গত কাল দিনটি ছিল পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন এবং এরই মধ্যে সেদেশের নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল চলে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট ব্যাবধানে জয় পাচ্ছেন ইমরান খানের নেতৃত্ব পিটিআই। তবে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে যতগুলো লেখা দেখলাম সেগুলোর সারমর্ম ছিল ইমরান খানের ওপর ভর করে নাকি পাকিস্তানে আবারও সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসছে! সেনাবাহিনী আদালতের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত করেছে!
আচ্ছা আদালত কিভাবে ইমরান খানকে নির্বাচিত করলো? আদালতের হাতে কি সত্যিই নির্বাচনী কোন ক্ষমতা রয়েছে?
প্রকৃতপক্ষে আদালত আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে দুর্নীতির দায়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অযোগ্য ঘোষণা করেছে এবং জেল জরিমানা করেছে। আচ্ছা আদালত কি তাকে মিথ্যা কোন মামলায় ফাঁসিয়েছে? না আদালত তাকে কোন মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসায়নি বরং পানামা পেপার কেলেঙ্কারি নামক ঘটনা থেকে নওয়াজের দুর্নীতির বিষয় জানবার পরই এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয় এবং তদন্তে সে দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে আদালত। তাহলে তার মেয়ে এবং জামাইকে কেন গ্রেফতার করা হল? হ্যাঁ আবারও সেই দুর্নীতির অভিযোগ। লন্ডনে তার মেয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন কিন্তু যখন প্রশ্ন করা হল টাকার উৎস সম্পর্কে তখন জবাব দিতে পারেন নাই, কেননা দুর্নীতির টাকা ছাড়া এসব সম্ভব ছিল না।
গত নির্বাচনের আগের বার জিতেছিলেন আরেক দুর্নীতিবাজ ভুট্টো পরিবার। নির্বাচনের আগে বেনজির ভুট্টো আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ায় জনগনের সেন্তিমেন্টে পক্ষে থাকায় জিতে ক্ষমতা দখল করেছিল আসিফ আলি ভুট্টো মত টেন পারসেন্ট নেতারা। তবে গত নির্বাচনে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এই ভুট্টো পরিবার ২য় স্থান অধিকার করতেও বিফল হয়। ফলে গতবার সংসদে বিরোধী দল হয়েছিল এবারের জয়ী ইমরান খান।
ইমরান খানের জয়ের কারন কি হতে পারে? প্রথমত ইমরান খান জিতেছেন প্রধান দুই দলের দুর্নীতিতে অসন্তুষ্ট জনগনের ভোটে। দেশ পরিচালনায় প্রধান দুই দলের ব্যার্থতাই পাকিস্তানিদের মধ্যে ইমরান খানকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। যেহেতু ইমরান খানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন দুর্নীতির অভিযোগ নাই সুতরাং সেদেশের জনগন চেয়েছে একটি বারের জন্য ইমরান খানকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিতে।এখন পর্যন্ত আমার যত পাকিস্তানী বন্ধু রয়েছে তারা সবাই এমনটিই জানিয়েছে।
তবে ইমরান খান যেন নির্বাচনে জিততে না পারে সে জন্য তার তালাক প্রাপ্ত সাংবাদিক স্ত্রীকে দিয়ে নানা ধরণের কুৎসা রটিয়েছে নওয়াজ শরীফের দল। নির্বাচনের কিছু দিন আগেই একটি বই বাজারে ছেড়েছিল তারা। কিন্তু বইয়ে এত বেশি মিথ্যা দিয়ে ভরা ছিল যে মানুষ সেটাকে বিশ্বাস করে নাই। যেমন এক জায়গায় বলা হয়েছে ইমরান সমকামী তাই নাকি তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে আবার অন্য জায়গায় বলা হয়েছে ইমরান দলের নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করত যা পরস্পর বিরোধী তথ্য। তবে এই বই বরং ইমরানের জন্য সাপে বর হয়েছে এবং নওয়াজের ক্ষমতার লিপ্সা সম্পর্কে পাকিস্তানের সবাই বুঝতে পেরেছে।
এবারের পাকিস্তানের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচুর পরিমানে নির্বাচন পর্যাবেক্ষক নির্বাচনে পর্যাবেক্ষন করেছে এবং তারা নির্বাচনে তেমন কোন অসঙ্গতির প্রমান পায় নাই। তবে ভারতের প্রতিটি নিউজ চ্যানেল এবং পত্রিকা পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়াবার চেস্তায় লিপ্ত রয়েছে যদিও একজন ভারতীয়কেও নির্বাচন কভার করবার জন্য পাকিস্তান সরকার ভিসা দেয়নাই! ইমরান খান নির্বাচনে জেতায় সব থেকে বড় ক্ষতি সম্ভাবত ভারতের হয়েছে মনে হচ্ছে। কেননা তিনি যদি সত্যি পাকিস্তানকে দুর্নীতি মুক্ত এবং সন্ত্রাস মুক্ত করে তুলতে পারেন তবে পাকিস্তান ইমেজ সঙ্কত কাটিয়ে উঠতে পারবে যা ভারতের জন্য ভালো হবে না।
ইমরান খানের যোগ্য নেতৃত্বে এবং হাত ধরেই পাকিস্তান প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ জয় করেছিল, পাকিস্তানিদের ধারনা আবারও হয়ত তার যোগ্য নেতৃত্বে পাকিস্তান তাদের দেশের ভেতর এবং বাহিরের সব চালেঞ্জ মকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। অবশ্য সময়ই বলে দিবে পাকিস্তান কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি ট্রাম্পের মত একজন অপদার্থকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যে তার নিজের দেশকে এগিয়ে নিবে বলে ক্ষমতায় এসে, দেশকে পিছের দিকে টেনে নিয়ে চলছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:১৫