নিঃসন্দেহে ধর্ষণ আমাদের সমাজে এখন একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালও প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন পড়ে ছিলাম ধর্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় সহজেই আদালত থেকে ছাড়া পেয়েছে বরং অভিযোগকারীই এখন ধর্ষকের ভয়ে ভীত।তবে এখন আপনাকে যে ঘটনাটি বলবো তা আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগের ঘটনা, তবে ফর্মুলাটি এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে।
নাগপুরের কোস্তুরবা নগরের বেশ প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে ছিল আক্কু যাদব। যার বিরুদ্ধে একটা বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় সকল মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল। প্রায় এক দশক ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন মহিলাকে নিয়মিত ধর্ষণ করেছিল সে। দাপুটে এবং প্রভাবশালী হওয়ার কারণে আইনের শাস্তির হাত থেকে রেহাই পেয়ে যেতো ধর্ষক আক্কু। কিন্তু, একসময় তার কাছে নির্যাতনে শিকার হওয়া নারীরাই তাকে শিক্ষা দিয়েছিলো আদালতের মধ্যেই।
কোস্তুরবা নগর এলাকায় যেখানে আক্কু যাদব থাকতো তার পাশেই ছিল বড় বস্তি। সেই সকল দরিদ্র পরিবারের মহিলারাই ছিল আক্কুর অশ্লীল কাজের টার্গেট। বস্তির মহিলাদের ধর্ষণ স্বভাবে পরিণত করে ফেলেছিল সে। প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশের কাছে দায়ের হত অভিযোগ। নিয়ম মাফিক গ্রেফতারও হতো কিন্তু, খুব সহজেই মিলে যেতো জামিন। কারণ, সেভাবেই তৈরি হতো পুলিশের চার্জশিট। নিয়মিত মাসোহারা এবং মদের বোতল উপহার দিত আক্কু।
ধর্ষণের শিকার ২২ বছরের এক মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে তাকে আক্কুর প্রেমিকা দেখিয়ে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্যাতিতাদের যৌন কর্মী দেখিয়ে আক্কুর জামিনের পথ সুগম করে দিত আইনের রক্ষকেরা। শুধু একা আক্কু নয়, তার সাঙ্গপাঙ্গরাও এই কাজে সামিল ছিল। অনেক সময় বস্তির মেয়েদের কোস্তুরবা নগরের অদূরে পরিত্যক্ত বহুতলে নিয়ে গিয়ে মেয়েদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। মেয়েদের বয়স ১২ পার হলেই সে আক্কু বাহিনীর লক্ষ্য বস্তু হয়ে যেতো।
প্রায় ৩০০ পরিবারের কাছে আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছিল সিকি শতক বয়সের যুবক আক্কু যাদব। যার কাছে ধর্ষণ প্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ক্ষোভের আগুনে ঘি পরে ২০০৪ সালের আগস্ট মাসে। কোস্তুরবা নগরের বাসিন্দা মহিলারা একজোট হয়ে রুখে দাঁড়ায় আক্কুর বিরুদ্ধে। সকলকে একত্রিত করার পিছনে ছিলেন ২৫ বছর বয়সী সমাজকর্মী উষা নারায়ণে। প্রায় ৫০০ মহিলা একসঙ্গে হামলা চালায় আক্কুর বাড়িতে। দিনটা ছিল ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট। ওই দিন বিকেলের দিকে তারা সমবেত হয়ে আক্কুর বাড়িতে যায়। কিন্তু বাড়িতে ছিল না আক্কু। বিপদ বুঝে আগেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পরামর্শেই আত্মসমর্পণ করেছিল ধর্ষক আক্কু যাদব। কারণ, বাড়িতে বা অন্যত্র থাকলে কোস্তুরবা নগরের মহিলাদের হাতেই তার প্রাণ যেত। এর চেয়ে পুলিশের হেফাজত অনেক নিরাপদ ছিল।
১৩ আগস্ট ছিল নাগপুর জেলা আদালতে ছিল আক্কুর পরবর্তী শুনানি। সেদিন আদালতে হাজির ছিল প্রায় ২০০ জন মহিলা। তারা প্রত্যেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল সবজি কাটার ছুরি আর শুকনো লঙ্কার গুড়ো। মহিলাদের পরিকল্পনা ছিল, যেভাবেই হোক নিজের বাড়িতে আর ফিরতে দেওয়া যাবে না ধর্ষক আক্কু যাদবকে। প্রয়োজনে জেলে যেতেও তারা প্রস্তুত ছিল।
পুলিশের কারসাজিতে জামিন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিল ৩২ বছরের আক্কু। আদালতে ঢোকার মুখে নির্যাতনের শিকার এক মহিলাকে উদ্দেশ্য করে গালি দেয় এবং তাকে দেখা নেওয়ার হুমকি দেয়। আদালতের মধ্যে এক ধর্ষক মহিলাকে হুমকি দিচ্ছে দেখেও কিছু করেনি পুলিশ, উলটো হাসছিল।
তখনই ওই নারী চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আমরা দু’জনে একসঙ্গে পৃথিবীতে থাকতে পারব না। হয় তুই থাকবি না হয় আমি থাকব।’ বলেই জুতো খুলে আক্ককুকে মারতে শুরু করে ওই নারী।
জমে থাকা ক্ষোভের বারুদে সেটিই ছিল প্রথম অগ্নি সংযোগ। এরপরেই চারপাশ থেকে আক্কুর উপরে ঝাঁপিয়ে পরে সকল মহিলারা। প্রায় ২০০ জন মহিলাকে সামাল দেওয়ার মতো পুলিশ আদালতে ছিল না। মাত্র ১৫ মিনিট সময়ের মধ্যেই সব শেষ। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপান হয় আক্কু যাদবকে। এরপরে কাটা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় ঝালের গুড়ো। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুসারে, আক্কুর শরীরে ৭০টি আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ওই সময় আদালত চত্বরে উপস্থিত সকল মহিলাই আক্কুর খুনে নিজেদেরকে অভিযুক্ত বলে দাবি করেছিল। তাঁদের সকলকেই গ্রেফতার করার দাবিও উঠেছিল। প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হলেও বিক্ষোভের কারণে তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। আক্কু যাদব খুনের সব দায় নিজের মাথায় নিয়ে আত্মসমর্পণ করেন সমাজকর্মী উষা নারায়ণে।
২০১২ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় জড়িত মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যাদের মধ্যে ছয় জন মহিলা ছিল। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
যখন এই ব্লগটি লিখছি ঠিক তখনই জম্মু কাশ্মিরের এক মন্দিরে ৮ বছর বয়সী আসিফাকে গণধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় সম্পূর্ণ ভারত জুড়ে প্রতিবাদ চলছে। একজন ধর্ষককে আদালতেই জনতা মুখে কালি মাখিয়ে জুতার বাড়ি উপহার দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশেও একটা সংবাদ পেলাম ২০১৭ সালে কুমিল্লায় মসজিদের বারান্দায় একটি ছোট বাচ্চা এক পশুর লালসার স্বীকার হয়েছে। অথচ আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই বিষয়টি জানি। এমনকি কুমিল্লা সেনা ক্যান্টনমেন্টের মত নিরাপদ এলাকার ভেতর তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ফেলা হয়েছে কিন্তু আজও ধর্ষকবা হত্যাকারীরা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে RAB এক ধর্ষককে ক্রসফায়ারে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। বিচারবিহীন হত্যা আমি সমর্থন করি না তবে এসকল প্রভাবশালীদের জন্য বিচার হওয়া উচিৎ মেডিকেল টেস্টের পর সরাসরি জনসম্মুক্ষে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা। যেন আর কোন ধর্ষক আমাদের দেশে তৈরি না হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫