somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যৌথ-প্রযোজনা ছবিতে যৌথ প্রতারণার সুযোগ!!

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমানে বাংলা সিনেমার যৌথ প্রযোজনা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যৌথ প্রযোজনা বলতে মুলত বাংলাদেশ ও কলকাতার উদ্যোগে যৌথ ভাবে সিনেমা নির্মাণ করা বোঝানো হয়েছে। ১৯৭৩ সালে আলমগীর কবিরের “ধীরে বহে মেঘনা” সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার সিনেমার যাত্রা শুরু হয়।


নব্বই দশকের পর থেকে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ কিছুটা কমে এলেও ২০১৪ সাল থেকে এর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও তুরস্কের সাথেও যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা করে। ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত মিল এবং নিকটবর্তী ভৌগলিক অবস্থান ও শিল্পীদের পরিচিতিই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা বেশি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণের অন্যতম কারণ।


মাঝে কিছুটা সময় যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মিত হয়নি। ১৯৮৬ সালের যৌথ প্রযোজনা নীতিমালায় বলা হয়- সব দেশের শিল্পীদের সমান হারে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বাধ্যতামূলক। ২০১২ সালে সে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়। এতে বলা হয়- দুই দেশের নির্মাতারা আলোচনার মাধ্যমে সিনেমা নির্মাণের বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সিদ্ধান্তই যেন বাংলাদেশের নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য কাল হয়েছে।

যৌথ প্রযোজনার পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছে চলচ্চিত্রপাড়া। সংকট নিরসনে সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয় ‘যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা-২০১২ (সংশোধিত)’-কে যুগোপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নিয়েছে। গঠিত হয়েছে নয় সদস্যের কমিটি।

নতুন নীতিমালা করার পূর্বে আমাদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন পুরোনো নীতিমালার কিছু ফাঁকফোকর কি কি ছিল।


সমানুপাতিক ধোঁয়াশা

বলা হচ্ছে, ‘প্রতি দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীর সংখ্যানুপাত সাধারণভাবে সমান রাখতে হবে’ (অনু-৬)। কিন্তু নীতিমালায় শিল্পী বা কলাকুশলী বলতে এখানে কী বলা হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞাই নেই। নীতিমালা আবার বলছে, ‘সংখ্যানুপাতটা সাধারণভাবে সমান থাকবে।’ তার মানে কি বিশেষ পরিস্থিতিতে সমান না হলেও চলবে? তখন কতটা ছাড় দেওয়া যাবে?

মুখ্য শিল্পী তথা নায়ক-নায়িকা সমান হওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এক দেশ থেকে নায়ক-নায়িকা, ভিলেনসহ ৩০ জন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীর বিপরীতে অন্য দেশ থেকে সংঘাতদৃশ্য বা দলীয় নাচের জন্য ৩০ জনকে নিলে কিচ্ছু বলার নেই।

নীতিমালায় আছে, যৌথ প্রযোজনার ছবিতে লোকেশন হবে সমান সমান (অনু-৬)। তাত্ত্বিক এ নীতি সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ, গল্পের প্রয়োজনে লোকেশন হয়, লোকেশনের প্রয়োজনে গল্প হয় না। তার চেয়ে বরং গল্পে প্রতিটি দেশের সমান গুরুত্ব থাকতে হবে, এমন বিধানই সংগত হতো।


নকল ছবিও নীতিমালাসম্মত?

নীতিমালার কোথাও বলা নেই, গল্পটি মৌলিক হতে হবে। কেবল একটি জায়গায় বলা আছে, যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা অনুসরণে নির্মিত কোনো ছবি যদি ‘পুরানো বা নির্মাণাধীন বিদেশি অথবা বাংলাদেশি চলচ্চিত্র থেকে যেকোনো ধরনের নকল’ হয় (অনু-১২), তবে তা প্রেক্ষাগৃহে দেখানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যৌথ প্রযোজনার একাধিক আলোচিত ছবি নকল। যেমন আশিকি (২০১৫) তেলেগু ইশক-এর (২০১২) নকল। শিকারী (২০১৬) ও তামিল আদাভান-এর (২০০৯) গল্পে অনেক মিল। বাদশা দ্য ডন (২০১৬) হয়েছে তেলেগু ডন সেনুর (২০১০) পর। ছবিগুলো মুক্তির আগেই নকলের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তাতে মুক্তি বা প্রদর্শন কিছুই থামেনি।

গান নিয়ে নীরবতা

ভারতীয় উপমহাদেশের ছবিতে গান একটি বড় বিষয়। অথচ নীতিমালায় গান নিয়ে কোনো কথাই নেই। যৌথ প্রযোজনার ছবিতে গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারতীয়দের একচেটিয়া রাজত্ব। বাদশা দ্য ডন, শিকারী, নবাব ও বস ২ ছবিগুলোর প্রতিটি গানের গীতিকার ও সুরকার ভারতের। নবাব-এর একটি গান বাদে বাকি সব গানের শিল্পীও ভারতীয়।


সংস্কৃতির প্রতিফলনের ফাঁকা বুলি

নীতিমালা বলছে, যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে আবহমান বাংলা, বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সুষ্ঠু প্রতিফলন থাকবে (অনুচ্ছেদ-১)। দেশ ও মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শৈল্পিক ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা থাকবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কিছু থাকবে না (অনু-২)। চিত্রনাট্য জাতীয় স্বার্থ, সংহতি ও সংস্কৃতিবান্ধব হবে (অনু-৩খ)।

কিন্তু হালে সাড়াজাগানো সিংহভাগ যৌথ প্রযোজনার ছবিতে দিকগুলো উপেক্ষিত। গত ঈদে তুমুল আলোচিত বস ২ ছবিতে বাংলাদেশের প্রায় কিছু নেই বললেই চলে। নবাব, শিকারী, বাদশা দ্য ডন ইত্যাদি তুমুল হিট ছবিও একই দোষে দুষ্ট। ছবিগুলোতে এ দেশের সংস্কৃতি খুব দৃষ্টিকটুভাবে অনুপস্থিত। এর পেছনে নীতিমালাও প্রচ্ছন্নভাবে দায়ী।


শর্ত না মানলে কী হবে?

যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাইলে আগে প্রিভিউ কমিটি থেকে চিত্রনাট্যের অনুমোদন লাগে। নির্মাণের পর একই কমিটির আরেক দফা অনুমোদন লাগে। নির্মিত ছবিটি যৌথ প্রযোজনার শর্ত-নীতিমালা অনুযায়ী না হলে প্রিভিউ কমিটি পর্যবেক্ষণ দেবে (অনু-৩ঘ)। সরাসরি বাতিলের বিধান নেই। অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ চলচ্চিত্রের মুক্তির একটা রাস্তা এখানে আছে।


নীতিমালায় থাকা জরুরি

যেকোনো প্ল্যাটফর্মে ছবির যেকোনো ধরনের প্রচারণামূলক কাজে দুই দেশের নির্মাতা ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের নাম থাকা বাধ্যতামূলক করা দরকার। কদিন আগে বিশাল সমারোহে কলকাতায় নবাব মুক্তি গেল। অথচ শাকিব খান ছাড়া বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব ছবির প্রচারে ছিল না।

যৌথ প্রযোজনার ছবি গোটা বাংলাদেশে চলে। বিপরীতে ভারতে শুধু কলকাতাতেই চলছে। বাংলাভাষী অন্যান্য রাজ্যে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। দুই দেশের সমানসংখ্যক হলে ছবি মুক্তি দিতে হবে—এমন বিধানও নেই।

নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা, অশ্লীলতা বা অপরাধসংক্রান্ত বিষয়গুলোর আরও সুনির্দিষ্টতা প্রয়োজন। যৌথ প্রযোজনার ছবি শুরু করার আগে দুই দেশের প্রযোজনা সংস্থা একটি চুক্তি করে। শিল্পী-কলাকুশলীর সংখ্যা, কাস্টিং কী হবে, শুটিং কোথায় হবে—এসব মূল বিষয় চুক্তিই নিয়ন্ত্রণ করে। চিত্রনাট্যের পাশাপাশি এই চুক্তিটিও প্রিভিউ কমিটির অনুমোদন করতে হবে—এমন শর্ত নীতিমালায় থাকা উচিত।

সুত্রঃ প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×