বিশ্বের প্রায় তিন ভাগের একভাগ মানুষ অনাহারে বা অর্ধাহারে থাকলেও ধনী দেশগুলো প্রতিরক্ষার নামে অন্যদেশে আক্রমনের জন্য নিত্য নতুন সামরিক অস্ত্র বানিয়েই চলছে। সম্প্রতি মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা কোম্পানি লকহিড মার্টিন উদ্ভাবন করেছে এফ-৩৫ নামক একটি জঙ্গি জেট বিমান, যাকে মার্কিন বাহিনী দাবি করছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ যুদ্ধ বিমান।
এফ-৩৫ জঙ্গি বিমান নিজেকে শত্রুর রাডার থেকে লুকিয়ে ফেলতে সক্ষম এবং এটি শত্রুর রাডার জ্যাম করে দিতে সক্ষম। এফ ৩৫ বিমান শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটি শব্দের গতিতে ছুটতে পারে। বহন করতে পারে একটি ২৫ এমএম কামান, আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র, দুই হাজার পাউন্ড ওজনের দু’টি গাইডেড বোমা এবং চারটি এক্সটারনাল লেজার গাইডেড বোমা। তবে এফ-৩৫ জঙ্গি জেট বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব হল এটির ব্রেন বা বুদ্ধিমত্তায়। এই বিমানের আছে ৮০ লাখ লাইনের সফটওয়্যার কোড, যা ধারনা করা হয় এখন পর্যন্ত নির্মিত অন্য কোনো জঙ্গিবিমানে নেই। এটির সাহায্যে বিমানটি সবরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা, নৌ চলাচল ও টার্গেটিং সিস্টেমকে অকেজো করে দিতে পারে।
পুরনো জেটগুলোতে রাডারজাতীয় জিনিসগুলোকে ম্যানুয়ালি চালাতে হতো (যেমন তার দিকে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে কি না জানার জন্য রাডারের মুখ ভূপৃষ্ঠের দিকে ঘুরিয়ে রাখতে হতো অথবা শত্রুবিমানের খোঁজে ঘোরাতে হতো আকাশের দিকে)। বিমান থেকে বিমানে যোগাযোগের জন্য একটি উচ্চগতির ড্যাটা লিংক এবং ভূপৃষ্ঠে মোতায়েন সৈন্যদের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত ভাষ্যও (টেক্সট) মনিটর করতে হতো। পাইলট অথবা তার পেছনে বসা সহযোগীকে হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ ও হামলার জন্য অবশ্যই কিছু উপাত্ত পেতে হতো। এসব করতে গিয়ে অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হতো।
এক আসনবিশিষ্ট এফ-৩৫ জঙ্গি জেট বিমানে এসবের প্রয়োজনই নাই। এই বিমানে স্থাপিত স্বয়ংক্রিয় অসংখ্য সেন্সরই এসব কাজ সম্পন্ন করবে। যেমন এর হিট সেন্সরে যদি ধরা পড়ে যে, শত্রুর নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র তার দিকে ধেয়ে আসছে তাহলে তাতে ডোরবেলের শব্দের মতো একটি আওয়াজ হবে এবং একটি কম্পিউটার সময় এবং মিসাইলের দিক নির্দেশনা করবে। পাইলট সেদিকে তাকালেই তার হেলমেটের ফেস শিল্ডে একটি সবুজ বৃত্ত জ্বলে উঠবে। তাতেই নির্দিষ্ট করে দেখানো হবে ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণস্থল, এর গতি এবং আঘাত হানার সময়। সবুজ বৃত্তটি দেখেই পাইলট তার নিশানা ঠিক করে নিতে এবং শত্রুর প্রতি আঘাত হানতে অর্থাৎ ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ভূপাতিত করে ফেলতে পারবেন। বিমানের বাইরে লাগানো আছে ছয়টি ক্যামেরা। এইগুলো বাইরের ৩৬০ ডিগ্রি দৃশ্য ধারণ করে তা পাইলটের হেলমেটের ফেস শিল্ডে পাঠিয়ে দেয়। এ ছাড়া পাইলট ইচ্ছে করলে বিমানের ককপিটের মেঝে থেকে ভূপৃষ্ঠের দৃশ্যও দেখতে পারেন।
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্যই এই বিমানকে দেখেন ‘আমেরিকার অব্যাহত বিমান-শ্রেষ্ঠত্বের একটি হাতিয়ার’ হিসেবে। এফ-৩৫ এত উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন, এত স্বয়ংক্রিয়, এবং এত সমন্বিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব নেভি রে মাবুস ঘোষণা দেন ‘এফ-৩৫ জঙ্গিবিমানের হওয়া উচিত পাইলটচালিত শেষ জঙ্গিবিমান এবং নিশ্চিতভাবে সেটাই হবে। মার্কিন নৌবাহিনী আর কোনো মনুষ্যচালিত বিমান কিনবেও না, উড়াবেও না।’
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪