somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমালোচনা ব্যাক্তির জন্য কল্যানও বয়ে আনে।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভাবের তাড়নায় গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান 'বরকত মিয়া' লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকা শহরে পাড়ি জমায়।

ঢাকায় কোনো নিকটাত্মীয় না থাকায় তার কপালে কোনো কাজ জোটেনা। থাকার যায়গা নেই।
সে আবার ফিরে আসে গ্রামে।
পেশা হিসেবে বেচে নেয় চুরি। মুরগী চুরি, গাছ চুরি, নারিকেল সুপারি চুরি, কাপড় চুরি, দোকান চুরি সহ কোনো চুরিই বাদ নেই।
সবাই একনামে চেনে বরকত চোরা।
কয়েকবার গনধোলাই খেয়েছে কিন্তু তার স্বভাবের কোনো পরিবর্তন নেই। সেজন্য তার কোনো লজ্জাবোধও নেই।
তার যুক্তি,
অভাবের তাড়নায় লেংটা থাকার চেয়ে চুরি করে কাপড় পরে থাকাই উত্তম। গনধোলাইয়ের চেয়ে লেংটা থাকাটা বেশি লজ্জাস্কর।

বরকতের মা ছেলেকে নিয়ে পড়লেন মহাবিপাকে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায়না। গনধোলাই খেয়ে খেয়ে ছেলেটা কঙ্কালের মতো হয়ে গেছে। নিজের গ্রামের মানুষ, হাল্কার উপর ঝাপসা মেরে ছেড়ে দেয়।
অন্য কোথাও ধরা পড়লে নিশ্চিত হাত পা ভেঙ্গে দেবে।
গ্রামের একজন মুরব্বীর পরামর্শে তিনি ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিলেন। বিয়ে করে সংসারী হবে।
পাত্রীপক্ষকে শর্ত দিলেন, বিয়ের যৌতুক হিসেবে বরকতকে বিদেশ পাঠাতে হবে। বিদেশ পাঠানোর সম্পুর্ন খরচ পাত্রীপক্ষের।
মেয়ের গায়ের রঙ কালো হওয়ায় রাজী হলো পাত্রীপক্ষ।

আমাদের সমাজে কালো মেয়েদের চাহিদা নেই। জন্মের পর থেকেই তারা সংসারের বোঝা। কালো রঙের মেয়েরাও যে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করতে পারে তা আমাদের অনেকেরই অজানা।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে গায়ের রঙ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়না। ব্যাক্তির গুনই তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।
বরকতের বউয়ের গায়ের রঙ কালো হলেও চেহারাটা অনেক মায়াবী।

বিয়ের কিছুদিন পর ভিসা পেয়ে সৌদী আরবে পাড়ি জমালো বরকত। প্রায় তিন বছর একটা ইন্ডিয়ান হোটেলে অল্প বেতনে প্লেট ধোয়ার কাজ করতো সে। সন্ধার পর পার্টটাইম জব হিসেবে অন্য একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানীর লেবারদের জন্য রান্নার কাজ করতো। মোটামুটিভাবে চলছিলো তার সংসার জীবন।
সৌদী আরবে শুক্রবার ছুটির দিন। জুমার নামাজের সময় হোটেলের পাশের দোকানের তালা ভেঙ্গে দামী আসবাবপত্র আর নগদ টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায় বরকত। অবৈধভাবে বাই রোডে চলে আসে ওমান। সৌদী থেকে পালানোর আগেই তার বন্ধুর মাধ্যমে সব টাকা পয়সা পাঠিয়ে দেয় বউয়ের অ্যাকাউন্টে।
ওমানে কিছুদিন জেল খেটে ফিরে আসে দেশে।

গ্রামে গিয়ে নতুনভাবে বাড়িঘর তৈরী করে বরকত মিয়া।
চোর উপাধি বাদ দিয়ে গ্রামবাসীর সামনে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। গ্রামের চারটা মসজিদে ১০ হাজার টাকা করে ৪০ হাজার টাকার অনুদান দেয়। মানুষকে দাওয়াত করে ভালোমন্দ খাওয়ার আয়োজন করে।
খাওয়ানোর উদ্দেশ্য, তার প্রতি অনেকেরই পুরনো ক্ষোভ আছে। তারা যাতে ক্ষমা করে নতুনভাবে তাকে গ্রহন করে নেয়।
বাড়ির সামনে বিরাটাকারের একটা গেইট করে 'বরকত উল্যা মঞ্জিল' লিখে রেখেছে। এতে কোনো লাভ হয়নি। বরকত উল্যা মঞ্জিল বললে কেউ চেনেনা।
গ্রামে বরকত চোরা বলে ডাকে সবাই। তার বউকে ডাকে বরকত চোরার বউ… শুনতে তার লজ্জা লাগে।
কি করবে ভেবে পায়না।
ঘনিষ্ট সহযোগী নূর হোসেনকে সাথে নিয়ে চলে আসে ঢাকায়।
ঢাকায় বসে বসে ভাবে কিভাবে তার চোর উপাধিটা গ্রামের মানুষের মন থেকে মুছে ফেলা যায়।
নূর হোসেনকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় আর বুদ্ধি খোঁজে।

হঠাৎ বরকতের চোখে পড়লো দেয়ালভর্তি নির্বাচনী পোস্টার প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে আসে ঢাকা শহরের অলিগলি। দুইমাস পরই ইউপি নির্বাচন।
বরকত মনস্থির করলো সে নির্বাচন করবে। এছাড়া তার বদনাম ঘোচানোর অন্য কোনো পথ নেই।

নূর হোসেনকে ডেকে বললো, তুই গ্রামে যা।
ইসমাঈল মিয়ার দোকানে গিয়ে বলবি আপনারা কেউ কি শুনেছেন? বরকত ভাই চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এরপর কে কি মন্তব্য করে আমাকে জানাবি।

যথারীতি নূর হোসেন গ্রামে গেলো। ইসমাঈল মিয়ার দোকানে গিয়ে বরকতের চেয়ারম্যান নির্বাচনের কথা তুলে ধরলো।
শুনে সবাই হতবাক !
বলিস কী !!
চেয়ারম্যান নির্বাচন করবে বরকত চোরা?
অবস্থা এমন, যেনো এই গ্রামে স্মরণকালের সেরা কৌতুক শুনলো সবাই। কেউ হাসছে, কেউ ভেটকি মারছে, আবার কেউ গালিও দিচ্ছে।

খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা গ্রামে। গ্রামের মানুষ গুজবে বিশ্বাসী। আর গুজব ছড়াতে দেরী হয়না। বিদ্যুতের গতির চেয়েও গুজবের গতির বেগ বেশি।
নূর হোসেন ফোনে জানায় সবকিছু। বরকতকে অনুরোধ করে; ভাইজান নির্বাচন করার দরকার নাই। এমনিতেই ভালো আছেন। অনেকে গালাগালি করছে। আপনি বরং সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিদেশ ফেরত যান। এই দেশে ভালোমানুষের ভাত নাই।

ততদিনে বরকতের মোবাইলে গ্রামের নামিদামী ব্যাক্তিদের ফোন চলে আসে। তার আশেপাশের গ্রামের অন্যান্য প্রার্থীরা তাকে ফোন দেয়। নির্বাচন থেকে সরে আসার অনুরোধ করে।
এতে বরকত আরো অনুপ্রাণিত হয়। সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত... বরকত নির্বাচন করবেই।

নূর হোসেনকে বলে তুই তোর কাজ চালিয়ে যা। আশেপাশের গ্রামে গিয়ে প্রত্যেক চা দোকানে বিষয়টা তুলে ধরবি। এটাই তোর চাকরি।

বরকত তার নির্বাচনী এলাকায় জনগনের দোয়া চেয়ে পোস্টার ছাপায়। আশেপাশের গ্রামে মসজিদ মন্দির এতিমখানা আর ব্রিজ মেরামতের জন্য আর্থিক অনুদান দেয় সে। গ্রামের কিছু ছেলেকে টাকা দিয়ে বড় আকারে একটা মিছিলের আয়োজনও করে।
চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে বরকতের সুনাম। বরকতের জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীরা ঈর্শান্বিত হয়ে পড়ে। মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসে। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য বরকতকে অনুরোধ করে।

বরকত নাছোড়বান্দা।
কোনোভাবেই সে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেনা। এই নির্বাচনে তাকে জিততেই হবে। তা না হলে জীবনের কাছে সে হেরে যাবে।
ততদিনে বরকতকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য অনেক রাজনীতিবিদরা এগিয়ে আসে।

নির্বাচনের নমিনেশান পেপার সাবমিট করা হলো বরকত উল্যা চৌধুরী নাম দিয়ে। মার্কা এলো আনারস।
আনারসের জোয়ারে তার নির্বাচনী এলাকা আনারসময়। চতুর্দিকে ব্যানার ফেস্টুন আর বরকতের ছবি সংবলিত রঙ বেরঙের পোস্টার। কেউ কেউ আনারস নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রিকশা সি এনজির পেছনে বরকতের ছবি শোভা পাচ্ছে।
প্রত্যেক দোকানে ঝুলছে তাজা আনারস।

যথারীতি নির্বাচন হলো। বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করলো বরকতের আনারস।
তার আনন্দের সীমা নেই। দশ গ্রামের মানুষের জন্য জিয়াফতের আয়োজন করলো।
দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়লো তার বিজয়ের খবর। পত্রিকায়ও ছাপা হলো।

বরকত মঞ্জিল নাম কেটে বাড়ির গেইটে লিখে দিলো বরকত উল্যা চেয়ারম্যানের বাড়ি।
কেউ আর বরকত চোরা ডাকেনা। এক নামে পরিচিত- বরকত উল্যা চেয়ারম্যান।
তার বউকে ডাকে চেয়ারম্যানের বউ। মেয়েকে ডাকে চেয়াম্যানের মেয়ে।
বরকতের জীবনের মোড় ঘুরে গেলো!!

কিন্তু দুঃখের বিষয়; বরকতের এই সুখ তার মা দেখে যেতে পারেন নি। বরকত সৌদী যাওয়ার নয় মাসের মাথায় ক্যান্সারে মারা যান বরকতের মা।
অল্প বেতনের চাকরি হওয়ায় মা’কে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিলোনা তার।
আজ তার এতো টাকা পয়সা। এতো বিলাসবহুল জীবনযাপন।

মায়ের নামে একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে বরকত।
নিজের মেয়ের নামে একটা কে.জি স্কুল।
বরকত কে দেখলে এলাকার বড় ছোট সবাই সালাম দেয়। সম্মান করে কথা বলে।

বরকত তার এলাকার মানুষের বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়েছে। কারন তারাই বরকতকে ভাগ্য জয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।


বরকত চোরা থেকে বরকত উল্যাহ চেয়ারম্যান।

লাইফ স্টাইল চেঞ্জড...


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৪
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×