আজ সকালেই একটি খবর দেখে মন খারাপ হয়ে ছিল। একটি নব দম্পতিকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের হত্যাকারীরা সবাই তাদের পরিবারের লোক! যাদের অপরাধ ছিল তারা দুইজন পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল।
একবার চিন্তা করে দেখুন ত পালিয়ে বিয়ে করবার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড! কি অবাক হচ্ছেন? কিন্তু প্রতি বছর পাকিস্তানের শত শত নব বিবাহিত দম্পতি এভাবেই মৃত্যু বরন করছে।
আজ মঙ্গলবার ব্রিটিশ অনলাইন ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবারের সম্মতি না নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগে গত ২২ নভেম্বর আবদুল হাদি (২৪) ও হাসিনা বিবি (১৯) নামের এক দম্পতিকে তাঁদের দুই পরিবারের লোকজন পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে তাঁদের হত্যা করে গোপনে কবর দিয়ে দেয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আবদুল হাদির বাবাসহ দুই পরিবারের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাসিনার বাবা পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা নব দম্পতিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাঁরা জানায়, ওই নব দম্পতি পরিবারের সম্মতি না নিয়ে বিয়ে করায় পশতু সংস্কৃতির অমর্যাদা করেছে। এ কারণে ‘জিরগা’ বা তাঁদের স্থানীয় কাউন্সিলের নির্দেশে ছুরি দিয়ে তাঁরা ওই নব দম্পতিকে হত্যা করে।
মজার বিষয় হল কথিত কাউন্সিলের নির্দেশে দুই পরিবার এক হয়ে তাদের সন্তানদের হত্যা করে ফেলতে পারে অথচ তাদের কোন পাপবোধ বা অনুশোচনা হয় না অথচ দুই পরিবার মিলে যদি তাদের বিয়ে মেনে নিত তবে হয়ত তাদের সন্তানরা স্বাভাবিক ভাবে জীবন ধারণের সুযোগ পেতে পারত। কিন্তু দেশটি যখন পাকিস্তান তখন এসব হত্যা রাহাজানি সব কিছুই স্বাভাবিক। কেননা কিছুদিন আগ পর্যন্ত এই ধরনের হত্যার কোন শাস্তিই ছিল না, যদিও এখন এই ধরনের হত্যার সর্বচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
সারাবিশ্ব এখন আইএসের ভয়ে ভীত। সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছে। ভাবতেই অবাক লাগত কীভাবে এরা সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ সব অপরাধের অভিযোগে হত্যা করত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে পাকিস্তানের মত দেশগুলিতে এসব হত্যা ত মামুলি ব্যাপার। নিজ সন্তানকে সামান্য বিয়ের অপরাধে হত্যায় যাদের অনুশোচনা বোধ নাই তাদের পক্ষে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করাও কোন অপরাধ বা ভুল বলে মনে হবে না।
কয়েকদিন পূর্বে পাকিস্তানের রাজধানীতে কট্টরপন্থীরা ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছিল। পাকিস্তান সরকার কট্টরপন্থীদের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর পর্যন্ত সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু দেশটির সেনাবাহিনী বরং কট্টরপন্থীদের দাবী মেনে নিতে সেদেশের সরকারকে বাধ্য করে। পরিস্থিতি যে দিকে এগুচ্ছে তাতে সামনে আবারও যে আইএস আল-কায়েদা বা তার থেকেও বড় কোন সন্ত্রাসী সংঘটন আত্মপ্রকাশ করবে কিনা বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে এই মুহূর্তে সিরিয়া এবং ইরাকে আইএসের তাণ্ডব করে এলেও নতুন করে সৌদি পৃষ্টপোষকতায় ইয়েমেনে, অ্যামেরিকা ও পাকিস্তানের সমর্থনে আফগানস্থান এবং লিবিয়ায় আইএস প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। মূল বিষয় হল যতদিন পর্যন্ত সমাজ থেকে উগ্রবাদ না দূর হবে ততদিন পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় বন্ধ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৭