somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতের প্রাকৃতিক অন্ধকারকে কৃতিম আলোয় বদলে দেওয়া কতটা স্বস্তিদায়ক?

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুম আল্লাহ তাআলার একটি মহা নেয়ামত। এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রাতকে। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাত্রিকে করেছি আবরণস্বরূপ, আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৯-১১)


কৃতিম উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে রাতের ভারতে উজ্জ্বলতা অনেক বেড়েছে। ছবি: নাসা একই সময়ে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট বলছে এই ৪ বছরে রাত্রে কৃতিম আলোর তীব্রতা অন্তত ২% বৃদ্ধি পেয়েছে।


পৃথিবীর অনেক দেশের প্রধান শহরগুলোতে মানুষ এখন দিনের থেকেও রাত্রে অধিক কার্যক্ষম। কর্ম ক্ষেত্রে নাইট শিফট আমাদের কাছে খুব পরিচিত একটি শব্দ। আর রাতে যেন আমরা নানা কাজে বাস্ত থাকতে পারে এজন্য নির্দ্বিধায় আমরা কৃতিম আলোক উৎস ব্যবহার করছি। ফলে রাত্রের অন্ধকারকে দূরে ফেলে আমরা তাকে দিনের মত কর্মক্ষম হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছি।


এখনকার রাতগুলো অনেক বেশী উজ্জ্বল। বিভিন্ন খেলাধুলা এখন রাত্রে করা হয় যেন আমরা দিনের কাজের পরে এগুলো উপভোগ করতে পারি। রাত্রে যেন খেলা সম্ভব হয় এজন্য স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রাত্রের রাস্তায় চলবার জন্য রোড লাইটের ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক আগ থেকেই। এমনকি বাসার বাহিরেও লাইট ব্যবহার করা হয় পাহারা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি রাতের অন্ধকার বর্জন করে কৃতিম আলোয় আলোকিত করবার আমাদের এই চেষ্টা আমাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলছে কিনা?


বিজ্ঞানীরা বলছেন, এলইডি ও ফ্লুরোসেন্ট বাতির অতি ব্যবহারে অনেক দেশ থেকেই ‘রাত হারিয়ে যাচ্ছে’। এর ফলে ‘উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের জীবন ধারণে’ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। ‘উজ্জ্বল রাতের’ জন্য বিশেষভাবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেনে গড়পড়তা একইরকম থাকলেও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতে কৃত্রিম আলোর ব্যবহার ও এর উজ্জ্বলতার পরিমাণ বাড়ছে। স্যাটেলাইটের ছবিতে ঝকমকে উপকূল ও মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে থাকা শহরগুলোতে রাতের আলো চমৎকার দেখালেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রবণতা মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।


২০১৬ সালে আমেরিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল, অতি তীব্র কিন্তু দুর্বল নকশার এলইডি বাতির নীল আলো মানুষের ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন মেলাটোনিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কৃত্রিম আলোরে কারণে নিশাচর পতঙ্গের কর্মকাণ্ড বদলে যায় এবং ফসলের পরাগায়ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণাতে দেখা গেছে অধিক উজ্জ্বল এলাকার উদ্ভিদের মুকুল অন্য এলাকার তুলনায় সপ্তাহখানেক আগেই ঝরে যায়। শহর এলাকায় বাতির পরিমাণ বাড়ায় নিশাচর অভিবাসী পাখির আচরণেও ‘নাটকীয় পরিবর্তন’ এসেছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে কৃত্রিম আলোর এ ব্যবহার পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।


কৃত্রিম আলোর পরিমাণ এখন এতটাই বেড়েছে যে ইউরোপে এখন রাতে প্রাকৃতিক আলো খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর বলে মন্তব্য করেছেন এক্সেটর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেভিন গেস্টন। কৃত্রিম আলো মানুষের দৃষ্টিসীমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং এ ক্ষতি সহজে পূরণ হবে না বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শহর এলাকাগুলোতে রাতে অল্প আলোক ক্ষমতার বাতি জ্বালিয়ে দৃষ্টিসীমার ক্ষতি মোকাবেলা করা সম্ভব। “মানুষের দৃষ্টি আলোর প্রাচুর্যতার ওপর নির্ভর করে না। আউটডোরের উজ্জ্বল বাতি পরিহার করে কম আলোতেই আমরা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে পারি। এর মাধ্যমে জ্বালানিও সঞ্চয় করা যায়, যদিও আমাদের কাছে থাকা তথ্য উপাত্ত বলছে, দেশীয় কিংবা বৈশ্বিক কোনো স্কেলেই আমরা সে পথে হাঁটছি না।”
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×