একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেন, আপনি তো জেমস, হাসান, তুহিন কিংবা অরিজিতদের মতো ওদের গায়কীটা নকল করে গাইতে পারবেন না কিন্তু তবুও তাদের গাওয়া কিছু পছন্দের গান আপনি গাইতে চান। তখন কী করবেন? একা একা গেয়ে রেকর্ড গানটি নিজের কাছেই রেখে দিবেন? বন্ধু বান্ধব আর সোশাল মিডিয়ায় শোনাবেন না?
ধরেন আপনি আপনার গাওয়া জেমসের একটি গান সোশাল মিডিয়ায় শোনালেন। তখন গানটি নিয়ে মিডিয়া মহলে আলোচনা শুরু হলো। বেশীরভাগে বলতে শুরু করলো জেমস তো গানটিকে এইভাবে গায়নি। নিজের মত গেয়ে আপনি গানটির বারোটা বাজিয়ে দিলেন। আবার নিজের ধরণ ছাড়া জেমসের ধরণেও আপনি গানটি গাইতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে কী করার?
সেক্ষেত্রে আসলে কিছু করার নেই। আপনি যেভাবে গানটিকে গেয়েছেন সেইটাই রাইট ওয়ে। গানের বারোটা বাজানো, গানের সুর বিকৃতি, গানের স্টাইল বিকৃতি এইসব গানের বিবর্তৈনিক নেচার। এইভাবে আরেকটা নতুন সুর, নতুন ধরণ আর নতুন গানের জন্ম নেয়। তখন একদল নতুনটিকে গ্রহণ করে আবার আরেকদল পুরোনোটিকেই শুনতে চায়। কিন্তু নতুনটি ঠিকই প্রবেশ করে ফেলে। এবং এই নিয়ে মাতামাতিও শুরু হয়। শিল্পী হাবীব তার গানের এলবাম কৃষ্ণ নিয়ে এইভাবেই শ্রোতা মহলে প্রবেশ করে ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। শিল্পী লিমন নিজের স্টাইলে পুরনো গানগুলো গাচ্ছেন। সম্প্রতি গানবাংলা চ্যানেলের তাপস "উইন্ড অফ চ্যাঞ্জ" নামে নতুন আয়োজনে জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ভারতীয় মিডিয়ায় আজকাল পুরনো গানগুলোকে নতুন করে গাইবার যেন একটা জাগরণ শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই নিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে ছোটখাটো একটা তুমুল আলোচনা হয়েছিল। দুই দলে ভাগ হয়ে আমরা গানের বিকৃতির পক্ষে বিপক্ষে নিয়েছিলাম। আলোচনাটা শুরু হয়েছিল বাউল আবদুল করিমের গান নিয়ে। করিমের দিবস গুলোতে তাকে নিয়ে আলাপ করার সময় যে ব্যাপারটি বারেবারে সামনে চলে আসে তা হলো করিমের গানের বিকৃতি। কেউ বলছেন এটা অনুচিত আবার কেউ সরাসরি না বললেও মিনমিন করে বিকৃতিটাকে মেনে নিচ্ছেন। রবীঠাকুরের গান নিয়েও এমন একটা বিতর্ক প্রচলিত আছে। অনেক ভক্ত চান না তার সুর আর গান বিকৃত হোক। আবার আমার এখন রবীঠাকুরের যে জনপ্রিয় গানগুলো শুনি তার বেশিরভাগ আদি সুর আর আর আদি গায়কীরে বিকৃত করা গান। অথচ দেখুন কী ফিল নিয়ে আমরা তা শুনছি।
আসলে এই ব্যাপারটা কেবল গায়ক অথবা সুর কেন্দ্রিক চিন্তা না করে সময় আর শ্রোতা দিয়েও চিন্তা করতে হবে। শিল্পী মৌসুমি ভৌমিক এমনকি গানের ভাব দিয়েও চিন্তা করার কথা বললেন। একেকটা গানকে মানুষ একেক ভাব নিয়ে শোনে এবং গায়। একই গান কেউ প্রিয়তমাকে ভেবে শুনে আবার কেউ বন্ধু অথবা মা-বাবাকে ভেবে শোনে। ফলে তখন ভাবের তারতম্যের কারণে গায়কীরও পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাছাড়া কন্ঠের রকমভেদেও সুর এবং গায়কীর পরিবর্তন ঘটতে পারে।
মৌসুমি ভৌমিক সিলেটে এসে বাউল করিমকে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আলাপ করার সময় বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বিকৃত গানকে গ্রহণ করার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন।
অবশ্য কেউ চাইলে শুধু আদি সুর কেন্দ্রিক চিন্তাও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তার মাথায় যেই সুর গেঁথে আছে সেইটার ব্যাঘাত ঘটলে তার পছন্দ নাও হতে পারে। এইটা স্বাভাবিক। সুর, গান এইসব আসলে একেকজনের একেক চয়েস। যুক্তি আর উদাহরণ দিয়ে অন্যের পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে ফেক্ট নিয়ে আলোচনা করা যায় অবশ্য।