somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাস গড়লেন কোরিয়ান নেতারা, দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভবনা!

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কাল শুক্রবার সকালে এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার কোন রাষ্ট্রপ্রধান সীমান্ত রেখা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্র প্রধানের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন।

সীমান্তের শূন্যরেখা সামনে রেখে অপেক্ষায় ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন (ডানে)। হাত বাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন। সাড়ে ছয় দশক পর গতকাল সাক্ষাৎ হয় দুই কোরিয়ার নেতাদের।
ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষ্যঃ

সাক্ষাতে দুই নেতা কোরীয় উপদ্বীপকে ‘সম্পূর্ণ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত’ করতে সম্মত হন। সেইসঙ্গে দুই কোরিয়ার মধ্যকার বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্কের অবসান ঘটাতেও একমত হন কিম ও মুন।


বৈঠকের আগে দুই নেতা হাসিমুখে পরস্পরের সঙ্গে হাতও মেলান। পরে বিকেলের অধিবেশনে দুই নেতা সীমান্তে বৃক্ষরোপণ করেন।জানা গেছে, পাইনগাছ লাগিয়েছেন এই দুই নেতা।


দুই কোরিয়া থেকে আনা পাহাড়ের মাটি দেওয়া হয় পাইনের গোড়ায়।এই গাছ লাগানোর মধ্য দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির বীজ বপন’ করেছেন। গাছের কাছে স্থাপিত একটি পাথরের ফলকে এ কথা লেখা হয়েছে। গাছ লাগানোর পর কিম বলেছেন, ‘আমরা কোরীয়রা বলে থাকি, পাইনগাছ খুব শক্তিশালী এবং প্রায় পুরো বছরই সবুজ থাকে। এমনকি শীতকালেও সবুজ পাতার অভাব থাকে না পাইনগাছে। আমাদের চলার রাস্তায় যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক না কেন, আমরা তা কাটিয়ে উঠব। ঠিক এই গাছের মতো।’


বৈঠকের পর দুই নেতার ওই যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলে আর কোনো যুদ্ধ হবে না।নর্থ-সাউথ কোরিয়া দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কোরিয়া যুদ্ধে যেসব পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তাদের একত্রিত করা, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেয়া এবং চলতি বছরের এশিয়ান গেমস থেকেই আন্তর্জাতিক খেলাধুলার ইভেন্টগুলোতে দুই কোরিয়ার যৌথ অংশগ্রহণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।


১৯১০ সাল থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জাপানী সাম্রাজ্য কোরীয় উপদ্বীপ শাসন করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জাপানের পরাজয় হলে ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখায় কোরিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করে নিজেদের দখলে নেয় মার্কিন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। উত্তর কোরিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে আর দক্ষিণ কোরিয়া অ্যামেরিকার অধীনে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে মার্কিন অ্যামেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধের বলি হয় দুই কোরিয়ায় জনগন। যুদ্ধে প্রায় ২৫-৫০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়। পরবর্তীতে চীনের সাথে অ্যামেরিকার সরাসরি বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা এড়াতে যুদ্ধ বিরতি এবং জাতিসংঘের জোরালো হস্তক্ষেপে ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়।


উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার দুই নেতার মধ্যে যখন ঐতিহাসিক বৈঠক হচ্ছে - তখন একটা প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন - এটা যে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হলো - তার কৃতিত্ব আসলে কার?
Please do not forget the great help that my good friend, President Xi of China, has given to the United States, particularly at the Border of North Korea. Without him it would have been a much longer, tougher, process!— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) April 27, 2018

তবে ট্রাম্প এক্ষেত্রে প্রথমে নিজের ও অ্যামেরিকার কৃতিত্ব দাবী করে পরে আবার চীনকেও কৃতিত্বের ভাগ দেয়। তবে ইরান মার্কিন হস্তক্ষেপ ছাড়াই সম্পর্ক স্বাভাবিক করুতে দুই কোরিয়াকে আহব্বান জানিয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, তার দেশ সব সময় কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষপাতি ছিল এবং দুই কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা সে লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে তেহরান স্বাগত জানায়। অন্যদিকে রাশিয়া এবং চীন উভয় দেশ উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই শান্তি প্রকৃিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে।


তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট শুরু থেকেই উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। এমনকি উত্তর কোরিয়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবার জন্য আন্দোলন করে তাকে এক সময় জেল পর্যন্ত খাটতে হয়েছিল। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় নেতা চীন সফরে গিয়েছিলেন এবং তার আপন বোনকে দক্ষিণ কোরিয়া রাষ্ট্রীয় সফরে পাঠিয়েছিলেন। ওই সফরের অভিজ্ঞতা ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়ার নেতার সাথে বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করেন যা গতকাল বাস্তবতায় রুপ নিল। নিঃসন্দেহে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি আর উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি একত্রিত হলে বিশ্বে কোরিয়া হয়ে উঠবে নতুন এক পরাশক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৩১
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×