somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলা সমাচার :)

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১- কেন জানি মনে হয়, যারা বই ভালোবাসেন তাদের চেয়ে যারা "বই ভালোবাসেন না"- বইমেলাতে তাদের সংখ্যা বেশি। বইমেলা তাদের কাছে শুধু ঘোরাঘুরির জায়গা- এর বেশি কিছু না। দুঃখিত, ভুল বললাম, তারা ঘোরাঘুরি করেন না, "ঘোরাঘুরি" শব্দটা আমার মত "ক্ষেত" মানুষের জন্য, তারা "হ্যাংআউট" করেন।

২- একমাত্র বইমেলাতে গেলেই কেন জানি আমার মনে হয়- একটা ভাল চাকরি করে অনেক বেশি করে টাকা কামানো খুব দরকার, খুব বেশি দরকার- কারণ এই "খুব বেশি টাকা" দিয়ে বই কেনা সম্ভব এবং "ইচ্ছা হলে" কিনে দেয়াও সম্ভব।

৩- বইমেলাতে পাঠক সমাবেশ নামক একটা প্রকাশনী আছে- খুন করতে ইচ্ছা করছে আমার এই প্রকাশনীকে! কেন? এত অসাধারণ বইয়ের সংগ্রহ এদের- ইলিয়াড এর অনুবাদ, শহিদুল জহিরের সমগ্র, কাফকা সমগ্র- কি নাই এদের! ইলিয়াড এর অনুবাদের কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পরে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল- অসাধারণ অনুবাদ! তাহলে খুন করার ইচ্ছা কেন? দাম রে ভাই- দাম! ওরে দাম রে বইয়ের! (বাই দ্যা ওয়ে, ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি পাঠক সমাবেশের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর না, পাঠক সমাবেশ ফেসবুকে তাদের মার্কেটিং করে দিতে আমারে কোন টেকাপয়সা কিছু দেয় নাই)

৪- বইমেলাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় হওয়ার কথা ছিল বিভিন্ন নামীদামী প্রকাশনীর স্টলের বাইরে যেমন অন্যপ্রকাশ, সেবা, অবসর, বাতিঘর, ঐতিহ্য, পাঠক সমাবেশ, কাকলী, পার্ল, দিব্যপ্রকাশ ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে , বইমেলাতে সবচেয়ে বেশি ভিড় মনে হয় দেখলাম বাংলা একাডেমীতে অবস্থিত "টেলিটক" এর স্টলের সামনে! সস্তায় হয়ত সেখানে সিম বিক্রি হচ্ছে, ভিড় তাই হয়ত বেশি। বাঙালি জাতি "শিম" সবজি যতটা পছন্দ করে, তার থেকে বেশি ভালোবাসে মনে হয় "সিম" কে।

৫- অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখলাম, জানিনা সবাই বিশ্বাস করবেন কিনা। ভয়াবহ সুন্দরী যাকে বলে "আগুন সুন্দরী" টাইপ এক মেয়েকে দেখলাম অনেকে সেজেগুজে বইমেলাতে এসেছে। অনেকটাই হুমায়ুন আহমেদের "রুপা" চরিত্রের মত মেয়ে, তাকে দেখলাম অন্যপ্রকাশের দিকে যেতে। ভেবে আনন্দ লাগল যে মেয়ে শুধু রাঁধে না, চুল ও বাঁধে মানে শুধু সাজুগুজু করে না, বই ও পছন্দ করে। আরও ভাল লাগলো দেখে যে সে হুমায়ুন সমগ্র একটা হাতে নিল- যাক, আনন্দের ব্যাপার, কে বলে মানুষ বই পড়ে না? কিন্তু আমার জন্য এক টুইস্ট অপেক্ষা করছিল, হুমায়ুন সমগ্র ডান হাতে নিয়ে বা হাত দিয়ে নিজের মোবাইল নিজের সামনে রেখে বইয়ের সাথে একটা "সেলফি" তুলে বইটা স্টলে রেখে দিয়ে মেয়েটা গটগট করে হেঁটে চলে গেল! আমি হা করে তাকিয়েই থাকলাম- জানার আর দেখার আছে অনেক কিছু। হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে হয়ত রসিকতা করে বলতেন- "সেলফি না, ঐটা "বইফি" ছিল, আমার বই ধন্য!"

৬- ইউপিএল প্রকাশনীর স্টলটা দারুণ হয়েছে, বইয়ের আকারে বানানো দোকান, বইয়ের ভিতরে ঢুকে যাওয়া - অদ্ভুত সুন্দর ! এই অদ্ভুত সুন্দর জিনিসই তাদের "কাল" হয়েছে সম্ভবত, সবাই শুধু এই স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে সেলফি, উইফি, কুলফি, বরফি- যত ধরনের "ফি" ফ্রিতে তোলা যায়, তা তুলছে। বইমেলাতে যেই পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটে, তার অর্ধেক মানুষ যদি একটা করে বই কিনতেন, তাহলে কত অসাধারণ একটা ব্যাপার যে হত! হাত ধরে প্রেমিক প্রেমিকা সুন্দর করে বইমেলাত আসছে, আবার সুন্দর করেই বইমেলা থেকে হাতধরে বেরিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই হাতে কোন বই দেখি না। প্রেমের বাজার রমরমা হলেও, বইয়ের বাজার নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। নাহ, একজন মানুষ বইমেলা গিয়ে কি করবে সেই ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর মত এমন কেও না আমি। এই কথাগুলো এই কারণে বলি যে- জাস্ট ১০০ টাকার জন্য বই কিনতে না পারার যেই কষ্ট, সেটা যদি আমি এদেরকে একটু বুঝাতে পারতাম!

৭- কিছু নির্দিষ্ট প্রিয় ভাই ও বোনেরা, দুঃখিত ,আপনারা হয়ত এটা বুঝবেন না, প্রিয় "ব্রো" অ্যান্ড "সিস", বইমেলা যদি আপনার কাছে এতই খারাপ লাগে যে দুই মিনিট পর পর "ওহ গড! দিস প্লেস ইজ সো ন্যাসটি, সো ডার্টি, সো ডাস্টি, কেন যে আসলাম এখানে!? মানুষ কীভাবে থাকে এই ধুলোবালির মাঝে!?" এগুলো বলতে হয় আপনাকে চিৎকার করে, তাহলে কেন আসেন এই ধুলাবালির বইমেলাতে? কে আসতে জোর করেছে আপনাকে? শুধু ধুলোবালিকেই দেখলেন, এত সুন্দর বইগুলোকে চোখে পড়ল না? আর মনে তো রাখা উচিত নিশ্চয় আপনাদের যে- এটা 'মেরিকা নয়, এটা বাংলাদেশ- যেখানে খেলা শব্দের সাথে ধুলো থেকে "খেলাধুলো" হয় , সেখানে বইমেলাতে টুকটাক ধুলো না থাকলে কি হয়, বলেন? :) আর এত সমস্যা হলে এরপর থেকে স্যান্ডেল না পড়ে বুটজুতা বা কেডস পড়ে আসলে উপকার পাবেন :)

বইকে ছুঁয়ে দেখার আনন্দ, কিছু অল্প টাকার জন্য বই কিনতে না পারা, এরপরেও যা কিনেছি তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা আর পরের বছরের বইমেলার জন্য অপেক্ষা করা- এটাই তো আমার প্রাণের মেলা, আমার অমর একুশে বইমেলা :)
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×