসরাইলের জন্য খোলা রয়েছে। ফলে ইসরাইলি জঙ্গি বিমানগুলো যখনই ইচ্ছা সৌদি আরবের উপকূলীয় আকাশে প্রবেশ করতে পারে।’

আর এইসব তথ্য থেকেই এটা স্পষ্ট যে কেনো গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সঙ্গে ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের এতো মিল দেখা যায়।

ইহুদিবাদী ইসরাইল ১৯৬৭ সাল থেকে সৌদি আরবের দু'টি দ্বীপ দখল করে রাখা সত্ত্বেও রিয়াদ এ ব্যাপারে নীরবতা বজায় রেখেছে।


বিশ্লেষকদের অনেকেই রিয়াদের এই নীরবতাকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি সৌদি রাজ-সরকারের গভীর বন্ধুত্বের নিদর্শন বলে মনে করছেন।

'তিরান' ও 'সানাফির' নামের এই দু'টি দ্বীপ লোহিত সাগরের এক প্রান্তে এবং আকাবা উপসাগরের মুখে অবস্থিত। ইহুদিবাদী ইসরাইল কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই দুটি দ্বীপের মধ্যে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে।

এ দু'টি দ্বীপের আয়তন ১১৩ বর্গ কিলোমিটার। তিরানের আয়তন প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার। আর সানাফিরের আয়তন ৩৩ বর্গ কিলোমিটার। আকাবা বন্দরের কাছাকাছি ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর ইলিয়াটে মাল আনা নেয়া ও গোটা ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য এই দুই দ্বীপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সৌদি সরকার এই দ্বীপ দু'টিকে প্রবাল ও পাথুরে দ্বীপ হিসেবে অগুরুত্বপূর্ণ বলে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করলেও এটা স্পষ্ট যে সেগুলো কৌশলগত দিক থেকে এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে এ দুই দ্বীপ যার দখলে থাকবে তার পক্ষে গোটা আকাবা উপসাগর নিয়ন্ত্রণ করা হবে খুবই সহজ।

বিশ্লেষকদের মতে তিরান ও সানাফির দ্বীপ লোহিত সাগরের অন্য প্রান্তে অবস্থিত হানিশ দ্বীপপুঞ্জের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। হানিশ দ্বীপপুঞ্জ সৌদি সরকার দখল করে রাখলেও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তা ইয়েমেনেরই প্রাপ্য। ১৯৯৫ সালে এ দ্বীপের মালিকানা নিয়ে সংঘাত ঘটেছিল। বিস্ময়ের বিষয় হলো এ ধরনের ছোটখাটো দ্বীপের জন্য সৌদি সরকার যুদ্ধ করতে পারলেও একই ধরনের দ্বীপের ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্বের ব্যাপারে নিরব রয়েছে এই রাজ-সরকার!

১৯৬৭ সালে কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলের ৬ দিনের যুদ্ধের সময় তিরান ও সানাফির দখল করেছিল ইসরাইল। ওই যুদ্ধের প্রাক্কালে তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল এই দ্বীপগুলোর নিয়ন্ত্রণ অস্থায়ীভাবে মিশরের কাছে ছেড়ে দিয়েছিলেন যাতে মিশর ইসরাইলি যুদ্ধ-জাহাজগুলোকে ইলিয়াট বন্দরের দিকে যেতে বাধা দিতে পারে। যুদ্ধ-বিরতির সময় রিয়াদ ও কায়রো উভয়ই এই দ্বীপগুলোর মালিকানার দাবি করে। কিন্তু ইসরাইল এই দুই আরব দেশের পক্ষ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়েই দ্বীপগুলো দখল করে নেয়।

মিশর ১৯৭৮ সালে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষর করে। সে সময় মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এই দুই দ্বীপের বিষয় শান্তি-চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন যে, সৌদি আরবই এই দুই দ্বীপের মালিক। সৌদি সরকার তখনও এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ রেখেছে এবং এখনও তার সেই নীরবতা বজায় রয়েছে।

গুগলের মানচিত্রে এখনও এ দুই দ্বীপকে সৌদি আরবের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বহু দেশের সরকারি মানচিত্রেও তিরান ও সানাফির দ্বীপ দু'টিকে স্পষ্টভাবে সৌদি-ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সৌদি সরকার এ ব্যাপারে কেনো ইসরাইলকে চ্যালেঞ্জ করছে না?

আসলে ইসরাইল তার বাণিজ্য জাহাজ ও রণতরীগুলোকে লোহিত সাগরে আনার জন্য এবং এ ধরনের জাহাজ চলাচল নিরাপদ রাখার জন্য তিরান ও সানাফির দ্বীপের মুখাপেক্ষী। ইসরাইলি আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখা ছাড়াও এ অঞ্চলে সামরিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্যও দ্বীপ দু'টির ওপর ইসরাইলি দখলদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি।

আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে তিরান ও সানাফির দ্বীপে জাতিসংঘের বহুজাতিক শান্তি রক্ষীও মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে। এই বাহিনী সব পক্ষের ওপর নজরদারি করছে বলে দাবি করা হলেও আসলে তিরান প্রণালীতে মার্কিন ও মিশরিয় সেনারা ইসরাইলের নৌ-পথকেই সুরক্ষা দিচ্ছে। সৌদি জনগণের অনেকেই এ ব্যাপারে এখনও কিছুই জানেন না।

উল্লেখ্য, পশ্চিমা সরকারগুলোও এ দুই দ্বীপের ব্যাপারে নিরব রয়েছে। অথচ আরব লিগ ও পারস্য উপসাগরীয় রাজা-বাদশাহদের শাসিত দেশগুলোর জোট জিসিসি পারস্য উপসাগরে আবু মুসাসহ আরো দু'টি ক্ষুদ্র দ্বীপের ওপর ইরানের মালিকানার বিরুদ্ধে প্রায়ই বক্তব্য রাখছে!

সৌদি সরকার ২০০২ সালে ভূমির বিনিময়ে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব দিয়েছিল তাতেও এ দুই দ্বীপের কথা উল্লেখ করেনি। লোহিত সাগরে ইহুদিবাদী ইসরাইলের অনুপ্রবেশের একমাত্র মাধ্যম এ দুই দ্বীপের ব্যাপারে সৌদি সরকার নীরব থাকলেও প্রায় একই আয়তনের হানিশ দ্বীপপুঞ্জের ব্যাপারে ইয়েমেনের সঙ্গে সৌদি সরকারের সংঘাতের বিষয়টি সত্যিই বিস্ময়কর ও দ্বিমুখী সৌদি নীতিরই জ্বলন্ত প্রমাণ।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×