বন্যার পানির একটা বুনো ঘেরান আছে। এই ঘেরান আমি প্রথম পাইছিলাম ১৯৯৮ সালে তারপরে পাইছি ২০০৪ সালে। আটানব্বই সালে রাহিমের জন্ম। সে হইবার কয়েক মাসের মাথায় শুরু হইল ইতিহাসের সবথিকা ভয়ানক বন্যা। দেশের মোট ৬৮ ভাগ এলাকা পানির নিচে তলায় গেছিল। সেই সময় আবার রাহিমের হইল নিউমোনিয়া। তাই তারে নিয়া আব্বার সাথে ভাইয়া আর আমি হাসপাতালে দৌড়াই।
চাইর সালের বন্যার অবস্থা আরো ভয়ানক। ঘরের ভিতর হাঁটু পানি। আমার তখন ১২ বছর। মনে আছে দাদী বাড়িতে আমরা চইলা গেছিলাম। আর ঘরের মাল পাহাড়া দিবার লাইগা আব্বা আর ছোট কাক্কা ঘরের ভিতর খাট উচা কইরা থাকতো। তাদের লাইগা টিফিন বাটিতে কইরা খানি দিয়া যাইবার দায়িত্ব আছিল আমার উপরে।
বন্যা শুরু হইবার সাথে সাথে দুশ্চিন্তায় আমার উপর থিকা আম্মার নজরদারী কমে গেছিল। আমি হইয়া গেছিলাম মুক্ত পাখির মতো। সেই সুযোগে সবুজবাগের রাস্তায় কলাগাছের ভেলাতে করে আমি ভাইসা বেড়াইতাম। ছিপ দিয়া বন্যার পানিতে পুঁটিমাছ ধরতাম। তখন বন্যার পানির বুনো ঘেরানটারে আমি টের পাই। পানির সাথে থাকতে থাকতে সেই ঘেরান এক সময় চিরস্থায়ীভাবে আমার মনে গেঁথে যায়। ঘেরানটার প্রতি ভাল লাগা তৈরি হয়। আজও কোথাও ভারি বর্ষা হয়ে পানি জমে গেলে মনে হয় কোথা থেকে বুনো ঘেরান বেড়িয়ে পড়বে। বানের জলে সবকিছু তলিয়ে যাবে। আর আমি কলাগাছের ভেলায় করে ভেসে বেড়াবো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৯