somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দয়া করে ঠেলবেন না

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



খুব সাধারণ একটা বিষয় আপনাদের সাথে আলাপ করতে চাই। আমার প্রস্তাবিত আজকের বিষয় জনসমাবেশ বা জনসমাগম। অনেকেই মনে করেন সকল জনসমাবেশই উত্তেজনাকর, দারুণ, চমৎকার, ঐতিহাসিক। কিন্তু সকল জনসমাবেশ কিংবা জনসমাগমই কি সুন্দর? ৭ই মার্চের জনসমুদ্র দেখলে নিশ্চয়ই অনেকের মনে এখনো শিহরণ জাগে, জেগে ওঠার তীব্র স্পৃহা সঞ্চারিত হয়। কিন্তু ১৯৭১ এ নিজের ভিটামাটি ছাড়া লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষের ঢল মোটেও সুন্দর নয়, ভীষণ বেদনা জাগানিয়া। গণজাগরণের প্রথম তিনদিনের জনসমাগমের যে তীব্রতা তা অনবদ্য এবং অসামান্য; তেমনটা ইতিহাসে দূর্লভ। প্রচুর মানুষজনে ভরা এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে, আপনি যেখানেই যান মানুষ পাবেন। এটার দু-রকমেরই ব্যাখ্যা আছে। আর তা নিশ্চয়ই আপনারা অনুমান করতে পারেন। সকল জনসমাগমের সাথে আপনি সম্পৃক্ত বোধ করবেন এমনটাও নয়, হেফাজতের বিপুল জনসমাগমের সাথে অনেকেই যেমনটা করেননি আবার অনেকে করেছেনও। তবে মোদ্দা কথা হল বিপুল জনসমাগম আমার সাধারণত খারাপ লাগেনা।

যদিও কয়েক বছর ধরে, বিশেষত ঢাকা-কেন্দ্রীক সকল উৎসব বা জনসমাগম উপলক্ষকে আমি আর সহজভাবে নিতে পারছি না। সেটা বছরের দুটো ঈদ, একটি প্রধান পূজা, জাতীয় উৎসব, ২১শে বই মেলা, আর্ন্তজাতিক যে কোন আয়োজন, পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি কিংবা যে কোন ছুটির দিন। উৎসব-বেদনা-শোক-উচ্ছলতা-বিজয়-পরাজয় যেটাতেই "আমরা" যুক্ত হই না কেন সেগুলোর সবখানে একটা অসহনীয় চাপ, দৌড়, অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ভর করে আছে। বিপুল জনসংখ্যা যেমন একটা প্রধাণ কারণ তেমনি একটি সুগঠিত গোছানো "চাপ"ও নিয়মিত তৈরি করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটা কেবল কর্পোরেট নয়, এটা কেবল ঢাকা শহরেই হয় এমনটা নয়, এটা কেবল ধার্মিক নয়, এটা কেবল আর্থ-সামাজিক নয়, এটা কেবল জাতীয়তাবাদী নয় বরং এর সবগুলোরই টুকরো টুকরো মিশেল এবং কখনো আরো নতুন কিছু। যদিও এর ফলাফলে মিল আছে খুব, সবখানেই কে যেন তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে কেউ শোকের জন্য, কেউ আনন্দের জন্য, কেউ ক্লান্তির জন্য, কেউ একজন কোথাও পিছু ছাড়ছেনা, সে হয় কিছু বিক্রী করবে, নাহয় বোঝাবে, নাহয় মারবে ইত্যাদি। পুরো বিষয়টা থেকে মানবিক প্রস্তুতি এবং সহজাত প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি গায়েব হয়ে গেছে যেন। এর কোন মূল্য নেই বললেই চলে। বরং তাড়িয়ে বেড়ানোর উপযোগী মানুষ কিংবা জনসমুদ্র তৈরি করা হচ্ছে। এই মানুষদের সর্বোচ্চ অনুভূতি হল দৌড়ানো, কেবলই অস্থিরভাবে ছুটোছুটি করা, এবং সবখানেই কেবল হারানোর বা হারিয়ে যাবার ভয়। কোনটাই, মানে কোনকিছুই তৃপ্তিকর নয়, কোনকিছুতেই যেন শান্তি নেই। কিন্তু কোথাও কিন্তু যুদ্ধ চলছে না, নাকি চলছে আমরা বুজছি না।

আগামীকাল পহেলা বৈশাখ, আমার খুব আনন্দের একটা উৎসব। এবং আমার সাম্প্রতিক উপলব্ধির কারণে তাই সবার আগে মনে আসছে ভীড়, ঠেলাঠেলি এবং তারচেয়েও বেশি অদৃশ্য কারো যেন ঠেলে দেয়া। কিন্তু এমন হলে তো কোন উৎসব হয় না, আমাকে আমার মত বুঝতে দিন, আমাকে আমার মত যুক্ত হবার স্থানটুকু দিন; দয়া করে ঠেলবেন না। ঈদ করবো না সেখানেও ঠেলা, কোন স্থান নাই কোথাও, কি বাস্তবে কি চেতনায়, কি বসবো কি থামবো, কি করবো সবখানেই ঠেলাঠেলি; যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে সব। এই ঠেলাঠেলিতে আমার আনন্দও আসেনা, আমার বিদ্রোহও আসেনা। শ্রেফ পালিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। এইসব জনসমাগমে বুকে পিঠে তাই বয়ে নিতে ইচ্ছে করে জ্বলজ্বলে প্ল্যাকার্ড "আমি মানুষ, দয়া করে ঠেলবেন না"

আপনাদের সবাইকে নবর্ষের শুভেচ্ছা।
৩০টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×