ঈদ অবজারভেশন-
১- সবচেয়ে ইন্টারেস্টিংভাবে ঈদের নামাজ পড়ে ছোট বাচ্চারা। নামাজের জন্য দুই হাত বেঁধে বাকি সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে। হঠাৎ করেই হাত ছেড়ে সবার সামনে সিজদাহ এর জায়গা দিয়ে "উসাইন ভোল্ট" এর গতিতে দৌড় দেয়। দৌড়বিদের বাবারা বা আত্মীয়রা নামাজে ব্যস্ত, চাইলেও নামাজের মাঝে তাঁদের থামাতে পারেন না। বাচ্চারা চালাক আছে, মোনাজাতের ঠিক আগেই আবার যে যার জায়গামত বসে পড়ে। আবার কিছু বাচ্চা আছে, "আল্লাহু আকবর" থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত "ভ্যা এ এ এ এ" করে কাঁদতেই থাকে!
২- বৈষম্য নারী পুরুষ থেকে শুরু করে কোলাকুলিতে গিয়ে ঠেকেছে। "এলিট" গ্রুপ "এলিট" গ্রুপের সাথেই কোলাকুলি করে, মধ্যবিত্তরা সবার সাথেই কোলাকুলির চেষ্টা করে, নিম্নবিত্তরা দূর থেকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে সবার কোলাকুলি দেখে। তবে সবচেয়ে সুন্দর কোলাকুলির দৃশ্য মনে হয় বাবার সাথে ছেলের। সারা বছর সো কলড "অফিসের কাজে ব্যস্ত" থাকা, "টাকা উপার্জনে ব্যস্ত" থাকা বাবারা আজকের দিনে "গম্ভীর" ভাব ছেড়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। যাদের বাবা নাই, তারা এই জিনিসটা ভয়াবহভাবে মিস করেন, আমাকে প্রায় চার বছর হতে চলল বাবা নামের কেও জড়িয়ে ধরেন না
৩- এক মাস না খেয়ে "খিদের" চোটে বাঙালি মুসলমানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে! দানবাক্স থেকে ১০০০ আর ৫০০ টাকার নোটের ভাংতি সমানে নিচ্ছেন। ভালো কাজ একা করলে হয়না, আরেকজনকে উৎসাহ দিতে হয়, তারা সেটা ভালভাবেই করছেন, পাশের জনকে বলছেন " আপনিও ভাংতি করে নেন, এখানে অনেক আছে"। খাবারের বেলায়ও একই দৃশ্য, বুড়িগঙ্গার পানির চেয়েও জঘন্য রকমের "পায়েশ" খেয়ে পুরুষেরা "আয়েশ" করে বলছেন- ভাবী, লাস্ট কবে এত অসাধারণ পায়েশ খেয়েছি, তা মনে নাই। সত্যি বলছি, আমার ক্ষমতা থাকলে আপনার হাত স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করে রাখতাম! আফসোস, বিধাতা আমাকে সেই ক্ষমতা দেন নাই!
৪- ঢাকা শহরের প্রেমিক "যুগলের" সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মোটর সাইকেলের সংখ্যা। প্রত্যেক মোটর সাইকেলে একটা করে জোড়া। পিছনে বসা মেয়েটি তার হাতটি রেখেছে সামনে বসা ছেলেটির কাঁধে, সেই হাত পরম নির্ভরতার হাত। এই অবস্থায় তাঁদের খুনসুটি আর আলাপ চলছে। সেই মোটরসাইকেলকে আমি অনেক ঈর্ষা করি- যে সদ্য প্রেমে পড়া বা প্রেমের বেশ কয়েকবছর পেরিয়ে আসা এইসব যুগলের নিস্পাপ খুনসুটি আর হাসিকান্নার সাক্ষী হয়ে থাকে। আমি মানুষ হয়ে সাক্ষী হতে পারিনা, মোটরসাইকেল "জড়বস্তু" হয়ে আমার চেয়ে ভাগ্যবান
৫- আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে লক্ষ মাইল দূরে থাকা প্রবাসী মানুষদের জন্য একটা বিশেষ ধরনের, সুপারস্পীডের বিমানের ব্যবস্থা করা দরকার। তারা সকালে আসবেন, বাবার সাথে নামাজ পড়ে, কোলাকুলি করে বাবার পা ধরে সালাম করবেন। মায়ের রান্না করা ফিরনি খাবেন। বিকালে ধানমণ্ডি লেক বা টিএসসিতে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার প্লেনে করে আবার বিদেশ চলে যাবেন। জানি এটা সম্ভব না, বলতে গেলে একেবারেই অলীক কল্পনা- তবে মাঝে মাঝে কল্পনা করতে ভাল্লাগে। বাস্তবতা সবসময় ভাল্লাগে না, বাস্তবতা সব চাওয়া পাওয়া পূরণ করেনা, বাস্তবতার কষ্ট সবসময় ভাল্লাগে না।
৬- ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ফিলিস্তিনে ঈদ মানে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়িয়ে যাওয়া, প্রিয় মানুষের লাশ সামনে নিয়ে বসে থাকা, কান্না না থামা, সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সহায় হন।
আমার ঈদ কেমন গেল? ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট "জঘন্য" তবে সালামি পেয়েছি বেশ ভালো লেভেলের! শুধুমাত্র কোমর বাঁকিয়ে প্রায় পরিশ্রম ছাড়াই টাকা ইনকামের এত অসাধারণ পথ আর হয়না। আত্মীয় স্বজন অন্য কোন কাজে আসুক বা না আসুক, অন্তত সেলামি দেয়ার জন্য হলেও প্রত্যেক মানুষের আত্মীয় স্বজন থাকা উচিত!