somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ ‘মুহাম্মদ: আল্লাহর রাসুল (সা.)’

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে অসাধারণ চলচিত্র----------
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ইরানের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল চলচ্চিত্র ‘মুহাম্মদ: আল্লাহর রাসুল (সা.)’ দেখলাম।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া মুভিটি দেখলাম তেহরানের কৌরশ সিনেপ্লেক্সে। ইরানের সবচেয়ে বড় সিনেপ্লেক্স এটি। এখানে ১৪টি সিনেমা হল রয়েছে। আসন সংখ্যা ২৮০০টি।

বিরতিহীনভাবে চলা প্রায় তিন ঘণ্টার মুভিটি কখন যে শেষ হয়ে গেল টেরও পেলাম না! নিঃসন্দেহে এটা আমার জীবনে দেখা সেরা চলচ্চিত্র।

মুভিটির ঘটনাপ্রবাহ হযরত মুহাম্মদকে (সা.) কেন্দ্র করে আবর্তিত হলেও তার মুখমণ্ডল দেখানো হয়নি। এমনকি যে শিশুটি মুহাম্মদ (সা.) এর চরিত্রে অভিনয় করেছে তার নামও দেখানো হয়নি। ফলে এতদিন যেসব অপপ্রচার চলছিল তা মিথ্যা প্রমাণিত হল।

তবে, মুভিতে আবদুল মোত্তালিব, আবু তালিব, রাসূল সা. এর মাতা আমিনা, দুধমাতা হালিমা, আবু সুফিয়ান, আবু লাহাবসহ তৎকালীন নেতৃবৃন্দের চরিত্রে অভিনয়কারীদের দেখানো হয়েছে।

মুহাম্মাদ (সা) এর জীবনীভিত্তিক ট্রিলজি’র প্রথম পর্বে রাসূলের জন্ম-পূর্ববর্তী কিছু ঘটনা ছিল ফ্ল্যাশ-ব্যাকে। শৈশবেই সীমাবদ্ধ ছিল প্রথম পর্ব।

ছবির শুরুটা হয়- শোয়াবে আবু তালিব উপত্যকায় মুসলমানদের অবরুদ্ধ জীবনের দুঃখ-কষ্টের চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে। কুরাইশদের নির্যাতনমূলক চুক্তির ফলে মুসলমানরা নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে আবু তালিব উপত্যকায়। সে সময় বিবি খাদিজা বিভিন্নভাবে মুসলমানদের সহযোগিতা করেছেন। তবে মুভিতে হযরত খাদিজাকে দেখানো হয়নি।

শোয়াবে আবু তালিবের ঘটনাপ্রবাহ ২০ মিনিট দেখানো হলেও রাসূল (সা.) কে একবারও দেখানো হয়নি। এক পর্যায়ে সূরা ফিলে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহ দেখানো হয়। ইয়েমেনি বাদশাহ আবরাহার হস্তিবাহিনী নিয়ে মক্কায় আক্রমণ ও আবাবিল পাখির মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতিরোধ চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আবরাহা’র পতনের প্রায় দুইমাস পর রাসূলে খোদার জন্ম হয়। জন্মের সময়কার কিছু অলৌকিক ঘটনা, মুহাম্মদ সা. এর বিরুদ্ধে ইহুদিদের চক্রান্ত, তখনকার আরবে নারী শিশুকে জীবন্ত হত্যা, শিশুদের বলিদান, দাসপ্রথা, দুধমাতা হালিমার কাছে শিশু মুহাম্মদকে হস্তান্তর, আবার মা আমিনার কাছে ফিরে আসা, আমিনার মৃত্যু, আবদুল মোত্তালিবের মৃত্যু এবং রাসূলের শৈশবের কিছু মুজিজা তুলে ধরা হয়েছে।

মুভির শেষাংশে আবারো শোয়াবে আবু তালিবের ঘটনা দেখানো হয়েছে যেখানে দেখা যায়, মক্কার কুরাইশরা বনু হাশিম গোত্রের সঙ্গে যে নির্যাতনমূলক চুক্তি করেছিল সেই চুক্তির দলিল পোকায় খেয়ে ফেলে। ফলে চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং নির্বাসন থেকে মুসলমানরা মুক্তি পায়। মুভিটি শেষ হয়েছে একটি নাতে রাসূল দিয়ে।

ছবিটি না দেখেই যারা এতদিন সমালোচনা করেছেন, তারা যদি তা দেখেন তাহলে মাজিদ মাজিদিকে নিশ্চয়ই ধন্যবাদ দেবেন।
ইসলামী ইরান এর আগেও বিভিন্ন নবী-রাসূলগণের জীবনীর ওপর চলচ্চিত্র ও সিরিয়াল নির্মাণ করেছে। যেমন: হযরত ইউসুফ (আ.), হযরত মারিয়াম (আ.), হযরত সুলাইমান (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.), হযরত আইয়ুব (আ.) প্রভৃতি। কিন্তু মুহাম্মাদ (সা.) চলচ্চিত্রটির মতো এত চমৎকার ছবি ইরান কেন, গোটা মুসলিম বিশ্বে আর হয়নি।

এই মুভির মাধ্যমে মাজিদ মাজিদি পাশ্চাত্যে রাসূল (সা) এর অবমাননাকর ছায়াছবি ‘ফিতনা’, ‘ইনসেন্স অব মুসলিমস’ ও ডেনিশ কার্টুনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।

ইসলাম যে সন্ত্রাসী ধর্ম নয়, তা রাসূলের চারিত্রমাধুর্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমি মনে করি, এ ধরনের কাজ আরো বেশি বেশি হওয়া দরকার।

বর্তমান বিশ্বে এখন পর্যন্ত হযরত ঈসা (আ.) কে নিয়ে প্রায় ২৫০টি ফিল্ম, হযরত মুসা (আ.) কে নিয়ে প্রায় ১২০টি ফিল্ম এবং অন্যান্য নবী রাসূলদের নিয়ে প্রায় ৮০টি ফিল্ম এবং গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে প্রায় ৪০টির মতো ফিল্ম নির্মিত হয়েছে; অথচ সেখানে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) কে নিয়ে চলচ্চিত্রের সংখ্যা মাত্র দুটো! চলচ্চিত্রের মতো শক্তিশালী এ মাধ্যম আরো বেশি করে ব্যবহার করা উচিত।

মহানবীর জীবনীভিত্তিক প্রথম ছায়াছবি নির্মাণ করেছিলেন সিরিয়-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা আক্কাদ। ওই ছায়াছবির নাম ‘দ্য ম্যাসেজ’। ১৯৭৬ সালে তা মুক্তি পাওয়ার পর মুসলমান বিশ্বের কোনো কোনো মহল তার কঠোর সমালোচনা করেছিল।
সত্যি বলতে কী, সমালোচকদের কাজই হলো সমালোচনা করা। তারা ন্যায়-অন্যায় ও বিচারবুদ্ধির চেয়ে হিংসা ও পরশ্রীকাতরতাকে বেশি কাজে লাগায়। তারা ইসলাম অবমাননার জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখে না কিন্তু কেউ উপযুক্ত জবাব দিলে তারও সমালোচনা শুরু করেন! এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদের ক্ষতি করার পাশাপাশি ইসলামবিদ্বেষীদের উপকার করে।

যাই হোক, ইরানে প্রদর্শন শেষে মুভিটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করি। রাসূলের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য সাড়ে চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে ছবিটি নির্মাণের জন্য পরিচালক মাজিদ মাজিদি ও ইরান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
----আশরাফ রহমান

(সংগৃহীত)

আপনারা যারা মুভিটির সি ডি সংগ্রহ করতে চান তারা ধানমণ্ডি ৪ এ অবস্থিত ইরানীয়ান কালচার সেন্টার থেকে সিডিটি পাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০২
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×