রংগের আলাদা একটা ব্যাপার আছে। যখন আপনি আর কোনকিছু চিনবেন না তখন রং দেখেও কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। ব্যাপারটা বলি,
সেদিন ক্রোয়েশিয়া বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচে ভাইয়ার বাসায় সবাই মিলে প্রজেক্টরে খেলা দেখতে বসছি। আগের সমীকরণ আর সবকিছু মিলায়ে ইংলিশরা খানিকটা এগিয়ে থাকলেও ভাইয়া আর সুর’দা ছাড়া আমরা সবাই সেদিন ক্রোয়েশিয়ানদের সমর্থক। শুরুতেই ইংল্যান্ড গোল করে খেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে। এমন সময় মেসেঞ্জারে রাব্বি ফোন দিয়ে জানাইল বাসার সবাই ঘুমায় আছে কিন্তু সে আর রিহান এই মাঝরাতে টিভির রুমে বসে খেলা দেখতেছে। কইলাম রিহানের কাছে ফোনটা দিতে। রিহান ফোন নিয়ে আমারে জিগাইল, ভাইয়া তোমার দল কোনডা? আমি কইলাম ক্রোয়েশিয়া। বুঝতে না পেরে সে জিগাইল, সাদা না কালা? রিহান দলের নাম চিনে না, শুধু রং চিনে। তাই কইলাম, আমি কালার দলে। তুই? সে জানাইল তার দল আজকে সাদা।
চোখ মুখ খিচ্চা কইলাম, তর দল পারতো না। আমরা জিতুম। সে দ্বিগুণ রিয়েক্ট করে কইল, আমরা বিশি খেলা পারি, তোমরা পারোনা। এইবার আমি কইলাম, তাইলে ঠিকাছে, আমরা জিতলে তুই আমারে খাওয়াইবি আর তোরা জিতলে আমি খাওয়ামু। বাজিতে রিহান রাজি হইল। ফোন রেখে দুই ভাই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল দেখায় মনযোগ দিলাম।
আটষট্টি মিনিটে ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড় ইভান পেরিসিক গোল শোধ করে ফেলেছে। খেলার উত্তেজনা রীতিমত চরমে। এইবার কোন দল আগে গোল দিতে পারলে মোটামুটি নিশ্চিত ফাইনালে। এমন সময় রিহান ফোন দিলো। আমি ফোন ধরতেই ধমক দিয়া কইলো, অই তুমার দল পাওল। আমি কইলাম, কী করছে? রিহান কইল, তুমার কালা দি খালি আমডারে মারে। বুঝতে পারলাম ক্রোয়েশিয়ার ফাউলরে রিহান স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে নাই তাই ক্ষেপেছে। অগত্যা কালা দলের হইয়া আমারে তার কাছে সরি কইতে হইল।
নব্বই মিনিটের খেলা শেষে দুই দলের স্কোর সমান হওয়ায় খেলা গড়াইল অতিরিক্ত সময়ে। এর মাঝে রিহান আরো কয়েকবার ভিডিও কল করে আমরা কিসে খেলা দেখি তা দেখল। খেলার একেবারে শেষ দিকে এসে ক্রোয়েশিয়ার মান্দজুকিচ হঠাৎ গোল করে কালা দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। রিহান আবার ফোন দিল। আমি কইলাম, ইয়াহু কালা দল জিত্তা যাইতেছে, তরা হারতাছস। ভাইয়াও সেদিন সাদা জার্সির ইংল্যান্ডের সমর্থক ছিল তাই রিহান ভাইয়ারে জানাইল তার পক্ষ থিকা যেন আমারে খাওয়ায়। ভাইয়া তারে আশ্বস্ত করলো। অতঃপর কালা বনাম সাদা দলের খেলা শেষ হইল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৪