১)
সাকিবকে ম্যাচের ২৫ শতাংশ ফি জরিমানা আর সাকিব-সোহানকে একটা করে ডিমেরিট পয়েন্ট দেওয়া হইছে। সাকিবের শাস্তি আরো বড়(নিষেধাজ্ঞা) হইবার আশংকা ছিল কিন্তু আম্পায়ারের ভুলের কারণে ম্যাচ রেফারি সাকিবের নিয়ন্ত্রণ হারানো আচরণ কনসিডার করেছেন। আম্পায়ারের ভুল প্রমাণিত। এই ভুলের কারণে গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে একবার ইন্ডিয়ার কাছেও বাংলাদেশকে হারতে হইছিল। যেকোন দৃষ্টিতে এইটা অন্যায়। ছোটদলের বিপক্ষে বড়দলের আম্পায়ারের একচোখা নোংরা আচরণ।
কিন্তু বাংলাদেশ তো আর ছোটদল নেই তাই সেবার মুখ চেপে, বুক চেপে ইন্ডিয়ার অন্যায়টা মেনে নিলেও সাকিবের নেতৃত্বে এবারের অন্যায় মেনে নেয়নি।
কর্তৃপক্ষের ভুলের বিরুদ্ধে সাহস করে প্রতিবাদ করলে নিয়ম লঙ্ঘন হইলেও এইটা করা উচিত। সাকিব তাই করেছেন। সাকিবের কথা শুনে মাহমুদুল্লাহ চলে আসলে বাংলাদেশের আর ফাইনালে উঠা হতোনা হয়ত। কিন্তু টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন আর ভীষণ ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ দল মাঠ ছেড়ে চলে আসে নি। বরং ক্রিকেটকে কলুষিত হতে না দিয়ে শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটির জন্যই তারা অপেক্ষা করেছেন। নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন মাহমুদুল্লাহ। আর ভাগ্য যেহেতু বেশিরভাগ সময় সাহসীদের হাতে ধরা দেয় তাই এইবার মাহমুদুল্লাহ ব্যর্থ হননি। বরং পুরো বাংলাদেশকে উৎসবের আনন্দে ভাসিয়ে, ধারা ভাষ্যকার ব্রেট লিকে হা করিয়ে দিয়ে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। শাবাশ!
২)
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সহ সারা বাংলার ক্রিকেট সমর্থকদের উদযাপন করা নাগিন ড্যান্সকে অশ্লীল, উগ্র জাতীয়তাবাদী আচরণ বলে যারা কলুষিত করতে চাইতেছেন তারা জীবনে কখনো উৎসবে বন্ধুর সাথে এমন উদোম ভাবে নাচেন নাই বলেই আমার ধারণা। অথবা হয়ত মনের দিক থেকে বুড়ো হয়ে গেছেন বলে খেলার আবেগ মিশালি আনন্দটি তারা ধরতে পারছেন না।
কোন খেলায় জয়ী হয়ে দলের কোন একজন খেলোয়াড় অথবা সবাই মিলে যে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে নাচ দেয় সেটি পরাজিত দলকে অপমান করার জন্য নয় বরং নিজেদের প্রচণ্ড উচ্ছ্বাসটি প্রকাশ করার জন্যই। ফুটবল খেলায় এই দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায়। গোল করার পর ফুটবলারদের আনন্দ উদযাপনগুলো আরো বেশি অদ্ভুত হয়। এই উদযাপনে কাউকে অপমানের কোন বার্তা থাকেনা। জয়ী হইবার জন্য যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল সেটির বহিঃপ্রকাশ থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ঠিক এই কাজটিই করেছে গতকাল।
৩)
বাংলাদেশ হারার জন্য সুনীল গাভাস্কার দায়ী নয়। কমেন্ট্রি বক্সে বসে ব্রেটলিদের সাথে তামাশা করার সময় তার নাগিন নাচটিও বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে নয় বরং দর্শকদের সাথে উদযাপন করার জন্যই তিনি দিয়েছিলেন। গত ম্যাচ থেকে মাঠের ভেতরে বাইরে সবখানে এই নাগিন নাচ পপুলার হয়েছে। এমনকি মাঠের উপস্থাপিকা পর্যন্ত সাকিব আর মাহমুদুল্লাহকে ক্যামেরার সামনে নাগিন নাচ দেবার জন্য আহবান করেছিলেন। অথচ আমরা হেরে গিয়ে নিজেদের ঘৃণার বিষবাষ্প দর্শক আর সুনীল গাভাস্কারের দিকে ছুড়ে মারতে চাইতেছি। সেদিন শ্রীলংকার সাথে জিতে তাদের মাঠেই তাদের খেলোয়াড় আর দর্শকদের সামনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা এই নাগিন নাচ দিয়েছে। আজকে গাভাস্কারের নাচ যদি অশ্লীল হয় তাহলে সেদিন আমাদের সুজন, সাকিব, মুশিদের নাচটিও অশ্লীল ছিল। কিন্তু আসলে নাগিন নাচ অশ্লীল নয়। এটি একটি মজা, এটি একটি সেলিব্রেশন যা আমরা ক্রিকেট বিশ্বকে শিখিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮