somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ঈদ পর্যবেক্ষণ :) :) :)

৩০ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ অবজারভেশন-
১- সবচেয়ে ইন্টারেস্টিংভাবে ঈদের নামাজ পড়ে ছোট বাচ্চারা। নামাজের জন্য দুই হাত বেঁধে বাকি সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে। হঠাৎ করেই হাত ছেড়ে সবার সামনে সিজদাহ এর জায়গা দিয়ে "উসাইন ভোল্ট" এর গতিতে দৌড় দেয়। দৌড়বিদের বাবারা বা আত্মীয়রা নামাজে ব্যস্ত, চাইলেও নামাজের মাঝে তাঁদের থামাতে পারেন না। বাচ্চারা চালাক আছে, মোনাজাতের ঠিক আগেই আবার যে যার জায়গামত বসে পড়ে। আবার কিছু বাচ্চা আছে, "আল্লাহু আকবর" থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত "ভ্যা এ এ এ এ" করে কাঁদতেই থাকে!

২- বৈষম্য নারী পুরুষ থেকে শুরু করে কোলাকুলিতে গিয়ে ঠেকেছে। "এলিট" গ্রুপ "এলিট" গ্রুপের সাথেই কোলাকুলি করে, মধ্যবিত্তরা সবার সাথেই কোলাকুলির চেষ্টা করে, নিম্নবিত্তরা দূর থেকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সবার কোলাকুলি দেখে। তবে সবচেয়ে সুন্দর কোলাকুলির দৃশ্য মনে হয় বাবার সাথে ছেলের। সারা বছর সো কলড "অফিসের কাজে ব্যস্ত" থাকা, "টাকা উপার্জনে ব্যস্ত" থাকা বাবারা আজকের দিনে "গম্ভীর" ভাব ছেড়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। যাদের বাবা নাই, তারা এই জিনিসটা ভয়াবহভাবে মিস করেন, আমাকে প্রায় চার বছর হতে চলল বাবা নামের কেও জড়িয়ে ধরেন না :)

৩- এক মাস না খেয়ে "খিদের" চোটে বাঙালি মুসলমানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে! দানবাক্স থেকে ১০০০ আর ৫০০ টাকার নোটের ভাংতি সমানে নিচ্ছেন। ভালো কাজ একা করলে হয়না, আরেকজনকে উৎসাহ দিতে হয়, তারা সেটা ভালভাবেই করছেন, পাশের জনকে বলছেন " আপনিও ভাংতি করে নেন, এখানে অনেক আছে"। খাবারের বেলায়ও একই দৃশ্য, বুড়িগঙ্গার পানির চেয়েও জঘন্য রকমের "পায়েশ" খেয়ে পুরুষেরা "আয়েশ" করে বলছেন- ভাবী, লাস্ট কবে এত অসাধারণ পায়েশ খেয়েছি, তা মনে নাই। সত্যি বলছি, আমার ক্ষমতা থাকলে আপনার হাত স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করে রাখতাম! আফসোস, বিধাতা আমাকে সেই ক্ষমতা দেন নাই!

৪- ঢাকা শহরের প্রেমিক "যুগলের" সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা। প্রত্যেক মোটর সাইকেলে একটা করে জোড়া। পিছনে বসা মেয়েটি তার হাতটি রেখেছে সামনে বসা ছেলেটির কাঁধে, সেই হাত পরম নির্ভরতার হাত। এই অবস্থায় তাঁদের খুনসুটি আর আলাপ চলছে। সেই মোটরসাইকেলকে আমি অনেক ঈর্ষা করি- যে সদ্য প্রেমে পড়া বা প্রেমের বেশ কয়েকবছর পেরিয়ে আসা এইসব যুগলের নিস্পাপ খুনসুটি আর হাসিকান্নার সাক্ষী হয়ে থাকে। আমি মানুষ হয়ে সাক্ষী হতে পারিনা, মোটরসাইকেল "জড়বস্তু" হয়ে আমার চেয়ে ভাগ্যবান ;)

৫- আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে লক্ষ মাইল দূরে থাকা প্রবাসী মানুষদের জন্য একটা বিশেষ ধরনের, সুপারস্পীডের বিমানের ব্যবস্থা করা দরকার। তারা সকালে আসবেন, বাবার সাথে নামাজ পড়ে, কোলাকুলি করে বাবার পা ধরে সালাম করবেন। মায়ের রান্না করা ফিরনি খাবেন। বিকালে ধানমণ্ডি লেক বা টিএসসিতে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার প্লেনে করে আবার বিদেশ চলে যাবেন। জানি এটা সম্ভব না, বলতে গেলে একেবারেই অলীক কল্পনা- তবে মাঝে মাঝে কল্পনা করতে ভাল্লাগে। বাস্তবতা সবসময় ভাল্লাগে না, বাস্তবতা সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করেনা, বাস্তবতার কষ্ট সবসময় ভাল্লাগে না।

৬- ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ফিলিস্তিনে ঈদ মানে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়িয়ে যাওয়া, প্রিয় মানুষের লাশ সামনে নিয়ে বসে থাকা, কান্না না থামা, সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সহায় হন।

আমার ঈদ কেমন গেল? ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট "জঘন্য" :) তবে সালামি পেয়েছি বেশ ভালো লেভেলের! শুধুমাত্র কোমর বাঁকিয়ে প্রায় পরিশ্রম ছাড়াই টাকা ইনকামের এত অসাধারণ পথ আর হয়না। আত্মীয় স্বজন অন্য কোন কাজে আসুক বা না আসুক, অন্তত সেলামি দেয়ার জন্য হলেও প্রত্যেক মানুষের আত্মীয় স্বজন থাকা উচিত! :P
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×