একটি দেশের একটি জাতির সবচেয়ে বড় অহংকার তাদের মাতৃভাষা। এই ভাষা কেউ কেড়ে নিতে চাওয়াটাই পাশবিকতা। ঠিক এই কাজটাই করতে চেয়েছিলো পাকিস্তান। উর্দু কে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বানাতে চেয়েছিলো। সেই সময় আমাদের নেতৃস্থানীয় বাঙালী বুদ্ধিজীবীরা উর্দু কে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে মত দেন। ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ উল্লেখ করেছিলেন, "পাকিস্তানে কোনো অংশেই উর্দু স্থানীয় ভাষা ছিল না।" আসলেই তাই। আজ আমি প্রবাসে থাকি। আমার ভিলাতে পাকিস্তানি পাঠানরাই বেশি থাকে। যারা পশতু ভাষায় কথা বলে। এর আগে আমার জানা ছিলো পশতু হলো আফগানিস্তানের ভাষা। কিন্তু পাকিস্তানেও যে এই ভাষা তা জানতাম না। পাকিস্তানে কি করে পাঠানরা এলো সাথে পশতু ভাষা সেটা আরেকটা গল্প। অন্য কোনদিন বলবো হয়তো।
১৯ মার্চ ১৯৪৮ এ ঢাকায় এসে পৌঁছান পাকিস্তানের স্থপতি ও গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ভারত বিভাগের পর এটাই ছিল তার প্রথম পাকিস্তান সফর। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ভাষণে বলেন, "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয়।" এরপরে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়েও তিনি একই ধরণের বক্তব্য রাখেন। (ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে ভাষণকালে জিন্নাহর ছবি)।
এরপরে কি হয়েছে আমরা সবাই তা জানি। একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে তাই আর কিছু বলছি না। যেটা বলতে চাই তা হলো- পাপ ছাড়ে না বাপ কে। যেই জিন্নাহ উর্দুকে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বানাতে চেয়েছিলো। আমাদের বাংলা ভাষাকেই অপমান করেছিলো প্রকৃতিই তার বিচার করেছে। সেই জিন্নাহর কবরেই বাংলাতে লিখা- "জন্মঃ ২৫ শে ডিসেম্বর ১৮৭৬ ইং, মৃত্যুঃ ১১ ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ ইং।" বাংলা ভাষাকেই নিজের কবরে রেখেই শেষ ঘুমটা ঘুমুচ্ছে জিন্নাহ। প্রকৃতির বিচার থেকে কেউ মুক্তি পাবে না।
বিনম্র শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা সেই ভাষা শহীদ এবং সৈনিকদের প্রতি যাদের জন্য আজো বাংলা ভাষাতেই মা কে ডাকি। এই মা ই আমার বাংলা। আমার মাতৃভাষা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২১