ইত্তেফাক ছেড়ে নাকি ধরে আলোকিত বাংলাদেশ ময়মনসিংহের ফটো সাংবাদিক এর লেখা আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় দেখে আশ্চর্য হলাম । ইত্তেফাক হয়তো বুঝতে পেয়েছে ইত্তেফাকের সাংবাদিক হওয়া খুবই কঠিন ।বিষমুক্ত ফল-সবজির বাগানে সফলতা পেয়েছেন সেলিনা
শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ : ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১৪
বাড়ির আঙিনায় বিষমুক্ত ফল, সবজি ও মশলার বাগান গড়ে তুলে সফল হয়েছেন ময়মনসিংহের গৃহবধূ সেলিনা বেগম। এরই মধ্যে ব্যাপক সুনামও কুড়িয়েছেন তিনি। শহরে বাস করেও সন্তানদের মুখে বিষমুক্ত খাবার তুলে দেয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত গড়েছেন। একই সঙ্গে ফলের ব্যবসা দিয়েই বাড়তি আয় করছেন তিনি। সংসারের পাশাপাশি এই বাগানটি এখন তার নিজস্ব আরেক ভুবন হয়ে উঠেছে। জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের বীর কামটখালী গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ সেলিনা বেগম। স্বামীর চাকরির সূত্রে সেলিনা বেগম এখন বসবাস করেন ময়মনসিংহ শহরে। সেলিনা বেগম জানান, গ্রামের জীবনযাপন পদ্ধতির সঙ্গে শহরের জীবনযাপন ব্যবস্থা অনেকটা ভিন্ন। শহরে পানি থেকে শুরু করে সবকিছুই টাকার বিনিময়ে পেতে হয়। কিন্তু সেখানে ভেজালমুক্ত খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন। টাকা দিয়ে ভেজাল খাবার কিনতে হয়, যা জীবনের জন্য বড় রকমের হুমকি। তার সন্তানদের জীবন হুমকির মুখে পড়ুুক তা তিনি কোনো মতেই চান না। সেলিনা বলেন, ভেজাল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে অবসর সময়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলতেন। দুজন একমতে পেঁৗছে শুরু করেন বাগান গড়ার উদ্যোগ।সেলিনা ময়মনসিংহ, বগুড়াসহ স্থানীয়ভাবেও বিভিন্ন নার্সারি ঘুরে প্রায় ৩৬৫ প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে তার বাগানে রোপণ করেন। এর মধ্যে এখন আছে আম, কাঁঠাল, মাল্টা, আপেল, লেবু, কমলা, আঙুর, বেদানা, নাসপাতি, আনার, বুগি, বরই, জাম, কাঠবাদাম, আমলকী ছাড়াও নানা প্রজাতির ফলের গাছ। আছে দারুচিনি, পানবিলাস, তেজপাতা, এলাচি, মেথি, লবঙ্গসহ নানা ধরনের মশলার গাছ। ঔষধি গাছের মধ্যে রয়েছে নিম, চন্দন, অর্জুন, আগর, ধূপ, রিটা, তুঁত, গিলা, ছিকরাসি ইত্যাদি।শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রকমের ফুল ও বনজ জাতের গাছ দিয়ে আরও একটি বাগান সাজিয়েছেন সেলিনা। এই বাগানটিতে নানা প্রজাতির গাছ দেখে অনেকে রীতিমতো অবাক হয়ে যান।সেলিনা বেগম জানান, তার বাবার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজহাটি গ্রামে। গাছ এবং বইয়ের প্রতি ভালোবাসার টান ছোটবেলা থেকেই। নিবিড় বন্ধুত্ব আমার গাছ ও বইয়ের সঙ্গে। দিনে সময় কাটে গাছের পরিচর্যা করে আর রাতে বইয়ের সঙ্গে।
সেলিনা জানান, এসব কর্মকাণ্ডে কোনো বাধা নয় বরং সহযোগিতা করেছেন স্বামী নূর মোহাম্মদ। তিনি এজিএম হিসেবে পূবালী ব্যাংক ময়মনসিংহ শাখায় কর্মরত।
নূর মোহাম্মদ বলেন, যত বড় চাকুরে হই না কেন আমি তো কৃষকের সন্তান। আমার বাপ-দাদারা জমিতে ফসল ফলিয়ে বিষমুক্ত খাবার আমাদের খাইয়েছেন। আমি কেন আমাদের সন্তানদের ভেজালের ছোবল থেকে বাঁচাতে পারব না। তিনি জানান, স্ত্রীর কথা মেনে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গ্রামের বাড়িতে একটি পুকুর খনন করেন। যেখান থেকে ফরমালিনমুক্ত দেশি মাছের জোগান পাওয়া যাচ্ছে।সেলিনা বেগম বলেন, পুকুর কাটার পর ওই পুকুরের পাড়গুলোতে বিভিন্ন জাতের সবজি ও ফলের চারা রোপণ করেন। সেসব গাছ থেকে বিষমুক্ত সবজি ও ফলের জোগান পাওয়া যাচ্ছে।পরিকল্পনা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গাছের লালন-পালন বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নেন। সেই সঙ্গে জেলার বন বিভাগ থেকেও পরামর্শ নেন তিনি।বাগান রক্ষার জন্য চারপাশে লোহার জাল দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। পানি সমস্যা সমাধানের জন্য সেচযন্ত্র কিনেছেন। স্বামীর গরুর খামার থেকে গোবর এনে বাগানে প্রয়োগ করেন। বাগানে তিনি কোনো রকম রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার করেন না।সেলিনা বেগম জানান, দূর-দূরান্তের নার্সারি থেকে লোকজন তার বাগানে এসে কলম পদ্ধতির মাধ্যমে দুষ্প্রাপ্য ঔষধি, ফলজ ও নানা জাতের মশলার চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এতে তিনি কাউকে বাধা দেন না। কারণ তাদের কাছ থেকেও তিনি অনেক কিছু শিখে নেন।