somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম কক্সবাজার

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই পিএল এর মধ্যে হঠাৎ ই একদিন ভাইয়া বলল কক্সবাজার যাবো নাকি ওদের সাথে , শুনে খুবই শখ হইল যাওয়ার কিন্তু আম্মু কোনদিনই যাইতে দিবে না একা ওদের সাথে :((। আমি কোনদিন কক্সবাজার যাই নাই , খুবই শখ একবারের জন্য হলেও যাওয়ার ।তারপর শুরু করলাম আমি আর ভাইয়া মিলে আম্মুকে পটানো :P । অনেক পটানোর পর আম্মু পারমিশন দিল যাওয়ার :) । আমার খুশি আর দেখে কে !! নানুর কাছ থেকে বিশাল একটা ব্যাগ নিলাম, থাকব মাত্র ২ দিন আর ২ রাততো বাসেই কেটে যাবে । কিন্তু আমার প্রস্তুতি দেখে যে কেউ ভাববে আমি মনে হয় এক মাস এর জন্য ঘুরতে যাইতেসি :P । নেট এ যার সাথেই কথা হয় তাকেই বলি আমি কক্সবাজার যাইতেসি , যে কেউ ভাববে আমি মনে হয় আদ্দিখ্যেতা করতেসি , কিন্তু প্রথমবার এত দূরে যাওয়ার কথা মনে করে আমি যে কি পরিমান উত্তেজিত বাসার কেউ ছাড়া অন্য কেউ আসলে বুঝবে না :| । আমি লিস্ট করে করে একএকটা জিনিস ব্যাগে ভরতেসিলাম :P । ক্যামেরা , চার্জার, টাকার ব্যাগ , চকলেট , চিরুনী আরও কত কিছু !!!! ও আরও একটা জিনিস তা হইল স্যানগ্লাস:P । আমি আমার জীবনে কোন দিন এই বস্তু চোখে দিয়া দেখি নাই , কয়েকদিন আগেই ছোটনানু (নানুর বোন )লন্ডন থেকে আসার সময় আমার জন্য একটা স্যানগ্লাস নিয়া আসছে , এটা দেখে আমাদের সবার কি হাসাহাসি। আমি এইটা দিয়া কি করব , এমনেই চোখে একটা শিয়াল পন্ডিত এর মতন হাই পাওয়ার চশমা যা ছাড়া চোখে কিছু দেখিনা , সানগ্লাস কোই পড়ব :P
আমার আসলে এখনও বিশ্বাস হইতেসিলনা আম্মু আসলেই আমাকে যাইতে দিবে , আমার মনে হইতেসিল শেষ মুহূর্তে আম্মু বলবে থাক আমাকে ছাড়া এত দূরে তোমার একলা যাওয়ার দরকার নাই (যদিও আম্মুকে অনেক বার সাধাসাধি করা হইসে কিন্তু আম্মু আম্মুর প্রিয় অফিস ছেড়ে যাবেনা (অফিসে বেস্ট এটেন্ডেন্স অ্যাওয়ার্ড থাকলে আম্মু ১০০% তা পাইত ))। আমার ফ্রেন্ডরাও বিশ্বাস করতে পারতেসিল না আসলেই আমি পিএল এর সময় ঘুরতে যাইতেসি(আঁতেল গোষ্ঠী ;) ) , কয়েকটা তো বলসে আন্টি শেষ পর্যন্ত তোরে যাইতে দিবে না (আসলে ঐ গুলা হিংসিত X( ) । যাওয়ার আগের দিন রাতে শখ করে কাপড় ইস্ত্রী করতে গেলাম (এই একটা কাজ আমার অসহ্য লাগে X( ,তাই বেশিরভাগ সময়ই ইস্ত্রী ছাড়া কাপড় পড়ে দৌড় দেই :P ) । ডিশের লাইন থেকে "অন্তঃহীন" দেখাইতেসে + নানুর সাথে কথা বলতেসিলাম । হঠাৎ গরম ইস্ত্রী হাতে লেগে গেল :(( । অনেকটুক হাত পুড়ে গেল :(( । এখনও হাত পুড়া /:) । পুরা কক্সবাজার টুরে আমার সব ছবিতে পোড়া হাত দেখা যাইতেসে /:)

অবশেষ এ বুধবার রাতে ঈগল বাসে চরে কক্সবাজার এর উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম । আম্মু বাসে উঠায়ে দিতে আসছিল আমাদের । মোট আমরা ৫ জন গেলাম - ভাইয়া , ওর বঊ , আমি আর ভাইয়ার ২ টা মামাতো শালী । সে কি লম্বা জার্নি /:) । বাস ছাড়ল ১১:৩০ টায় আর পুরা সাড়ে ১১ ঘন্টা পর আমরা কক্সবাজার পৌঁছালাম । নেমেই আগে আসার টিকেট করে ফেললাম ।তারপর গেলাম হোটেল খুজতে ।সব হোটেল ই দেখি ফুল /:) , অবশেষ এ একটা হোটেল পেলাম "হোটেল কল্লোল" বিচ এর একদম সামনে । ঐখানে সকালের নাস্তা করে বের হলাম "ইনানী বিচ" আর "হিমছড়ির " উদ্দ্যেশে । আর আমাদের বাহন হল "টুকটুক"(চার্জ দিয়ে চলে আর দেখতে আমাদের সিএনজির মতন কিন্তু ২ পাশে সিট)। টুকটুক জিনিসটা আমার অনেক পছন্দ হইসে কি সুন্দর বাতাস খেতে খেতে আর রাস্তা দেখতে দেখতে যাওয়া যায় :) । ইনানী বিচ এ পৌছে আমাদের খুশি দেখে কে :D । জীবনে প্রথম বারের মতন সমুদ্র দেখা এটা আসলেই অন্য রকম অনুভূতি ।
ওখান থেকে আমরা গেলাম হিমছড়িতে । কি কষ্ট পাহাড়ে উঠা , যদিও সিড়ি কাটা তাও /:) । ওখান থেকে সব কিছু কত ছোট দেখা যায় !!।
ওখান থেকে আমরা হোটেল এ চলে আসলাম । বিকাল ৫:৩০ টায় দুপুরের খাওয়া খেলাম । তারপর ফ্রেশ হয়ে গেলাম বিচ এ । আমরা যখন পৌছালাম তখন সূযার্স্ত শেষ X( ।তাও পানিতে কিছুক্ষন লাফালাফি করলাম । আবার কাপড় চোপড় এর ১২ টা বেজে গেল /:) । এরপর আবার ফ্রেশ হয়ে গেলাম মার্কেটে । প্রথম গেলাম ঝিনুক মার্কেট এ । তারপর গেলাম বার্মিজ মার্কেট এ ।কেনাকাটা শেষ করে হোটেল এ আসতে আসতে ১২ টা বেজে গেল , হোটেল এর খাওয়ার দোকান বন্ধ হয়ে গেসে ততক্ষণ এ /:) । ১২ টায় আমরা বের হলাম খাওয়ার হোটেল খুঁজতে। একটা রেস্টুরেন্ট খোলা দেখে ঢুকলাম কিন্তু ওখানেও খাওয়া শেষ । তারপর আরো কিছুদূর যাওয়ার পর একটা হোটেল খোলা পেলাম , ওদের কর্মচারীরাও আমাদের সাথেই খেতে বসল , মানে ওদেরও হোটেল বন্ধ এর টাইম হয়ে গেসিল :P। অনেক আওয়াজ শুনে বাইরে এসে দেখলাম সামনেই আদিবাসী মেলার অনুষ্ঠান হইতেসে । খাওয়া দাওয়া শেষ এ হোটেল এ এসে সব লম্বা ঘুম । পরেরদিন ৬:৩০ টায় আবার টেকনাফ যাওয়ার বাস ধরতে হবে । আমরা সেন্টমার্টিন গেলাম প্যাকেজ এ । ৭০০ টাকার প্যাকেজ । সকালে ওরাই হোটেল থেকে আমাদের নিয়া যাবে বাসে ওখান থেকে সোজা টেকনাফ । ওখানে গিয়ে সকালের নাস্তা দিবে । তারপর লঞ্চ এ করে সোজা সেন্টমার্টিন পৌছাবে ১২ টার দিকে। তারপর ওখানেই দুপুরের খাবার দিবে ওরা । আবার ৩ টার মধ্যে লঞ্চ এ উঠতে হবে । আবার টেকনাফ এ এসে বাসে করে ওরা কক্সবাজের হোটেল এ নামাবে । মাঝখানে বিকালের নাস্তা দিবে । আমার কাছে প্যাকেজটাকে অনেক রিজেনেবল মনে হইসে + অনেক সেফ ও । কারন ওদের গাইডরা সারাক্ষণ আমাদের দেখাশোনা করতেসিল , আমরা ঠিক মতন বাসে /লঞ্চ এ উঠসি কিনা। নিজেরা নিজেরা গেলে হয়ত নানা ভেজাল এর সম্মুক্ষীন হইতে হইত।

আম্মুকে আমরা বলি নাই যে আমরা সেন্টমার্টিন যাইতেসি , আম্মু শুনলে মানা করত ।আম্মু পানি অনেক ভয় পায় । যাওয়ার আগে ১৪ বার করে বলসে পানিতে বেশী নামবা না দূরে দূরে থাকবা । আমরা সেন্টমার্টিন ১২ টার দিকে পৌঁছালাম । তারপর ভ্যানগাড়িতে চড়ে ঘুরতে বের হলাম । রাস্তা গুলা খুবই সরু । ২টা ভ্যানগাড়ি পাশাপাশি চলতে গিয়া ধাক্কা খায় ।
আমাদের গাইড বলল হোটেল অবকাশ এ যাইতে ঐখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা । ওখানে গিয়া কোন রকম এ একটু খেয়ে দৌড়ালাম পানির দিকে । কি যে মজা লাগতেসিল!! একবার এদিক যাই আরেকবার ওদিক , আর ছবি তুলতে তুলতে তো হাত ব্যাথাই হয়ে গেসিল ।এই অবস্থায় আম্মু ফোন দিল । জিজ্ঞাস করল "কি করো?" । আমি বললাম এইতো হোটেল এ বসে আসি:P । আরও বেশ কয়েকবার আম্মু ফোন করসিল আমি বারবার বলসি "হোটেল এ" ।গুনাহতো হইসে মিথ্যা বলসি কিন্তু সত্যি বললে আম্মুর টেনশন এ আবার প্রেশার বেড়ে যাইত /:) । ৩ টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে রওয়ানা হলাম ।কক্সবাজার পৌছালাম ৮টার দিকে । আমরা আমাদের ব্যাগট্যাগ হোটেল এ রেখে গেসিলাম ।ঐগুলা নিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে বের হলাম হোটেল থেকে ।আমরা গেলাম ঝিনুক মার্কেট এর দিকে , ঈগল এর কাউন্টার ঐটার কাছেই । ঝিনুক মার্কেট এ আমি শামুকের উপর নাম লিখাইতে দিসিলাম আগেরদিন ,ঐ গুলা ওখান থেকে নিলাম আর বাসার জন্য শুটকি কিনলাম । জীবনে প্রথম বারের মতন নিজের টাকা দিয়া এই জাতীয় জিনিস কিনলাম:P । আম্মু আমাকে ১০০০ টাকা দিসিল আর আমি নিজে ১০০০ টাকা নিয়া গেসিলাম ,একটা টাকাও ফেরত আসে নাই । সবার জন্যই টুকটাক কিছু কিনসি । প্রথম বার মনে হয় টাকা শেষ হওয়ার পরও দুঃখ লাগেনাই মনে:) (আমি এমনে মহা কিপটা মারাত্নক পয়সার হিসাব করি :P) ।
অবশেষ এ বাস ছাড়ল ১০:৩০ টায়। আমি মনে মনে বলতেসিলাম অনেক দেখসি সমুদ্র আর ভিড়হীন কক্সবাজার কিন্তু ঢাকাকে যতই গালি দেই ২/১ দিন ঘুরতে যাওয়ার জন্য কক্সবাজার ঠিক ই আসে , কিন্তু আমার ঢাকা শহরই ভাল :) , কখন পৌছাব ঢাকা !!!। ঢাকায় পৌঁছালাম সকাল সাতটায়। আম্মু ভাবেও নাই এত সকাল আমরা পৌঁছায় যাবো , গাড়ি মাত্র তখন বাসা থেকে রওয়ানা দিসে । আমরা সায়েদাবাদের কাছে একটা চায়ের দোকান এর বেঞ্চের উপর বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম । একটু পর গাড়ি আসল ,গাড়িতে চড়ে আবার ব্যাক টু টা প্যাভিলিয়ান "হোম সুইট হোম" ।
শেষ এ কিছু ছবি কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন এ তোলা :











































সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:০২
৩৫টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×