শহরের একটা পার্কের রকে বসে এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমার সামনে খেলা করছিল চার পাঁচটা কুকুর। তাদের মধ্যে একটা বৃদ্ধ কুকুর একটু অস্বাভাবিক আচরন করছিল। কুকুরটা মলত্যাগের জন্য বার বার চেষ্টা করে করে ব্যর্থ হচ্ছিল। তখন হঠাৎ আমার একটা রোগের কথা মনেপড়ে গেলো। রোগটার নাম, প্রোসটেট পরিবর্ধন। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় prostate enlargement. কুকুরের সাথে মানুষের যে কয়েকটা রোগের মিল আছে তার মধ্যে জলাতংক ও প্রোসটেট পরিবর্ধন অন্যতম। জলাতংক আজকে আমার আলচ্য বিষয় নয় আজ আমি বলতে চাইছি প্রোসটেট এনলার্জমেন্ট সম্পর্কে। প্রোসটেট এনলার্জমেন্ট রোগটি বয়স্ক পুরুষ মানুষ আর বয়স্ক পুরুষ কুকুরের হয়।
প্রোসটেট নামে পুরুষ মানুষের শরীরে একপ্রকার গ্ল্যান্ড থাকে। পঞ্চাশের অধিক বয়স বিশেষত ষাট সত্তর বছর বয়সে পুরুষের প্রোসটেট গ্ল্যান্ড আকারে বড় হয়। প্রোসটেট গ্ল্যান্ড, দুটো হরমোনের গতিবিধি পরিচালনা করে। একটি এন্ড্রোজেন, অপরটি এস্ট্রোজেন। বয়স বাড়বার সঙ্গে সঙ্গে এন্ড্রোজেন হরমোন ক্রমশ কমে আসে কিন্তু এস্ট্রোজেন একই অনুপাতে কমে না। এস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যে প্রোসটেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যায়, আসল কথা হল এন্ড্রোজেন এবং এস্ট্রোজেন হরমোন দুটোর পরিমাণগত অসামঞ্জস্যই প্রোসটেট বড় হওয়ার মূল কারণ।
এই রোগের প্রধান উপসর্গ ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, প্রথমে রাতে, এরপর রাত এবং দিন উভয় সময়ে। পুনঃ পুনঃ এবং দু’তিন ফোঁটা প্রস্রাবের অস্বস্তি, তার উপর প্রস্রাব করার সময় বিষম জ্বালাপোড়াও অনুভূত হয়। নিজ ইচ্ছায় প্রস্রাবের আরম্ভ, গতি ও সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হয় না ইত্যাদি। পুরুষের জন্য প্রোসটেট এনলার্জমেন্টের একটা এডভান্টেজ অথবা এডভান্টেজ হলঃ “নিভে যাওয়ার আগে প্রদীপ যেমন হঠাৎ দপ করে জ্বলে উঠে তেমনি প্রোসটেট বড় হওয়ার প্রথম দিকে পুরুষের যৌন উত্তেজনা হঠাৎ বৃদ্ধি পায় যদিও শেষদিকে পুরুষত্বহীনতাই স্থায়ী হয়”
কুকুরের ক্ষেত্রে যা হয় সেটি হলঃ প্রোসটেট উপরের দিকে ঠেলে বড় হওয়ার কারণে কুকুরের মলনালী সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে মলনালী সারাক্ষণ ভরা ভরা ঠেকে এবং মলত্যাগের যে চেষ্টা বুড়ো কুকুরেরা করে যায় তা অর্থহীন এবং যন্ত্রণাদায়ক।
প্রোসটেট হঠাৎ রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে ষাট-সত্তর বয়সের সেইসব বুড়ো পুরুষ, যারা কামোদ্দীপনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে উঠে এবং অনেকে এই বিয়েকে ন্যায়সঙ্গত করার জন্য নানারকম যুক্তি তৈরি করেন। যেমন বুড়ো বয়সে যত্ন করবার কেও নেই অথবা আমাদের রসুলুল্লাহ নবী, দৃষ্টান্ত দিয়ে গেছেন-ইত্যাদি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাময়িক যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, তাই তারা কোনও বয়স্ক মহিলা নয়, কিশোরী থেকে যুবতী পর্যন্ত মেয়েদের বিয়ে করবার আগ্রহ প্রকাশ করে।
পৃথিবীর যত বুড়ো রোগী এই অবস্থায় বিয়ে করে, সাময়িক কামোত্তেজনা নির্বাপিত হলেই তারা পুরুষত্বহীনতায় ভোগে।সাভাবিক তখন সেইসব বালিকা, কিশোরী এবং যুবতীর জীবনে যে দুর্ভোগ নেমে আসে তা এমন কেউ নেই যে না জানে। এমন কে আছে যে জানে না একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে সচ্ছলতার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, শেষ অবধি সেই মেয়ে জীবনের দায়ভার অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দিয়ে কেবল দুটো ভাত-কাপড়ের জন্য কি নির্মম ভাবে বেঁচে থাকে!
............................................................................................................
রেল মন্ত্রীর বিয়ে তাই নিয়ে চরম হইচই চলছে।সুশীলরাও অভিনন্দনে ব্যাস্ত। যেহেতু দেশের আইনে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর নুন্যতম বয়েসের বিধান আছে কিন্তু সর্বোচ্চ বয়সের বিধান নেই। তাই রেলমন্ত্রীর বিয়ে আইনগতভাবে অবৈধ নয়।আর আমার লিখার প্রথমাংশের উদ্দেশ্য রেল মন্ত্রিকে প্রোসটেট এনলার্জমেন্টে আক্রান্ত প্রমান করা নয়। কিংবা ব্যক্তি রেল মন্ত্রীর সমালচনা করাও নয়। কিন্তু আমি তাকে অভিন্দন জানাতে পারছিনা এই জন্য যে। সতিদাহ প্রথার মৃত্যু হয়েছে প্রায় দু’শ বছর হয়ে গেলো, আমাদের সমাজ থেকে বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি কমতে শুরু করেছে আর বাড়ছে সামাজিক সংস্কার এবং সম্পর্কের গভিরতা। নারী পুরুষের বিবাহের বয়সের ব্যবধান কমে আসছে। যদি একটি গ্রামের একটি পরিবারের একজন বয়স্ক লোক হঠৎ বিয়ে পাগল হয়ে তার অর্ধেক বয়সের চেয়েও কম বয়সি মেয়েকি বিয়ে করতে চাই তবে সমাজ ও তার পরিবারের অনেকেই এটাকে ভালভাবে নেয়না। ঠিক এমন একটি সময়ে একজন রাষ্ট্রীয় জনপ্রতিনিধি এমন একটি অস্বাভাবিক কাজকে স্বিকৃতি দিয়ে দিলেন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ভাবে তার অনেক অনুসারী আছেন। হিন্দি গজনী সিনেমা দেখে যদি আমির খানের ভক্তরা সাধের চুল ন্যাড়া করে রেখা টানার জোয়ারে ভাষতে পারেন তবে এই বিয়ে দ্বারা সমাজে সংক্রামিত হতে পারে প্রোসটেট এনলার্জমেন্ট।
ইশ্বর চন্দ্র বিদ্যার সাগর বিধবা বিবাহের প্রচলন করতে নিজের ছেলেকে বিধবার সাথে বিয়ে দিয়ে নিদর্শন তৈরী করেছিলেন যা ছিল সমাজ ও নারীর জন্য মঙ্গলকর। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধি যদি মানুষিক প্রোসটেট এনলার্জমেন্ট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন নিদর্শন সৃষ্ট্রি করে তবে তার প্রভাব কিন্তু রাষ্ট্রও রাষ্ট্রের সভ্যদের উপরই পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:০৩