somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিন ভাষার তিনটা ফ্যামেলি ড্রামা সিনেমা নিয়ে আলাপ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আলাপের প্রয়োজনে সিনেমার কাহিনী বলে দেওয়া হইছে।)

ইন্ডিয়ান পরিচালক মিরা নায়েরের মুনসূন ওয়েডিং, তুর্কি পরিচালক কাগান ইরমাকের মাই ফাদার মাই সান আর বাঙ্গালি পরিচালক নন্দিতা-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যুগলের বেলাশেষে এই তিনটা সিনেমা একই সুতায় গাঁথা, শুধু প্রেক্ষাপট আর কালচার আলাদা। সুতাটা হইল ফ্যামেলি ড্রামা। যারা ফ্যামেলি ড্রামা পছন্দ করেন তারা চাইলে সিনেমা তিনটা দেখতে পারেন।

Monsoon Wedding (2001)
মুনসূন ওয়েডিং এর শুরুতে দেখা যায় এক ব্যস্ত বাপ, একমাত্র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঘরদোর সাজায়ে একাকার অবস্থা, বাড়িতে বিরাট আয়োজন। একের পর এক আত্মীয় স্বজন আসতে থাকে। পুরাটা গল্প সেই বাপ, মেয়ে, বিয়ে বাড়ি আর সেখানে আসা আত্মীয়দের নিয়ে। এর মাঝে সিনেমার লেখিকা সাবরিনা ধাওয়ান একটা ইন্টারেস্টিং প্রেমের গল্প ঢুকায়ে দিলেন। লোয়ার ক্লাসের প্রেমরে এই সমাজে যদিও ঠাট্টা হিসাবে দেখা হয় এমনকি সিনেমাগুলাতে তাই দেখানো হয়। সাবরিনা সেই প্রেমরে ঠাট্টাচ্ছলে মানবিক কইরা তুললেন। সিনেমাতে সচরাচর তা দেখান হয়না বলে বিষয়টা ইন্টারেস্টিং ঠেকছে। আরেকটা ব্যাপার হইল সাবরিনা তার গল্পতে সাউথ এশিয়ান দেশ গুলার একটা বাস্তব চিত্র তুইলা ধরছেন। এই চিত্র চাইল্ড এবিউজের। খবরে প্রায়ই শোনা যায় আত্মীয়র দ্বারা এবিউজড হইছে শিশু। ছোট বইলা শিশুটি তখন তা বুঝতে পারেনা কিন্তু বড় হইলে যখন সবকিছু বুঝতে পারে তখন সে একটা ট্রমার মাঝে পড়ে। সেই ট্রমার গল্প দেখাইলেন পরিচালক মিরা। হায়ার মিডল ক্লাস ফ্যামেলিগুলাতে সন্তান বিয়ে করানোর সময় বাপ মায়ের অবস্থা, আত্মীয়দের মাঝে পারস্পরিক বোঝাপরা, সম্পর্কের ব্যাপারে শিক্ষিত ছেলেমেয়ের ছাড় দেবার মানসিকতা এইসব মিলে মুনসূন ওয়েডিং সিনেমা।
মুনসূন ওয়েডিং দেখার পরে মিরা নায়ারের আরো কাজ দেখার জন্য আরেকটি সিনেমা খুঁজে বের করলাম, কামসূত্র- একটা প্রেমের গল্প। ‘৯৬ সালে বানানি ইরোটিক ধাঁচের এই সিনেমার অনেক নামডাক। কিন্তু আদতে গল্প একেবারে দূর্বল। আর্টিস্টিক সিনেমা বানাইতে গিয়ে মনে হইল মিরা এর কামসূত্র নাম থিকাই বের হইতে পারেন নাই। তখনকার আমলে রাজা বাদশাদের বহুগামীতা আর নারীদেরকে নিষ্ঠুরভাবে যৌনদাসী হিসেবে দেখার ব্যাপারটা এই সিনেমাতে তুলে ধরছেন মিরা।



My Father and My Son (2005)
তুর্কি পরিচালক কাগান ইরমাকের মাই ফাদার মাই সান সিনেমার খোঁজ পাইছি মাশুন কিরমিজিগুলের ভেরি ইন্টারস্টিং টার্কিশ সিনেমা দি মিরাকল (মিউসাইজ) দেখার পরে। মিরাকল দেখে তুর্কিদের কালচার সম্পর্কে এত আগ্রহ জন্মাইছিল যে এই ধরণের আরো সিনেমা দেখতে চাইছিলাম।
মাই ফাদার মাই সান(বাবাম ভে ওগলাম) সিনেমাটি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া এক লোকের গল্প যে অনেক বছর পরে তার সন্তানরে নিয়ে আবার তার বাপ-মার কাছে ফিরে আসে। তার ফিরে আসাতে বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যায়। তার মা, তার খালা, তার ভাই সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় শুধু তার বাপ তখনও রাগ করে থাকে। বাপের এই রাগ করে থাকাটা তার ফিরে আসার আনন্দের মতই আবেগী, অভিমানী। বাপ চায় তার ফিরে আসা সন্তানকে সবার মত করে জড়িয়ে ধরতে শুধু কেন তার সন্তান তাকে অমান্য করে এতবছর দূরে চলে গিয়ে গিয়েছিল তাই তার অভিমান। সেই অভিমান একসময় দর্শকের হৃদয়কে ভীষণ ভাবে কড়া নেড়ে যায়। সেই জমানো অভিমান একসময় কান্না হয়ে বানের জলের মতন দর্শককে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। একটা ভীষণ মানবিক গল্পের দিকে আগাতে থাকে কাগানের এই সিনেমা। মাই ফাদার মাই সান দেখার পরে টার্কিশ আরো সিনেমা দেখার লোভ চেপে গেল।

Belaseshe (2015)
বেলাশেষে সিনেমার গল্পটিও পরিবার কেন্দ্রিক। জীবনের একেবারে শেষ সময়ে এসে এক বুড়োর মনে হয় সে সংসার জীবনে সবকিছু পেয়েছে, অর্থ, সুনাম, স্ত্রী, সন্তানাদি, সন্তানদের মানুষ করা, তাদেরকে ভাল ঘরে বিয়ে দেওয়া সবকিছু। কিন্তু তার মনে হয় পুরো সংসার জীবনে একটা জিনিস সে পায়নি। সেই অপূর্ণতা থেকে একদিন বুড়ো সিদ্ধান্ত নেয় তার সারাজীবনের সঙ্গিনী বউকে তালাক দিবে। এই জন্য কোর্টে সে আপিল করে। এদিকে শেষ বয়েসে এসে হুট করে তার এইরকম ছেলেমানুষী সিদ্ধান্তে সন্তানরা অবাক হয়ে যায়। বাবার প্রতি তারা বিরক্তও হয়।
আধুনিক পুঁজিবাদ সমাজে সংসার আর আগের মতন মানবিক নেই। সবাই যেন একটা মোহের পিছনে ছুটতে থাকে। এই ছুটতে ছুটতে এক সময় পারস্পরিক বোঝাপড়া গুলো যে হারিয়ে যেতে থেকে সেইটি পরিচালক নন্দিতা-শিবপ্রসাদ যুগল বেলাশেষে সিনেমাতে দেখিয়েছেন। সংসারে চলার সময় প্রতিদিনকার অভ্যাসগুলোই যে একসময় ভালবাসা হয়ে যায় তা একসময় বুড়ো বুঝতে পারে। বুড়োর সাথে তার সন্তানরা এমনকি দর্শকও তা ফিল করে। একটা মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়ে মনের মাঝে বেলাশেষের গান বাজতে বাজতে সিনেমা শেষ হয়।



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:১৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×