আদালত নাকি সংসদ কে বেশি ক্ষমতাবান?? ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রায় দেখা যায় আদালতের সাথে সংসদ জড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো সংসদের তৈরি করা অনেক আইন আদালত বাতিল করে দেয়। সম্প্রতি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া রায় নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে।
কিছুদিন পূর্বে আদালতের রায়ে আমরা দেখেছি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করতে হয়েছে। অনেক দেশেই সংবিধানিক আদালত রয়েছে যাদের ক্ষমতা রয়েছে যারা সরাসরি সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারে। আমরা দেখেছি থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ার আদালত তাদের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে এবং তাদের সংসদও ভেঙ্গে দিয়েছিল। কিছুদিন পূর্বে অভিবাসী নিয়ে আমেরিকার মত দেশেও ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের আদেশ পর্যন্ত আদালত স্থগিত করে দেয়।
সংখ্যার বিচারে যদি আপনি আসেন তবে দেখা যায় আমাদের দেশে সংসদের ৩০০ জন সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এক্ষেত্রে সরকারে থাকা দলের কমপক্ষে ১৫১ টি আসন পেতে হয়। আবার সংবিধানের কোন আইন পরিবর্তন করতে অন্তত ২০০ জন সংসদের সমর্থন পাবার প্রয়োজন হয়।
তবে বিচার বিভাগ বা আদালত একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে দেশের সব নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচারের বাবস্থা করা হয়। এমনকি সংসদ ও সরকারের কোন সংস্থা দ্বারা ক্ষতির স্বীকার হলেও আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু প্রায় শোনা যায় সরকার নিজেদের পছন্দের লোককে বিচার বিভাগে নিয়োগদেয় এবং আদালতের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালায়। বাতিল হওয়া ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ বিচারপতিদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অর্থাৎ বিচারপতির রায় পছন্দ না হলেই যখন তখন বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চেয়েছিল তারা।
তবে আইনজীবী মনজিল মোর্সেদ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেছিলেন। রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
আদালতের রায় নিয়ে রাজনীতি করা বা নিজ নিজ যুক্তি উপস্থাপন করা আমাদের দেশের রাজনীতির একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যেমন সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করার রায়কে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছিল। আর এখন ষোড়শ সংশোধনী বাতিলকে বিএনপি অভিনন্দিত করছে। যখন যে রায় যাঁদের পক্ষে যায়, তাঁরা উল্লাস প্রকাশ করেন আর বিপক্ষে গেলে ক্ষুব্ধ হন।
বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল। তাঁদের কাছেও ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রত্যাশিত। আমাদের মনে রাখতে হবে, সর্বোচ্চ আদালত হচ্ছে সংবিধানের অভিভাবক। আদালতকে চ্যালেঞ্জ মানে সংবিধানকেই চ্যালেঞ্জ করা।