তাসফিয়া চট্টগ্রামের সানশাইন নামক পরিচিত একটি ইংলিশ মিডিয়ামে ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। মাত্র একমাস আগে ফেসবুকে পরিচয় হয়েছে আদনান মির্জার সাথে। আদনান ১০ম শ্রেণীতে পড়ে।
গেল শবে বরাতে তাদের বন্ধুত্বের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে আদনানের সাথে দেখা করতে তাসফিয়া একটা রেস্টুরেন্ট যায়।
বাবা ব্যবসায়ী, নানা কাজে ব্যস্ত, মাও কাজে ব্যস্ত, মাঝ থেকে মেয়ের খবর নেওয়ার জন্য কেউ নাই। সুতরাং ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া আধুনিক মেয়ে তাসফিয়া তার ভার্চুয়াল বন্ধু আদনানের সাথে দেখা করতে যায়।
সেখানে আইসক্রিম আর কেক অর্ডার করলেও, আইসক্রিমটাই খায়। সেলিব্রেশনের জন্য যে কেক, সেটাই খায় নি দুইজনের কেউই! অর্থাৎ তাদের বন্ধুত্বের প্রথম উৎযাপনে হয়ত কোন সমস্যা হয়েছিল। অতঃপর রেস্টুরেন্টের সিসি টিভির ফুটেজে দুইজনকে দেখা যায় আলাদা আলাদা সি এন জিতে উঠে রওনা হতে। এতোটুকু হলেও হয়ত সমস্যা ছিল না কিন্তু পরের ঘটনা তো ভয়াবহ।
তাসফিয়া সে রাতে আর বাড়ি ফেরে নি, স্বাভাবিক ভাবেই তার পিতা-মাতা এখন চিন্তিত ছিল মেয়েকে নিয়ে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু সবার বাসায় খোঁজ করেও মেয়ের সন্ধান পেলেন না তারা। পরের দিন পতেঙ্গার কূলে পাথরে মুখ লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় তাসফিয়ার লাশ। পুলিশ জানায় ধর্ষণের পর হত্যা করে এখানে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে। আদনান ঘটনাক্রমে পুলিশের হাতে আটক! তবে এই পর্যন্ত ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা গুলোতে কয়জন অপরাধী সাজা পেয়েছে আমার জানা নাই। আবার এমনও হতে পারে হয়ত আটক আদনানকে ফাসিয়ে অন্যকোন পক্ষ আসলে এই ঘটনার মূলঅপরাধীদের আড়াল করতে চেষ্টা করছে।
এখন কিছু বিষয় না বললেই নয়, নবম শ্রেণির একটা মেয়ে, আর দশম শ্রেণির একটি ছেলে ফেসবুক নামক ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের এক মাস পূর্তি করছে তাও পবিত্র শবে বরাতে! এক জন আর একজনকে সঠিক ভাবে না জেনেই দেখা করতে এসেছে আবেগের বসে। সমস্যা হল আধুনিকতা ভালো হলেই সেটা সব সময় এবং সব জায়গায় নয়। বিশেষ করে আমাদের মত একটি দেশে যেখানে সামাজিক কোন নিরাপত্তাই নাই।
হয়ত আমরা এতোটা আধুনিক ছিলাম না এবং ছেলে হওয়ার পরও পরিবার আমাদের এত স্বাধীনতা দেয় নাই। কখন বাড়ির বাহিরে যাই, কখন বাসায় ফিরি সব বাড়িতে জানাতে হত। বাহিরে থাকলে কিছু সময় পর পরই ফোনে যোগাযোগ করে কি করছি এবং কোথায় আছি জানাতে চাইত। আর শবে বরাতের মত এই দিনটি বাড়িতে আম্মুর সাথে বাড়ির বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে, আব্বুর সাথে মসজিদে নামাজ পড়ে কাটিয়ে দিতে হত। তবে এখন তো আবার শবে বরাত পালন করা বিদাত হয়েছে! সুতরাং সামাজিক এবং ধর্মীয় চেতনার শূন্যতায় এসব অনেক দুর্ঘটনাই ঘটছে যা হয়ত একটু সাবধান হলেই এড়ানো সম্ভব!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৮ দুপুর ২:২৪