১)
বিধবা, বিপত্নীক, অবীরা এই নামগুলার সাথে প্রিয়জনের মৃত্যুকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেওয়া হয়। কাউকে এইসব নামে ডাকা হলে প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি তাকে জোর করে বয়ে বেড়াতে হয়। ফলে সেই স্মৃতি ভুলতে না পেরে সে আর স্বাভাবিক হতে পারেনা। প্রচণ্ড মনোবল নিয়ে সে স্বাভাবিক হতে চাইলেও সমাজে প্রচলিত নাম তাকে সতীদাহ প্রথার মত অসহায় করে রাখে। অথচ কারোর স্বামী অথবা স্ত্রী মারা গেলে সে তার প্রিয়জন হারানোর বেদনা ভুলে থাকতে চাইবে কিনা অথবা আঁকড়ে ধরে রাখবে কিনা এটি তার গোপন অনুভূতি। সেই অনুভূতিকে সমাজে নির্মম ভাবে প্রসিদ্ধ করা হয়েছে কিসের ভিত্তিতে।
এরকম আরেকটি প্রসিদ্ধ নাম রয়েছে, বন্ধ্যা। কি নির্মম! সন্তান না পাওয়ার বেদনাকে পরিহাস করে এই ডাক প্রিয় মায়েদের আলাদা করে পরিচয় করে।
প্রিয় মা, আমি তোমাকে বন্ধ্যা ডাকতে চাইনা।
২)
স্ত্রী মারা গেলে স্বামীরা স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে করতে পারলেও স্বামী মারা গেলে স্ত্রীরা স্বাভাবিক বিয়ে করতে পারেন না। এটি এমন নয় মৃত স্ত্রীদের প্রতি স্বামীর অনুভূতি কম অথবা মৃত স্বামীর প্রতি স্ত্রীর অনুভূতি বেশী।
বরং সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ হইলে অথবা সঙ্গীর মৃত্যু হইলে পুনরায় সংসার করা একটি স্বাভাবিক এবং আবশ্যিক ব্যাপার। পুরুষ শাসিত সমাজে নিজের ইচ্ছেমত পুরুষ ঠিকই এই সুবিধাটি ভোগ করছে কিন্তু নারীরা পারছেনা। এর একটি কারণ হতে পারে নারীদেরকে অদৃশ্য দেবী বানায়ে রাখা হয়েছে। এই দেবী সাজতে গিয়ে অনেক নারীও আর পুনরায় বিয়ে করে স্বামী সংসারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেনা। আবার নারীদেরকে অনুভূতি বিহীন দূর্বল বানিয়েও রাখা হয়েছে। ফলে তার কামনা বাসনাকে সমাজ পাত্তা না দিয়ে জোর করে তাকে একগামী বানিয়ে রেখেছে। আর পুরুষ যেহেতু সমাজের কর্তা তাই সে বহুগামী হয়েছে।
বহুবিবাহ নারী পুরুষ উভয়ের জন্য বৈধ হলেও পুরুষের বহুবিবাহকে সমাজে যেভাবে প্রমোট করা হয়েছে, বারেবারে উচ্চারণ করে যেভাবে স্বাভাবিক করা হয়েছে, নারীর বহুবিবাহকে সেভাবে প্রমোট করা হয়নি। ফলে এক অদৃশ্য লজ্জার আবরণে নারীর অনুভূতি আর চাওয়াগুলো ঢাকা পড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫১