somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী নির্যাতন আর আমাদের অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা । ।

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতি হিসেবে আমরা দিনে দিনে অদ্ভুত থেকে অদ্ভুততর হয়ে যাচ্ছি । বিপ্লব প্রতিবাদ এইসব ডিকশনারি থেকে নাই হয়ে বিচিত্র এক সহমর্মী জাতি হিসেবে গড়ে উঠছি আমরা । টিএসসির ঘটনা ঘটার পর থেকে ফেসবুক সয়লাব সহমর্মিতায় । "পুরুষ হিসেবে আমি লজ্জিত" , "ক্ষমা করো বোন" , "পুরুষকে সভ্য ...." এই টাইপ ট্যাগ লাইনে সয়লাব।

পুরুষ হিসেবে লজ্জার কি আছে, আমি আসলে ঠিক বুঝতেছিনা, তেমনি ক্ষমা চাওয়ার তো কোন কারন ই নেই । নারী নির্যাতন নিপীড়ন একটা অপরাধ, যারা এই অপরাধ করেছে সোজা বাংলায় তাদের ধরে শাস্তি দিতে হবে , কথা শেষ । কিন্তু এই শাস্তি দেয়া নিয়ে কোন তোলপাড় , হোক প্রতিবাদ- কিছুই দেখতেছিনা, খালি বড় বড় গাল ভরা কথা মালা ছাড়া । বিচার চাইতে সমস্যা কি আমি ঠিক বুঝিনা- নাকি এইখানেও সবার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিলাস ধাক্কা খাওয়ার ভয় থাকে, তাই গাল ভরা বানীর চর্চা করে আত্মতৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে চলে যাচ্ছেন ।
নববর্ষের / যেকোন অনুষ্ঠানে এই নোংরামি আজকে নতুন নয় , দিনে দিনে এটা মাত্রা- সীমা ছাড়িয়েছে এই যা। "বখাটে ছেলের ভীড়ে ললনারা হেঁটে যায় "- আমার কৈশোরে শোনা গান । এখন অবস্হার পরিবর্তন হয়েছে, বখাটে ছেলেরা মেয়েদের উপর হামলা করেছে ।
পৃথিবী কখনোই বখাটে মুক্ত ছিলোনা এবং কখনো হবেওনা । সমাজ আর রাস্ট্রের জন্ম হওয়ার পিছনে এইসব বখাটে পনা নিয়ন্ত্রন ও একটা বড় কারন । আমাদের রাষ্ট্র এই বখাটেপনা নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ এই কথাটা দেখি কেউ সাহস করে বলছেনা । সরকারের কাছে কোন দাবি করছেনা কেউ আগামী ৩ দিনের মাঝে এইসব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হউক। সবাই আছে কে কত আবেগ দিয়ে ক্ষমা চাইতে পারে সে চেস্টায়। সেসব অপরাধীরা মনে হয় এইসব ক্ষমা চাওয়া টাওয়া দেখে নিজেকে শুধরে নিবে - বেকুবীয় চিন্তা ভাবনা । এই সব লজ্জা পাওয়া যতদিন চলবে , নারী নিপীড়নও ততদিন চলবে।
আমাদের সমাজে পারিবারিক মূল্যবোধ, লাজ লজ্জা, সন্মান দেয়া -নেয়া এইসব জিনিস বলতে গেলে উঠেই গেছে । একটা ঘুষখোর কিংবা দুই নাম্বার বাপের টাইম কই তার ছেলেরে ন্যায় অন্যায়, নীতি নৈতিকতা শেখানোর । ঐসব ফ্যামিলিতে যারা বড় হচ্ছে তাদের কাছে আপনি সভ্য আচরন আশা করেন, একবার ও ভাবছেন আপনি কত বড় বেকুব !!! সমাজকে অন্যায় মুক্ত না হউক , সমাজে অন্যায়ের মাত্রা কমিয়ে রাখার একমাত্র উপায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ । এইটা যতদিন না হবে ততদিন কোন কিছুতেই কিছু হবেনা।
যুদ্ধে বিজয়ী যেকোন সেনাবাহিনী দেখবেন পরাজিত দেশের নারীদের উপর হামলে পড়ে । একবারও কি ভেবে দেখেছেন এটার কারন কি ? এই সেনাবাহিনী কে কিন্তু কঠোর প্রশিক্ষনের এবং নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় । কঠোর সেনা আইনের ভয়েই সে নিজ দেশে অপরাধ করা থেকে বিরত থাকে । আমি মোটেও বলছিনা সেনারা সবাই এমন করে, কিন্তু যারা পরাজিত দেশে নারী নিপীড়ন করে তারা কেবল আইনের ভয়েই নিজ দেশে এমনটা করেনা । ২য় বিশ্ব যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত এক মুভীতে দেখা যায় গ্রেফতার হওয়া একা জার্মান নারী সৈনিককে যখন সব সৈন্যরা ধর্ষনের উদ্যেগ নেয় , এক ক্যাপ্টেন তাকে উদ্ধার করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে, সবসময় যে এমন ঘটনা ঘটবে তার নিশ্চয় কোন নিশ্চয়তা নেই । ক্ষমা চাওয়া লজ্জা পাওয়া স্বস্তা হঠকারী আচরন, পারলে সবাই মিলে এইসব দমনের জন্য সোচ্চার হওয়াটাই সমাজকে যেকোন নিপীড়ন থেকে রক্ষার একমাত্র উপায় ।
এরপরই দেখলাম পুরুষকে সভ্য হবার জন্য বিশাল উপদেশ নামা, ঘরে মা বোন টোন আছে টাইপ নানা উদাহরন । মা-বোন যুগে যুগে নয় সৃষ্টির শুরুর পর থেকে আছে, তারপরও এক শ্রেনীর বর্বর পুরুষ পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত পতিতাবৃত্তিকে টিকিয়ে রেখেছে নিজের লোলুপতার জন্য , কই তাদেরকে কি কখনো বলছেন তোমার মা বোন আছে,তুমি কেমনে আরেকটা মেয়েরে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করছ , তোমার মা বোনের কথা একবার ভাব? বলেন নাই । ।
আপনি হয়ত বলবেন সব পুরুষতো এইসবে জড়িত না, কিন্তু ঐসব পুরুষদের জন্য আপনিত ক্ষমাও চাননা, আমাদের আপারাও কিছু বলেননা । কিছু পুরুষ কখনোই সভ্য হবেনা, এইটা আপনাকে মেনে নিতে হবে, তারপর ঠিক করতে হবে কিভাবে তাদেরকে অন্যায় থেকে বিরত রাখা যায় । ।
এক জন একটি লেখা লিখেছেন "শাড়ি নাভীর নিচে না উপরে, তাতে আপনার কী?" ।
ভারতের গোয়ার বাঘাতুরা বীচে ঘুরার সময় দেখলাম, ৮০ ভাগ বিদেশী রমনী বিকিনি পড়া, ১০ ভাগ টপ লেস আর বাকি ১০ ভাগ ইভরিথিং লেস। আমাদের আশে পাশে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমরা দেখেছি, আমাদের আসলেই কিছু যায় আসেনি, আমার পাশে বসে বিকিনি পরা রমনী বিয়ার খাচ্ছে- আমার কি। অথচ ৯২ সালে আমাদের কক্সবাজারে এক ব্রিটিশ তরুনীকে ধর্ষন করা হয় আর তারপর থেকে এইদেশে বিদেশী পর্যটক আশার ব্যাপারে ব্রিটিশরা রেড এল্যার্ট দেয়। এখন কক্সবাজার ঘুরেও একটা বিদেশী পাবেননা বেশীর ভাগ সময় ।
এতটুকু পড়েই কি ভাবছেন আহা গোয়া পুরা স্বর্গ!!! দুনিয়াটা এত সহজ না, অসভ্য বর্বর গোয়াতেও ভরপুর । আমরা থাকা কালীনই খবর পেলাম সেখানে এক রাশিয়ান রমনীকে রাস্তায় একা পেয়ে দুই তরুন ধর্ষন করে পালিয়েছে । হ্যা , একটা দেশের, সমাজের সব পুরুষ বর্বর না, কিছু কিছু বর্বর সব খানেই আছে। ঘটনা হচ্ছে এরপরও গোয়ায় পর্যটক আশা একটুও কমেনি । কারন কি জানেন- সেদিনই গোয়ার মূখ্যমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিল, ৩ দিনের মাঝে অপরাধীদেরকে ধরে বিচার করা হবে। চলে আসায় আর আপডেট জানিনা, কিন্তু আমি শিউর এই ঘটনার বিচার হয়েছিল, হয়েছিল বলেই আমরা রাত ৩-৪টা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানোর পরও কোন সমস্যা হয়নি ।
একই রকম ঘটনায় আমাদের পর্যটন ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে, কারন আমরা সমস্যার সমাধান না করে অপ্রয়োজনীয় কাজ কর্ম বেশী করি ।
কি অদ্ভুত, এক আপু পোস্ট করেছেন- "আমি কি তোমার নুনু ধরে টান মারি, তুমি কেন আমার গায়ে হাত দাও " !!! তাকে বলতে ইচ্ছা করছিল- আপনি টানাটানি করা শুরু করেন, দেখবেন এক শ্রেনীর লোক আপনার চারপাশে জীপার খুলে হাঁটা শুরু করবে, সবাই ভয়ে দূরে সরে যাবেনা। অসভ্য কিছু লোক সমাজে আছে, তাদের বিচার করাটা জরূরি এই বোধ বাস্তবায়ন না হলে কোন কিছুতেই কোন সমাধান হবেনা ।
রাজনৈতিক কোন কর্মী নারী নির্যাতন করলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় , ভাবখানা এমন এতে বিশাল বিচার করা হয়ে গেল , পেপারগুলা ছাপে তমুককে বহিষ্কার করা হয়েছে । অথচ কখনো দেখলামনা তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে, এমনকি খুন করলেও শাস্তি ঐ বহিষ্কার । ঐ পোলার যে এতে কোন শাস্তিই হলোনা, উল্টা সে আরো ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এটা আমরা দেখেও দেখিনা ।
এতক্ষনে আমারে গালি দিতেছেন আর ভাবতেছেন, হ আইনের হাতে দিলে যেন সুবিচার পাওয়া যাবে, পুলিশ ঠিকঠিক ব্যবস্হা নিবে ?? না নিবেনা, আমিও আপনার মত এটাই বিশ্বাস করি । । কারন এই সমাজের সবখানে পচন লেগেছে, সে পচন থেকে কিভাবে মুক্ত করা যায় সে পথে না গেলে এইসব ঘটনা নিয়ে চিল্লা ফাল্লা করে সাময়িক একটা দফারফা হবে, বাস্তবিক কোন কিছুই হবেনা । চয়েজ আমার, আপনার- আমরা কি সমাজকে বদলে যেতে, সুবিচার আর আইনের শাসনের জন্য আমাদের নেতাদের বাধ্য করব, নাকি এইসব অন্যায়ে বাধা দিতে আসা দুএকজনকে বীর বানিয়ে নিজে ফেসবুকে ক্ষমা চাইব।

১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×