ইউরোপ তাদের স্বার্থে ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও এ চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমেরিকার কোনো স্বার্থ অর্জিত হয়নি দাবি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৮ মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান। ইউরোপও যেন দ্রুত এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় এজন্য ট্রাম্প ইউরোপকে হুমকি দিয়েছেন যে তাদের কোম্পানিগুলো যদি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখে তাহলে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
তেহরানকে পরমাণু সমঝোতায় ধরে রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য ওই প্যাকেজ প্রস্তাব দেবে ইউরোপ। ইউরোপ পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি ইরানের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তাদের মতে, ইরানের সঙ্গে ছয় জাতিগোষ্ঠীর যে চুক্তি হয়েছে তা কেবল পরমাণু ক্ষেত্রেই প্রয়োজন তা নয় একইসঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা ফেডেরিকা মোগেরিনির মুখপাত্র মায়া কুচিয়ানচিক বলেছেন, "পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা 'কার্যকরভাবে ও পুরোপুরি' বাস্তবায়ন করা হবে। ফেডেরিকা মোগেরিনির মুখপাত্র মায়া কুচিয়ানচিক বলেছেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের আন্তর্জাতিক মিত্ররা পরমাণু সমঝোতা টিকিয়ে রাখা ও এর সুফল পাওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।"
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী পরিষদের সদস্য ব্রায়ান হুক দাবি করেছেন, "আগামী ৪ আগস্ট ইরান বিরোধী কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রাক্কালে এখন পর্যন্ত ৫০টি দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে।"
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া সফরে গেছেন ইউরোপের কাছ থেকে পরমাণু সমঝোতা বিষয়ে স্পষ্ট অঙ্গীকার আদায় করতে। পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের পরমাণু আলোচনা ও চুক্তি সইয়ের বেশিরভাগ অনুষ্ঠান এই দুই দেশে সম্পন্ন হয়েছে। রুহানির চলতি সফরে পরমাণু সমঝোতার ভবিষ্যত নিয়ে ইউরোপীয়দের সঙ্গে আলোচনা হবে।
ইরানী প্রেসিডেন্টের ইউরোপ সফরের সময়ে কথিত বোমা হামলার পরিকল্পনার দায়ে জার্মানিতে একজন ইরানি কূটনীতিককে আটক করা হয়েছে। ইরানের ইসলামি সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী শনিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তাদের বার্ষিক সম্মেলন করে। ওই সম্মেলনে বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনার অভিযোগে বেলজিয়ামের পুলিশ শনিবার সেদেশের দুই নাগরিককে আটক করে। বেলজিয়ামের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করেন, ওই পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় নিযুক্ত একজন ইরানি কূটনীতিককে জার্মানিতে আটক করা হয়েছে।
ইরানের সরকার ব্যাবস্থা বিরোধী এই সন্ত্রাসী মোনাফেকিন গোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে কয়েক হাজার ইরানী সরকারি কর্তাদের হত্যা করেছে, পার্লামেন্টে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। অথচ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্য এই ইরান বিরোধী সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। মুলত ইউরোপ একই সময়ে ইরানের সাথে ডাবল গেম খেলছে। এক দিকে পরমানু সমঝোতার মাধ্যমে ইরানে তারা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছে অন্যদিকে ইরান বিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে তারা অ্যামেরিকার মন রক্ষা করে চলছে। ইউরোপ চায় মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ইরান যেন তাদের ভূমিকা গুটিয়ে নেয় যা বাস্তবতার সাথে মিলে না। মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারি ইরানকে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ইউরোপ মাথাঘামাতে নিষেধ করলেও হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও মধ্যপ্রাচ্যসহ সম্পূর্ণ পৃথিবীকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে তারা!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮